টপিকঃ ‘শিখন’ এর আলোয় আলোকিত চলনবিলের দরিদ্র শিশুরা
শিখন নামের একটি এনজিও চলনবিলে দরিদ্র শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন বিস্তীর্ণ চলনবিলে স্কুল-কলেজ থাকলেও প্রত্যন্ত পাড়াগাঁয়ের অবহেলিত শিশুদের স্কুলে পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কেউ কেউ স্কুলে গেলেও টাকার অভাবে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি। গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থার এমন নাজুক অবস্থার প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে শিখন স্কুল। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় গাদাগাদি করে বসে আছে স্কুলড্রেস পরা কোমলমতি একদল খুদে শিক্ষার্থী। বৈঠা হাতে হাল ধরেছে নৌকার। এদের ভেতর ভয়-সংশয় নেই। আছে শুধু এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। ভেসে চলা এসব শিশুর গন্তব্য ‘শিখন পাঠশালা’। চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার বিচ্ছিন্ন গ্রাম শ্যামপুরে রয়েছে শিখনের তিনটি পাঠশালা। গ্রামটির চারদিকে থৈথৈ পানি। বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে শ্যামপুরের মেঠোপথগুলো। নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যেতে প্রতিদিন সকালে এভাবেই নৌকায় চাপাচাপি করে যেতে হয়। মাঝি না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকার হাল ধরে স্কুল অভিমুখে ছুটে চলে প্রতিদিন। পাঁচ বছর ধরে চলছে লেখাপড়া শেখার জন্য ছোট ছোট শিশুদের এই সংগ্রাম। এসব স্কুলে প্রতিবন্ধীসহ দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পড়ছে, সরকারিভাবে তাদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার সকল উপকরণ দিচ্ছে সেভ দ্য চিলড্রেন। এ অঞ্চলের শিশুদের স্কুলমুখী করতে শিখন স্কুলে নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগ। গুরুদাসপুর ফিল্ড অফিসের আওতায় সিংড়া, চাটমোহর, তাড়াশ এবং গুরুদাসপুর উপজেলায় শিখন স্কুলের পাশাপাশি রয়েছে ৫৭টি শিখন কেন্দ্র। শিখন কেন্দ্রে খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ঘটছে। পড়াশোনায় আগ্রহী হচ্ছে শিশুরা। শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পড়াশোনার যাবতীয় উপকরণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের দিয়ে ইংরেজি, গণিতসহ ছয়টি বিষয়ে পড়ানো হয়। এ বছর ৩ হাজার ২শ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে দীক্ষিত করে তুলতে ক্লাস শেষে নিয়মিত আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন, নাচ-গান এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে কেন্দ্র ভিত্তিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কৃতী ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় সংবর্ধনা।