টপিকঃ অপেক্ষার প্রহর এবার শেষ হবেই
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড এর এলডিসি রিপোর্ট-২০১৬ তে প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০২৪ সালের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে ৪৮টি দেশ এলডিসি হিসেবে বিবেচিত। এশিয়াতে বাংলাদেশের পাশাপাশি আফগানিস্তান, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল ও ইয়েমেন এলডিসি। প্রতিবেদন মোতাবেক বাংলাদেশ ২০১৮ সালের মধ্যেই এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করবে। ২০২১ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বের হওয়ার তিনটি বিষয়ের নির্দিষ্ট মানদণ্ড সন্তোষজনকভাবে বজায় রাখতে সক্ষম হবে। আর ২০২৪ সালে চূড়ান্তভাবে এলডিসি থেকে বের হতে সক্ষম হবে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচক - এ তিনটি বিষয়ে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অর্জনকে বিবেচনায় রেখেই একটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিয়েছে এবং আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচকে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করেছে। আর মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি রয়েছে। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন মোতাবেক বাংলাদেশ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দেশের ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে - আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, জিবুতি, ইকোয়াটুরিয়াল গুইনিয়া, কিরিবাতি, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, সাওতোমি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ইয়েমেনসহ আরও কয়েকটি আফ্রিকান দেশ। উৎপাদন দক্ষতা, কাঠামোগত পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর বহুমুখীকরণ ভিত্তিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে যেতে হয়। বাংলাদেশ উৎপাদনকারী রফতানিকারক হিসেবে এই ধাপ অতিক্রম করছে, এটা দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির পরিচায়ক। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে কম সুদে নমনীয় শর্তের ঋণ এবং বিভিন্ন দেশে জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হলে এসব সুবিধা থাকবে না। তবে তাতে বিশেষ অসুবিধা হবে না। কারণ, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে। এখন মানবসম্পদের সঠিক উন্নয়ন হলেই ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকার কলঙ্ক বাংলাদেশকে আর বহন করতে হবে না। উল্লেখ্য, ১৯৭১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪২ বছরে সারা বিশ্বে এই তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে মাত্র তিনটি দেশ। ১৯৯৪ সালে বতসোয়ানা, ২০০৭ সালে কেপভার্দে এবং ২০১১ সালে মালদ্বীপ এই তালিকা থেকে বেরিয়ে এসেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর যুগোপযোগী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশের কলঙ্কমোচন করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে – অপেক্ষার প্রহর এবার শেষ হবেই।