টপিকঃ “পবিত্র কাবা ঘর ও মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) এঁর রওজা মুবারক জিয়ার
“পবিত্র কাবা ঘর ও মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) এঁর রওজা মুবারক জিয়ারত।”
২য় অংশ ১
উহুদের শহীদগনের কবর যিয়ারত ;- প্রথমে মসজিদে হামযায় দুরাকাত নামাজ আদায় করা হল। তারপর হযরত হামযা (রা) ও ৭০জন শহীদের মাযার যিয়ারত করা হল। জাবালে উহুদে আরোহণ করা যায় নাই। মসজিদে কোবা :- হিজরতের পর রসুলুল্লাহ (সা:) নিজ হাত মোবারকে এ মসজিদটি নির্মান করেছেন। আর এটিই মুসলমানদের প্রথম মসজিদ। মহানবী (সা:) ইরশাদ করেছেন মসজিদে কোবায় দুরাকাত নামাজ আদায় করলে উমরার সমতুল্য সওয়াব। এই মসজিদে আমরা দুরাকাত নামাজ আদায় করলাম। মসজিদে কেবলাতাইন :- এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় রসুলুল্লাহ (স:) এঁর উপর কেবলা পরিবর্তনের আদেশ হয়েছিল। এই মসজিদ যিয়ারত করা মুস্তাহাব। আমরা এখানেও দুরাকাত নামাজ আদায় করলাম। মসজিদে ফাত্হ :- খন্দক যুদ্ধের সময় এখানে রসুল (স:) একাধারে তিন-রাত ছিলেন। যার ফলে মুসলমানগন এ যুদ্ধে জয়লাভ করে। এখানেও আমরা দুরাকাত নামাজ আদায় করলাম। সুন্দর একটা জায়গা দেখলাম, তার নাম আমার মনে নেই। সে জায়গায় অনেকগুলি পানির ফুয়ারা রয়েছে ও রাস্তার অপর পার্শ্বে এক জায়গায় অসংখ্য সবুজ খেজুরের গাছ দেখে দুচোখ জুরে গেলো। এ ছাড়াও আমরা অনেক ঐতিহাসিক স্থান যিয়ারত করলাম।
হজ্ব আরম্ভ ঃ-
পবিত্র নগর মদিনায় ৯ দিন থাকার পর ১০ম দিনে সৌদি মোয়াল্লিমের বাস এসে আমাদেক পবিত্র নগর মক্কায় নিয়ে আসলো। পথের মধ্যে যুলহোলায়ফা বা বীরে আলী জায়গায় আমরা হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে নিলাম। রাতেই বাস যোগে আমাদেক মিনায় নির্দ্দিষ্ট তাঁবুতে পৌছে দিল। মিনায় তাঁবুতে আমাদের অবস্থান :- প্রথমে ঢুকতেই পাকিস্থানী হাজীদের জন্য রান্নার তাঁবু ও অফিস। এর পর বাম দিকে কয়েকটি তাঁবু আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশের হাজীদের জন্য। ডান দিকে কয়েকটি তাঁবু পাকিস্থানী হাজীদের জন্য, মাঝে প্রায় ৩ হাত করিডোর অর্থাৎ গলি। প্রথম দিনেই পাকিস্থানী হাজীগন জোর পূর্বক বাংলাদেশের হাজীদের এক তাঁবু দখল করে, এই নিয়ে আমাদের হাজীদের ও পাকিস্থানী হাজীদের মধ্যে ঝগড়া হলো। কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তা মিমাংসা হয়, বাংলাদেশের হাজীরা তাঁদের তাঁবু ফেরৎ পায়। এই ঘটনায় ১৯৭১ সালের আমাদের প্রিয় জন্মভ’মি বাংলাদেশ জোর করে পাকিস্থানীরা দখল করার ঘটনা আবারও মনে করে দেয়। আমরা ৬/৭দিনের উপযোগী সংক্ষিপ্ত ব্যাগেজ ও শুকনো খাবার সংগে নিয়েছি। এখানে তাঁবুতে জামাতে নামাজ আদায় করলাম ও বেশী বেশী করে তালবিয়া, দোয়া দরুদ পড়তে লাগলাম। মিনায় তাঁবুতে ফজরের নামাজ পর উচ্চ স্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা হলো। “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দু ” ৯ই যিলহজ্ব ফজর নামাজ থেকে ১৩ই যিলহজ্ব আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত প্রতি ফরয নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা হল। এসময় তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব।
২
“দুপুর থেকে বেলা ডুবা পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান (ফরজ) ঃ-”
আমাদেক হজের জন্য প্রথম দূতগামী মেট্রো ট্রেনে আরাফায় নেওয়া হলো। মেট্রো ট্রেনটি মিনা থেকে মুযদালেফা হয়ে আরাফা পর্যন্ত চলাচল করে। শক্তিশালী দু সারি থাম্বার উপড় দিয়ে একই সময় দুইটি ট্রেন খুবই দূতবেগে সবকিছু স্বয়ংক্রিয় ভাবে যাওয়া আসা করে। ট্রেনে উঠতে হলে বাম কব্জিতে ফিতার মত টিকেট বাঁধতে হয়। উক্ত মেট্রো ট্রেনে উঠতে হলে কয়েক ঘন্টা লাইনে দাঁড়াইয়া থাকতে হয়। ট্রেনে উঠতে যেয়ে আমরা একটা বড় অসুবিধায় পড়লাম, আমাদের দলের বেশী ভাগ হজযাত্রী ট্রেনে উঠার পর ট্রেনের অটো দরজা বন্দ হয়ে আরাফাতে চলে গেল। আমাদেক পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হলো। আমাদেক পরের মেট্রো ট্রেনে কয়েক মিনিটে আরাফাতে পৌছে দিলো। বিশাল আরাফতের ময়দানে সৌদির আরবের তপ্ত রৌদ্দের মধ্যে তিন ঘন্টা পর্যন্ত, আমরা কয়েক জন পথ হারা হাজী, লক্ষ লক্ষ হাজীদের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের হাজী ক্যাম্প খোঁজতে খোঁজতে হয়রান ও পেরেশান। এই হয়রান ও পেরেশানের মধ্যেই এই আরাফাত ময়দানে অনেক দেশের ভিআইপিদের তাঁবুর জাক জমক ও বিলসিতা চোখে পড়লো, কোন কোন তাঁবুতে সবুজ ঘাসের মত মোটা গালিচা দেখা গেলো, বিচিত্র আকার ও বিভিন্ন গায়ের রং এর নারী ও পুরুষ হাজীদের দেখার অভিজ্ঞতা হলো। আমাদের কারো নিকট বাংলাদেশের গাইডের মোবাইল নং নেই। আরাফাত বিশাল ময়দানের মধ্যে হঠাৎ বাংলাদেশের পতাকা দেখে, আমরা সকলেই খুশি। সেখানে যেয়ে দেখি, অনেক জায়গা নিয়ে বাংলাদেশের ভিআইপিদের কয়েকটা তাঁবু, তাঁদের তাঁবুর ভিতর বিলাসিতা দেখা হল না। সেখানে কয়েকজন বাংগালী ছেলে পাহারায় আছে, তারা আমাদের বাংলাদেশের সরকারী ভাবে আসা, হাজীদের ক্যাম্পের ঠিকানা বলতে পারলো না এবং আমদেক ভিতরে গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে দিবে না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, তোমরাও বাংলাদেশের নাগরিক, তোমরা সৌদিতে এসে এখানকার পাথরের মত তোমাদের হৃদয় কি পাষান হয়েছে? এতো গুলি কথা বলার পর তাদের মন গলাাতে পারলাম, তারা আমাদেক গাছ তলাায় বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে, দিতে রাজী হলো। আমরা ওখানে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবারও আমাদের তাবুর খোঁজে পথে নামলাম। পথে অনেক রকমের খাবার পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলি বহন করা খুবই কঠিন। অনেক অনেক পথ খোঁজার পর আমরা একদম হতাশ হয়ে, মেট্রো ট্রেনের নিচতলায় ছায়ায় রাস্তা দিয়ে কিছু দূর যেতেই হঠাৎ ফেরেস্তার মত এক বাংলাদেশের গাইডের সংগে দেখা। তিনি বললেন, আপনারা কি বাংলাদেশের হাজী? আমরা বললাম, হ্যাঁ, আমরা আমাদের সরকারী তাঁবু খোঁজতে খোঁজতে হয়রান। তিনি বললেন, আমারও কয়েকজন হাজী পথ ভুলে মেট্রোট্রেনের ষ্টেশনে আমার জন্য অপেক্ষায় বসে আছেন। আপনারা এখানে অপেক্ষা করেন, আমি উনাদেক নিয়ে আসি। কিছুক্ষনের মধ্যে উনাদেক নিয়ে আসলেন। আমি অবাক হলাম, তাঁরা আমার পার্শ্বের জেলার হাজী ও আমার খুবই পরিচিত বন্ধু। অবশেষে উক্ত গাইডের সহযোগিতায় আমরা আমাদের ক্যাম্পে আসলাম। মেট্রো ট্রেনের নিচের রাস্তার দুধারের ছায়ায় বা গাছের ছায়ায় বা বাসের ছায়ায় হাজার হাজার নারী ও পুরুষ হাজীগন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পলিথিন বা মোটা
৩
কাপড় টাঙ্গে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করতে দেখেছি। আরাফাত ময়দানে অনেক সবুজ নিমের গাছ দেখেছি। সৌদিতে হজ উপলক্ষে যেখানেই গেয়েছি, আমার মন ও দুচোখ শুধু বিভিন্ন প্রকার সবুজ গাছের জন্য বুভুক্ষ থেকেছে, আর কোন কোন বিলাস পূর্ন বিল্ডিং এর ধারে কি কি ফুলের গাছ আছে, তা দেখতে আমার মন চাইতো এবং কোথাও কোথাও তা দেখতে পেতাম। অনেক রাস্তার দুধারে ও মাঝে খেজুরের গাছসহ অন্যান্য বিভিন্ন সবুজ গাছ আমার চোখ জুড়ায়, মনে প্রশান্তি আানে। শত শত মাইল হাই রোডে এসি বাসে চড়ে, সৌদি আরবের মরুভ’মির মধ্য দিয়ে যেতে যেতে দেখতে পেতাম, দুধারে দিগন্ত জুরে শুধু বিবর্ন পাথরের পাহাড় আর কাঁটার গাছ, তা দেখতে দেখতে আমার মন আর চোখ ক্লান্ত হতো। আমার মন চলে যেতো পনের শত বছরের আগে --- মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ও মহান আল্লাহর হুকুমে, সাহাবীরা ও আমাদের প্রিয় শেষ নবী উঠের পিঠে চড়ে, অনেক অনেক কষ্ট সহ্য করে, শত শত মাইল আরবের তপ্ত মরুভ’মি পাড়ি দিয়ে, পবিত্র নগরী মদিনার সহৃদয়বান নাগরিদের নিকট যাওয়ার জন্য, হিজরত করে ছিলেন, বিশ্ব জুড়ে ইসলাম প্রচারের জন্য।
আমাদের অর্থাৎ মানব জাতীর আদি পিতা হজরত আদম (আ:) ও মা বিবি হাওয়া বেহেস্তের মধ্যে, মহান আল্লাহর আদেশ অমান্য করে, শয়তানের প্ররোচনায়, নিশিদ্ধ ফল গন্ধম খাওয়ার জন্য, আল্লাহ্ তাঁদেক এই পৃিথবীতে পাঠান। তাঁরা অনেক অনেক বছর ধরে কাঁদা কাঁদি করে, আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চান, মহান দয়ালু আল্লাহ্ তাঁদেক ক্ষমা করেন এবং এই আরাফায় বহু বছর পর তাঁদের পরস্পর সাক্ষাত হয়। কিয়ামত পর্যন্ত যত হাজী হজ করতে আসবেন, তাঁদেক এই আরাফায় ৯ই জিলহজ্ব তারিখে দুপুর হতে সূর্য ডুবা পর্যন্ত অবস্থান (ফরজ) করে, মহান দয়ালু আল্লাহর নিকট পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ক্ষমা চাহিলে, মহান দয়ালু আল্লাহ্ তাঁদেক ক্ষমা করবেন। প্রবাদ আছে, হজে আরাফাত ময়দানে হউক বা অন্য জায়গায় হউক প্রায় হাজীগন পথ হারায়।
আরাফায় আমাদের তাঁবুর অবস্থান:- ছোট গলির অপর পাশ্বে পাকিস্থানী হাজীদের ক্যাম্প। আমাদের বাংগালী মুরুবি হাজীরা এসে আরাফাত ময়দানে অবস্থান ও হজের অন্যান্য ফজিলত সমন্ধে প্রানস্পর্শি কথা বললেন। এখানে ও হজের অন্যান্য স্থানে হাজীগনের দোয়া মহান আল্লাহ্ কবুল করেন, ইহা প্রত্যেক হাজীগনকে বিশ্বাস করতে হবে, নইলে যে হাজী অবিশ্বাস করবে, সে গুনাগার হবে। এখানে প্রত্যেক হাজীর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি ঝরতেছে, আমারও হৃদয় ফেটে চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়তেছে। আর গোনা মাফের জন্য মহান আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা চাচ্ছি। এখানে কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও চোখ দিয়ে পানি ঝরবেই। এখানে জহুরের ও আছরের নামাজ তাঁবুতে জামাতে পড়া হলো। আমরা সব সময় দোয়া দরুদ ও তোওবা পড়তে থাকলাম। জহুরের নামাজ বাদ সৌদি মোয়াল্লেম আল্লাহর মেহমানদেক অর্থাৎ হাজীদেক এক বেলা খাবার দিলেন। চাকরেরা জৌলশ পূর্ন পোষাক পড়ে, বড় বড় অনেক দামী ডিশে ও দামী রাজকীয় খাবার নিয়ে আমাদের সকল তাঁবুতে দিয়ে গেল, এবং বলে গেল, এক এক ডিশে ১০ আদমী খাবার খেতে। প্রত্যেক হাজীদের পেট ক্ষুদার জ্বালায় জ্বলছে, মনে হলো ৩/৪ জন হাজী
৪
ডিশের সব খাবার শেষ করবে। কোন কোন ডিশে পোলাউর সংগে দুম্বার আস্ত মাথা দাঁতসহ দেওয়া হয়েছে (আল্লাহর মেহমানেরা কেমন করে, খালী হাতে ঐ দাঁতসহ মাথা খাবেন?) এবং প্রত্যেক ডিশে পোলাউর সংগে প্রায় আস্ত ২/৩টি রান দেওয়া হয়েছে, সেগুলি সুসিদ্ধ করা হয়েছে। পোলাউতে ও মাংসে এতো বেশী তেল ব্যবহার করা হয়েছে ,তা ডিশের একদিকে অনেক জমা হয়েছে। আমারা খুবই ক্ষুর্ধান্ত অবস্থায়, যখন এক গ্রাস খাবার মুখে দেওয়া হলো, তখন সংগে সংগে খাবারের রুচি নষ্ট হলো। কারন খাদ্যে কোন প্রকার লবন ও ঝাল দেওয়া হয় নাই। আমরা বাংগালীরা খাদ্যে (তরকারীতে) লবন ও ঝাল খাই, কেহ কেহ কম ঝাল ও লবন খাই। রাজকীয় ভাবে লক্ষ লক্ষ রিয়াল খরচ করে, জৌলুশ বা জাক জমক করে আল্লাহর মেহমানদেক দামী ডিশে করে, দামী খাবার পেিবশন করা হলো, সে গুলি আল্লাহ্র মেহমানেরা একটুকুও খেতে পারলো না। আমাদের তাঁবুর ছোট গলির অপর পার্শ্বেই পাকিস্থানী হাজীগনও সৌদির মোয়াল্লেমের দেওয়া রাজকীয় খাবার খেতে পারেন নাই, তাঁরাও দামী খাবারগুলি গলির ধারে রেখে দিয়েছেন, সে খাবার গুলি নষ্ট হলো। সন্মানিত আল্লাহ্র মেহমানদের সংগে সৌদি মোয়াল্লেম পরিহাস করলো না কি? এতো লক্ষ লক্ষ রিয়ালের দামী খাবার নষ্ট হলো বা অপচয় হলো, ইহা কি ইসলাম সমর্থন দেয়? অপচয়কারীকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না, অপচয়কারী শয়তানের ভাই। যদি সৌদি মোয়াল্লেম এর ১০% রিয়াল খরচ করে, বাংগালী শ্রমিকের দ্বারা অল্প তেল,ঝাল,লবন ও অল্প মাংস দিয়ে খিচুরী রান্না করে, আল্লাহ্র মেহমানদেক তৃপ্তির সহিত, পেট ভরে খাওয়াত, তবে আল্লাহ্র মেহমানেরা খুশি হয়ে সৌদি মোয়াল্লেমের জন্য সর্ব্ব শক্তিমান আল্লাহ্র নিকট দোয়া করতো। সৌদি মোয়াল্লেম জৌলুশ বা জাক জমকের সংগে লক্ষ লক্ষ রিয়াল খরচ করে কি পেলেন?
“ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান সুন্নতে মুআক্কাদা এবং পূর্ব্ব আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত অবস্থান ওয়াজিব ঃ-”
আরাফাত ময়দানে তাবুতে সূর্য ডুবার পর আমরা হজযাত্রীগন অনেক অনেক সময় নষ্ট ও কষ্ট করে দূতগামী মেট্রো রেলে উঠে, অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে মুযদালিফায় পৌছিলাম। সেখানে এক পাহাড়ের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত বিছানা পেতে রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা করলাম। এশার সময় হলে আমরা কয়েক জন একত্র হয়ে এক আযান ও একামতে জামাতে ১ম মাগরিবের ফরজ নামাজ ও পরে এশার ফরজ নামাজ পড়লাম, ইহার সংগে মাগরিবের সুন্নত, এশার সুন্নত ও বেতের নামাজ পড়া হলো। এর পর কিছু খাওয়া হলো এবং মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি ছোট ছোট পাথর বা কঙ্কর সংগ্রহ করলাম। দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ঘুমালাম। এতো আরামের ঘুম আমার জীবনে হয় নাই। এখানে আল্লাহ্র মেহমানদের জন্য সৌদি সরকার পর্য্যাপ্ত টয়লেটের ও পানির ব্যবস্থা করেন নাই। তাই আল্লাহর মেহমানদেক চরম অসুবিধায় পরতে হয়েছে, সৌদি সরকারের এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। “মিনার দিকে যাত্রা ঃ-” ১০ই যিলহজ মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে, আমরা মেট্রো রেল ষ্টেশনে লাইনে দাঁড়ালাম মিনায় যাওয়ার জন্য। অনেক অনেক ক্ষন অপেক্ষা করে মেট্রো ট্রেনে উঠলাম।
৫
প্রত্যেকবার মেট্রো ট্রেনে খুবই ভীড়ের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে উঠতে হয়, এবারও তাই হলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা মিনায় পৌছিলাম, সেখান থেকে আমদের নির্দ্দিষ্ট তাবুতে আসলাম। তাঁবুতে বিশ্রাম নিয়ে অযু করে, কিছু খাওয়া করে, বড় শয়তানকে পাথর মারার/রমী জন্য (ওয়াজিব) নির্দ্দিষ্ট জায়গায় গেলাম। বড় শয়তানকে ৭টি ছোট পাথর বা কঙ্কর মেরে (রমী) নিজের তাঁবুতে আসলাম। আমি মক্কায় সরকারী ভাবে কুরবানীর জন্য নির্দ্দিষ্ট রিয়াল জমা দিয়েছি, রশিদে লিখে দেয়েছে, সকাল ১০ ঘটিকায় আপনার কুরবানী করা হবে, সে মোতাবেক আমি মিনায় তাঁবুতে এক কর্মী দ্বারা মাথা মুন্ডুন (ওয়াযিব) বা মাথার চুল ফেলে দিয়ে হালাল হলাম। গোসল করে সেলইযুক্ত কাপড় পরিধান করলাম, এবং কিছু খাবার খেলাম। আমার সঙ্গীরা বড় শয়তানকে কঙ্কর মেরে, কোরবানী দিতে মক্কায় গেলেন।
ফরজ তওয়াব ও সাঈ (ওয়াজিব) করা ঃ- আমি ফরজ তওয়াব ও সাঈ (ওয়াজিব) করার জন্য আমাদের তাঁবুর অন্য সঙ্গীদের সংগে সুরুঙ্গ পথে হেঁটে মক্কায় রওনা দিলাম। মক্কায় বিল্ডিংএ যেয়ে আমাদের রুম খোলা পেলাম। পাশের রুমের হাজীগন আমাকে খিচুড়ী খাবার জন্য দাওয়াৎ দিলেন, আমি রাজী হয়ে তাঁদের সংগে পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে তাঁদের দেওয়া খিচুড়ী খেলাম, খিচুড়ীর স্বাদ অপূর্ব হয়েছে। আমি তাঁদের জন্য মহান আল্লাহ্র নিকট দোয়া করলাম। হজে যাওয়ার আগেও তাঁরা আমাকে তৃপ্তি সহকারে তাঁদের ভাগের অপূর্ব স্বাদের খিচুড়ী খাওয়াইয়া ছিলেন। আমি তাঁদেক জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এতো হাজীগন থাকতে শুধু আমকে কেন আপনাদের ভাগের খিচুড়ী খেতে দেন? তাঁদের উত্তর শুনে আমি অবাক, আমার দুচোখ পানিতে ভরে গেল। তিনারা বললেন, আমাদের দয়ার নবীর নামে আপনার নাম, আপনাকে দেখে তাঁর কথা মনে বেশী করে স্বরণ হয়, তাই আপনাকে আদর যতœ করতে আমাদের মন প্রান চায়। আজও তাঁদের কথা মনে হলে, দু চোখ ভরে পানি আসে, আর রহমানুর রহিম আল্লাহ্র নিকট তাঁদের সর্ব্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে দোয়া করি। তাঁদের ঠিকানা বা মোবাইল নং আমি লিখে লই নাই, শুধু এইটুকু মনে আছে, তাঁদের বাড়ী যমুনা ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে রাস্তার উত্তর দিকে এক গ্রামে। আমি তাঁদের সংগে ফরজ তওয়াব ও সাঈ (ওয়াজিব) যথারীতি ভাবে শেষ করে, তাঁদের সংগে অনেক রাত্রিতে সুরুঙ্গ পথে হেঁটে মিনায় নিজ তাঁবুতে ফিরে আসলাম।
১১ -১২ জিলহজ তারিখে মিনায় ছোট, মধ্যম ও বড় তিন শয়তানদেক দুদিন পাথর বা কঙ্করমারা ঃ- আমার বিল্ডিং এর রুমের সাথীদেক নিয়ে ১ম দিন জহুরের নামাজের পর প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যেই অনেক কষ্ট করে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ৭টি করে ২১টি পাথর বা কঙ্কর নিয়ম মোতাবেক মারা বা নিক্ষেপ করা গেল। পুলিশেরা আমাদেক সোজা রাস্তা দিয়ে, আমাদের তাঁবুতে আসতে দিল না। অনেক ঘুর পথে আসতে বাধ্য করালো, ফলে আমরা আমাদের তাঁবুর পথ হারে ফেললাম। অনেক পথ হাঁটতে হাঁটতে আমরা খবুই হয়রান ও ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। পথের মধ্যে মঙ্গলীয় জাতি গুষ্টির (থাইল্যান্ড, মালোশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া বা জাপানের নাগরিক হতে পারে) এক সহৃদয়বান হজযাত্রী আমার হাতে কয়েকটি ভাল মানের চকলেট দিয়ে ইঙ্গিতে তা চুষতে বললেন। আমি তা মুখে দিয়ে তার স্বাদ অপূর্ব লাগলো, তখন আমার শুকনো
৬
মুখে রস আসলো এবং আমি খুবই আরাম পেলাম। আমি তাঁর জন্য মহান দয়ালু আল্লাহ্র নিকট দোয়া করলাম। এই ছোট ঘটনাটি আমার প্রতি মহান দয়ালু রহমানুর রহিম আল্লাহ্র দয়া।
মোসলমানদের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ:)কে মহান আল্লাহ্ পরীক্ষা করার জন্য, নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ:)কে করবানী করার হুকুম দেন। সেই চরম পরীক্ষায় হজরত ইব্রাহিম (আ:) সফল হলেন। এই কোরবানীর ঘটনায় শয়াতান হজরত ইসমাইল (আ:)এঁর মাকে ও হজরত ইসমাইল (আ:) কে ধোঁকা দেয়। তিনি তিন শয়তানকে পাথর বা কঙ্কর মারেন। মহান আল্লাহ্ এই ঘটনাকে স্বরণ করতে কিয়ামত পর্যন্ত যত হাজী হজ করতে যাবেন, মিনায় নির্দ্দিষ্ট স্থানে প্রত্যেক হাজীগনকে তিন শয়তানকে পাথর বা কঙ্কর মারার হুকুম দেন (ওয়াজিব)।
মিনায় অবস্থান কালে ছোট ছোট কয়েকটি ঘটনা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে, তা এখানে উল্ল্যেখ না করে পারলাম না।
১। মিনাতে ১ম দিন সৌদি মোয়াল্লেমের পক্ষ থেকে আমাদের তাঁবুতে বাংলাদেশের হাজীগনকে খাবার জন্য একবার মাত্র ৫টি আপেল, ৫টি কলা, ৫টি মাল্টা দিয়েছে। তাঁবুর বাহিরে গলির ধারে বাক্সে পর্যাপ্ত পরিমানে ঠান্ডা জুসের ছোট ছোট বোতল রাখা হয়েছে। হাজীগন যখন যাঁর প্রয়োজন ফলের জুস পান করতে পারেন। শুধু বেশী করে জুস পান করলে, পেটের বিভিন্ন সমস্যা হয়।
২। মিনায় আমাদের তাঁবুর অবস্থনের কথা আগেই বলেছি। আমাদের তাঁবুতে ঢোকার প্রবেশ পথে প্রথমে অফিস ও পাকিস্থানী হাজীদের রান্নার তাবু এবং সকল হাজীদের জন্য খাবার ঠান্ডা পানি ফ্রিজে রাখা ছিল, তা প্রথম দিকে আমাদেক নিতে দিচ্ছিল, পরে তা বন্দ করে দেয়। শুধু পাকিস্থানী হাজীদের জন্য রান্নার তাঁবু, সেখানে সব সময় শুধু তাঁদের জন্য খাবার রান্না হচ্ছে। যখন মাংস গ্যাসের আগুনে পোড়া বা ঝলসানো হয়, তখন তা থেকে খারাপ ধরনের গন্ধ বের হয়, সে রকমের মাংস রান্না ও শক্ত রুটি পাকিস্থানীদের প্রিয় খাবার। সেখানে বাংলাদেশের হাজীগন খাবারের খোঁজ করতে দাঁড়ালেই, কর্মরত পাকিস্থানের কর্মীরা উর্দ্দূতে বলে, এখানে শুধু পাকিস্থানী হাজীদের জন্য খাবার রান্না করা হয়, এখানে আপনারা দাঁড়াবেন না। সৌদি মোয়াল্লেম তাঁর ফি‘র সংগে আমাদের থেকে কিছু রিয়াল বেশী নিয়ে দুবেলা খিচুড়ীর ব্যবস্থা করতে পারতেন, যেহেতু পাকিস্থানী হাজীগনের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করচ্ছেন। বাংলাদেশের যাঁরা আমাদের দেখভাল করার জন্য, আমাদের নিকট থেকে ফি নিয়ে সৌদিতে (ভিআইপি) বিলাসী ভাবে হজের সময় দিন যাপন করচ্ছেন, তাঁরা কি সেবা করচ্ছেন, আমরা যারা সরকারীভাবে হজে গিয়েছি। অন্য দেশের হাজীগনের জন্য তাঁদের তাঁবুতে, তাঁদের জাতীয় খাবার রান্না করার ব্যবস্থা রয়েছে। ধিক! শত ধিক! আমাদের সরকারী ভাবে হজে পাঠানো আমলাদের নিচু মানের সেবার জন্য। আমার শুনা কথা, আমাদের সৌদি মোয়াল্লেম জন্ম গত ভাবে পাকিস্থানী, আর বসবাস সূত্রে সৌদির নাগরিক। তিনি কেমন ভাবে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারী ভাবে পাঠানো সরল সহজ ধর্মপ্রান হাজীগনকে দেখ ভাল করার জন্য চির বৈরী পাকিস্থানী হাজিদের সংগে