সদস্য_১ লিখেছেন:Nova S14E01 Dawn of Humanity
কিছুটা কনফিউজ হয়ে গেলাম। হোমো নালেডি ফসিল আবিস্কারের পর, মাইটোকণ্ড্রিয়াল ঈভ স্টাইল, সিঙ্গেল লাইনেজ হোমো ইভুলোশন থিউরী কি বাদ দেয়া হয়েছে?
সিঙল এভ্যুলুশনারী লিনিয়েজ ধারণা তো সেই স্টিফেন জে গুল্ডের আমল থেকেই বাতিল।
যেকোনো বর্তমান প্রজাতীর বিবর্তনের ইতিহাস হলো তার পূর্ববর্তী অজস্র এ্যভুলুশনারী ডেড-এণ্ড প্রজাতীর গোরস্থান... আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। যেহেতু আমরা টিকে গেছি, তাই আনব্রোকেন লাইন ওব ডিসেণ্ডেণ্টস বাক্যটি ব্যবহার করা হয়। তবে তার মানে এই না যে বিবর্তনের এক্সপেরিমেণ্টাল ডেড-এণ্ডস থাকতে পারবে না, বরং বিবর্তনের গবেষণাগারে একটি সফল লিনিয়েজের বিপরীতে হাজার হাজার ব্যর্থ পরীক্ষানিরীক্ষা থাকাই স্বাভাবিক; এবং বর্তমানের প্যালিয়োএ্যান্থ্রোপলজীস্টরা তারই প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছেন।
ধারণাটি খুবই সরল - কল্পনা করুন, আপনার পরিবারে একমাত্র আপনিই পরবর্তী বংশধর, আপনার কোনো কাযিন টাযিন নেই। কিন্তু এই বটলনেকটা শুধুমাত্র আপনার প্রজন্মের ক্ষেত্রে; আপনার কাকা-মামা-জ্যাঠা-দাদু ইত্যাদি সবাই আছেন (যদিও তাঁদের কারো সন্তান নেই), এবং তাঁদের আগের পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোতেও পরিবারের অজস্র সদস্য ছিলো - কোনো না কোনো কারণে তাঁরা বংশবৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। হয়তো পাঁচশ বছর আগে আপনার পরিবারে সদস্যসংখ্যা ছিলো শতাধিক, কিন্তু তা কমতে কমতে বর্তমানে ১-এ নেমে এসেছে। অতএব, আপনার সাপেক্ষে mtdna সিঙল লিনিয়েজ ধারণাটা অবশ্যই সত্যি - পাঁচশ বছর আগের একজন গ্রেট-গ্রেট-* দাদীমার আনব্রোকেন লাইন অব ডিসেণ্ডেন্ট আপনি সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ওই দাদীমা (কিংবা তাঁর দাদীমা-র দাদীমা) পরিবারের আরো ৯৯টি শাখা-প্রশাখার উৎস ছিলেন - যেগুলো ক্রমশঃ বংশগতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের ক্রমাগতঃ কাঁটছাঁটের ফলশ্রুতিতে আপনি হলেন এখন ঝুড়ির একটিমাত্র আণ্ডা...
এবার, এই কাল্পনিক ধারণাটি হোমিনিড/হোমিনিন পরিবারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করুন, ভাবুন অন্ততঃ ৫ থেকে ৭টা ম্যাস এক্সটিঙ্কশনের কথা - আশা করি কনফিউশন কমে যাবে 
রিচার্ড ডকিন্সের বিতর্কিত "selfish gene" হাইপোথিসিস অনুযায়ী - আমাদের জীন তথা ডিএনএ-আরএনএ অর্থাৎ গুটিকয়েক রসায়নিক মলিকিউলস হলো আল্টিমেট ড্রাইভার। এই জীন "অমরত্ব" প্রাপ্ত হতে চায়। স্ট্যাটাস কো বজায় রাখার দু'টো উপায় আছেঃ এক হলো একটা জীন অনির্দিষ্টকাল ধরে টিকে থাকবে। তবে লজিকালী তা সম্ভব নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা যেকোনো সময় ধ্বংস হতে পারে। আর দুর্ঘটনা যদি নাও ঘটে, থারমোডিনামিক্সের সূত্রানুযায়ীও অনন্তকাল অবিকৃতভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়, এণ্ট্রপী ঘটবেই এবং জীনটির ফিজিকাল ডিগ্রেডেশন হবে। অতএব, ওটা বাতিল।
২য় স্ট্র্যাটেজীটা হলো - জীনটা নিজের অগুণতি ক্লোন তৈরী করবে, এবং সেই ক্লোনগুলো আবার নিজেদের ক্লোন তৈরী করবে। সরাসরি না পারলেও অন্ততঃ এভাবে মাদার জীন টিকে থাকবে অনির্দিষ্টকাল অবধি। এই দ্বিতীয় রিলে-রেস স্ট্র্যাটেজীর সাথে যোগ করে দিন জেনেটিক মিউটেশন - প্রতিটা জীন নিজেদের হুবহু ক্লোন তৈরী করার চেষ্টা করে, কিন্তু কসমিক রেডিয়েশন, কেমিকাল এক্সপোযার ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কপিইং এরর হয়ই... হুবহু কপি-পেস্ট করা সম্ভব হয় না। অরিজিনাল জেনেটিক সিকোয়েন্সের সাথে ওর কপি করা সিকোয়েন্সটার যৎকিঞ্চিৎ তফাৎ থাকেই - ওকে আমরা বলি মিউটেশন। আল্টিমেট ফলাফলঃ মিউটেশনের হাত ধরে এ্যভুল্যুশন নামক এক গ্যাম্বলারের আগমন... কপিপেস্টিংয়ে ভুলভ্রান্তি তথা মিউটেশনের কারণে অজস্র নতুন প্রজাতীর এ্যালীল তথা মিউট্যাণ্ট জীনের আবির্ভাব। আমরা হলাম সোজা কথায়ঃ ভন-নয়ম্যান মেশিনস - ইমমরটাল জীনদের টিকে থাকার রিলে দৌড় স্ট্র্যাটেজীর নিছক vessels মাত্র...
তবে পৃথিবীর সমস্ত জীব - মানুষ, মশা, বটগাছ, তিমিমাছ, পালং শাক, পিঁপড়ে, এ্যামীবা, ব্যাকটিরিয়া, আর্কেয়া (এবং সম্ভবতঃ ভাইরাস-রাও) - যত পেছিয়ে যেতে থাকবেন, ততই ওদের পূর্বসূরীরা একত্রে মার্জ হতে থাকবে... মানুষ... এইপস... গরিলা... ওল্ড ওয়ার্ল্ড মাংকী.......... পশ্চাদগামী এই ক্রমাগত কনভার্জেন্সের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে সাড়ে তিন কি পৌনে চার বিলিয়ন বছর আগে এমন একটি সরল এককোষী অর্গানিযম (নাকি কেমিকেল পলিমার?) -এ উপনীত হবেন যাকে আমরা বলি LUCA (last universal common ancestor)। পৃথিবীতে যত জীব - প্রাণী, উদ্ভিদ ও এককোষী - বর্তমানে বিরাজ করছে, তারা প্রত্যেকেই ওই একটি উৎস থেকেই আগত। বলা যায়, আমরা প্রতিটি জীবই ওই লুকা-র আনব্রোকেন লিনিয়েজ।
বাট.... লুকা ব্রাসী ওয়ায নট দ্যা অনলী গেইম ইন টাউন...
গত মাসের নিউ সাইন্টিস্ট ম্যাগাযিনের কাভার স্টোরী ছিলো এটাঃ

উষ্ণ পুকুরের কাদামাটি কিংবা গভীর সাগরতলের ভেণ্টে ৪ বিলিয়ন বছর আগে মাত্র একবার ঘটে যাওয়া একটি কেমিকাল মিরাকল না, "প্রাণ"-এর সৃষ্টি সম্ভবতঃ অজস্রবার হয়েছিলো। আদি পৃথিবীতে লুকা-র অগুণতি ভাই-বেরাদাররা হয়তো বা টিকে ছিলো লক্ষ লক্ষ বছর জুড়ে। "আদিপ্রাণ" বলতে "হাত-পা-ন্যাজ-ওয়ালা প্রাণী" নয়, বরং বোঝানো হচ্ছে কেমিকেল মলিকিউলস-কে; হয়তো তা ছিলো dna-র মতো প্রোটিন পলিমার, তবে rna হবারই সম্ভাবনা বেশি। পৃথিবীর "সর্বপ্রথম" ম্যাস এক্সটিঙ্কশনে হয়তো বেশিরভাগ "কেমিকেল প্রাণ" বিলীন হয়ে গিয়েছিলো - একটি বাদে... বাকীটা ইতিহাস।
সিঙল ইভ্যোল্যুশনারী লিনিয়েজ সঠিক, আবার প্রাণের ইতিহাসের প্রাসাদ-টার ব্যাকইয়ার্ডে অজস্র ফেইলড এক্সপেরিমেণ্টস-দের গোরস্থানে পরিপূর্ণ এটাও সত্য...
সদস্য আর জীপ্সী ভাইদের ধন্যবাদ দু'টো চমৎকার ডকু-র সন্ধান দেবার জন্য।
বিঃদ্রঃ coursera-য় প্রফেসর জন হকস-এর (ডকু-টার শেষার্ধে তাঁকে নিয়ে আসে) একটা mooc এ্যাটেণ্ড করেছিলাম বছর খানেক বা আরো আগে। খুব সম্ভবতঃ রাইজিং স্টার এক্সপিডিশন চলার সময় ওই কোর্সটার ডেভেলপমেণ্ট চলছিলো, মনে আছে প্রতি সপ্তাহের ভিডিওতে রাইজিং স্টার থেকে নতুন নতুন ফাইণ্ডিংস/আপডেটস দেখাতো। মাস দু'য়েক আগে পাজী coursera সমস্ত পুরণো ভিডিওগুলো ডিলিট করে দিয়েছে...
যাকগে, edx, coursera, futurelearn ইত্যাদিতে evolution, paleoanthropology নিয়ে বেশ কিছু কোর্স পাবেন। একটু নীরস, এ্যাকাডেমিক হলেও এসব থেকে প্রচুর জ্ঞান পাওয়া যায়।
Calm... like a bomb.