টপিকঃ ধন্য বাবা-মা ধন্য দেশ
দরিদ্র ঘরের সন্তান ওরা। কারও বাবা কৃষি কাজ করেন। কারও বাবা দর্জি। সেই অজপাড়া গাঁ থেকে ঢাকায় আসবেন কখনও কল্পনাই করেননি। সেখানে পাঁচতারকা হোটেলে আসা তো অপ্রত্যাশিতই। অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের প্রত্যেক মেয়ে অর্থপুরস্কার নিল বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে মঞ্চে উঠে। এমন গর্বিত সন্তানের পিতা-মাতা হতে পেরে তারাও সম্মানিত বোধ করছেন। সোমবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে জেমকন গ্র“প, সাইফ পাওয়ারটেক ও কল্ডওয়েল সোয়া লাখ টাকা করে তুলে দেয়া হয় ২৬ ফুটবলার এবং কোচদের হাতে।মৌসুমী জাহানের মা মোহসিনা অসুস্থ। রংপুরে থাকেন। বড় মেয়ে কুলসুমা ঢাকায় গার্মেন্টকর্মী। ছোট মেয়েকে নিয়ে তিনি গর্বিত। তার কথায়, ‘স্ট্রোক করে বিছানায় পড়েছিলাম। কিন্তু মেয়ের এমন সংবর্ধনায় না এসে পারলাম না। মেয়েও নাছোড়বান্দা। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই আমাকে ছুটে আসতে হল। আমি গর্বিত। মৌসুমী এখন পুরোদস্তুর ফুটবলার। খুব ভালো লাগছে এখানে আসতে পেরে। ওর জন্যই আজ এমন বড় হোটেলে আসতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের মেয়ে তাসলিমা। মেয়েকে নিয়ে গর্বিত বাবা সবুজ মিয়া। পেশায় কৃষক। কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ বিক্রি করে চলে তার সংসার। সবুজ মিয়ার কথায়, ‘আজ আমি আনন্দে আত্মহারা। গর্বিত মেয়েদের বাবা আমরা। ওদের কৃতিত্ব নিয়ে এখানে এসেও আমরা অভিভাবকরা আলোচনা করেছি। দোয়া করি ভবিষ্যতেও তারা যেন দেশ-বিদেশ জয় করে। সাধারণ কৃষক হয়েও আজ মেয়ের জন্য আমি বিখ্যাত। এটা কখনও কল্পনা করিনি। তাসলিমার মা মানসিক রোগী। তাই সংসার আমাকে দেখতে হয়। তাসলিমার পুরস্কারের অর্থ আমি রেখে দেব। ওকে বিয়ে দিতে হবে। ওর ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও ও বিদেশ থেকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।’ছোটখাটো দর্জির দোকান ছিল কৃষ্ণা রানী সরকারের বাবা বাসুদেব চন্দ্র সরকারের। এখন সেটাও নেই। তাই কৃষি কাজের দিকেই ঝুঁকেছেন তিনি। এমন বড় হোটেলে এসে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে তার। বাসুদেবের কথায়, ‘খুব ভালো লাগছে। এখানে এসে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। জীবনে কল্পনাও করতে পারিনি যে, এত বড় হোটেলে আসতে পারব। মেয়ের জন্যই পেরেছি। মেয়ে এখন অর্থ উপার্জন করছে। আজ অনেকগুলো টাকা পেল কৃষ্ণা। এই টাকা দিয়ে আমি ছেলের লেখাপড়ার পেছনে কিছু খরচ করব। বাড়িতে কিছু টুকটাক খরচ রয়েছে। আর বাকি টাকা রেখে দেব কৃষ্ণার জন্য।’ অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের কথায়, ‘আমাদের সম্মান করায় বাফুফেকে ধন্যবাদ। এখন মনে হচ্ছে আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য চূড়ান্তপর্ব। দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প চলছে। এই সম্মান ভবিষ্যতে ধরে রাখার চেষ্টা করব। থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্বে ভালো খেলার চেষ্টা করব।’ মাছুরা খাতুনের বাবা রজব মিয়াও গর্বিত। তার কথায়, ‘আমি আগে বুঝতে পারিনি মেয়ে কি অর্জন করেছে। এখানে এসে বুঝলাম। ওর জন্যই তো আমি সাতক্ষীরা থেকে এত বড় হোটেলে এসে সম্মান পেলাম। কত বড় বড় লোক। কত ক্যামেরা। নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। তাদের সাথে আমরা দেশবাসিও গর্বিত।