নিয়াজ মূর্শেদ লিখেছেন:মানুষ কিভাবে এসেছে এটা নিয়ে অনেক গবেষনা হয়েছে এবং হচ্ছে। কেউ বলে ঈশ্বর বেহেস্ত থেকে প্রথম মানবকে বের করে দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলো দ্বিতীয় সৃষ্ট মানবীর ভুলের জন্য।
কিভাবে মানুষ এবং বস্তুজগৎের সৃষ্টি হলো তা জানার আগ্রহ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ছিলো। হাজার হাজার বছর আগের মানুষের জীবনে বিজ্ঞান বলে কিছুর অস্তিত্ব ছিলো না, অতএব দুর্বোধ্য প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার একটাই উপায় ছিলো - উর্বর মস্তিষ্ক। প্রাচীন সমাজের অজস্র কৃয়েটিভ মানুষ তাঁদের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে সৃষ্টিরহস্যের সমাধান দেবার চেষ্টা করেছিলেন। অসংখ্য কাল্পনিক তত্বের মধ্যে অল্প কিছু টিকে গিয়েছিলো, পরবর্তীতে আঞ্চলিক অর্গানাইযড ধর্মের আবির্ভাব হলে সেগুলো অবলম্বন করে নেয়া হয়।
আব্রাহামিক ধর্মগুলোর জেনেসিস কাহিনী মূলতঃ মেসোপটেমীয় ক্রিয়েশন মীথের সমষ্টি। সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় সৃষ্টিকাহিনীর প্রচুর রেফারেন্স পাওয়া যায় হিব্রু বাইবেলে। বিশেষ করে, বাইবেলের জেনেসিস কাহিনীগুলো প্রভাবিত হয়েছে ব্যবীলনীয় "এনুমা এলিশ" সৃষ্টিকাহিনী দ্বারা। বলা বাহূল্য, সম্রাট নেবুশাদনেযারের আমল থেকে কয়েক দশক যাবৎ লেভাণ্ট এলাকা দখল করে নিয়েছিলো ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্য। ইহূদী এলিট সমাজকে জোর পূর্বক ব্যাবীলনে স্থানান্তরিত করেছিলো বিজেতারা (Babylonian exile)। সম্ভবতঃ সেই কয়েক দশক ব্যাপী লম্বা বন্দীদশাতে ব্যবীলনীয় সৃষ্টিকাহিনীতে দীক্ষিত হয়েছিলো প্রাচীন হিব্রু পণ্ডিতরা, যার কাস্টোমাইজড, লোকালাইজড ভার্সন পরে হিব্রু বাইবেলে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ইহুদী ধর্ম থেকে আবির্ভূত অন্যান্য ধর্মগুলো যেমন খৃস্ট ধর্ম ও ইসলাম হিব্রু কাহিনীকেই অবলম্বন করে নিয়েছিলো।
মেসোপটেমীয়দের আগে এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি তা ভাবলে ভুল হবে। সৃষ্টিরহস্য উদ্ধারের আগ্রহ মানুষের আদিমকাল থেকেই ছিলো। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার বছর আগেও এই অনুসন্ধিৎসু আদিম মনের সন্ধান পাওয়া যায় ইউরোপের বিভিন্ন গুহায় অংকিত পেইণ্টিং থেকে। জেনেসিস-এর মতো অজস্র সৃষ্টিকাহিনী হারিয়ে গেছে।
ইহুদীদের সৃষ্টিকাহিনীও হয়তো হারিয়ে যেতো। তবে তাদের সৌভাগ্য - ইহুদীদের বাসস্থান ছিলো সুমের-এর নিকটে। আড়াই-তিন হাজার বছর আগের মীথগুলো টিকে গিয়েছে কারণ প্রায় ৫২০০ বছর আগে সুমেরীয়রা জ্ঞান সংরক্ষণের একটা টেকনলজী আবিষ্কার করে ফেলেছিলো - লেখালেখি। মানুষের ইতিহাসে এই প্রথমবার তার চিন্তাভাবনাকে অমরত্ব প্রদানের সুযোগ আসে। সুমেরীয়রা কাদামাটির ট্যাবলেটে লিখতো। পরে মিশরীয়রা পাপাইরাসের কাগজ তৈরী করে। আরো পরে চীনারাও কাগজ তৈরির বিকল্প পদ্ধতি ডেভেলপ করে।
তৎকালীন অর্গানাইযড ধর্মগুলো অবলম্বন করে নিয়েছিলো বলেই কয়েক সহস্রাব্দ পুরণো এসব প্রস্তরীভূত সৃষ্টিতত্বকে সত্য বলে ধরে নেবার কোনো যুক্তি নেই। আমাদের হাতে এখন আরো ভালো অস্ত্র আছে - বিজ্ঞান। নিউটন, ডারউইন, আইনস্টাইনরা যদি আড়াই-তিন হাজার বছর পূর্বে জন্মাতেন তবে ধরে নেয়া যেতে পারে বাইবেল-কোরানে বিগব্যাং আর বিবর্তনের কাহিনীই থাকতো। 
ঠিক তেমনি, আমাদের সময়ে যেসব বৈজ্ঞানিক তত্ব প্রচলিত আছে, তার কিছু অংশ কয়েক শতাব্দী বা সহস্রাব্দ পরে ভুল প্রমাণিত হতে পারে।
নিয়াজ মূর্শেদ লিখেছেন:কেউ বলে এক প্রজাতির বানর লক্ষ কোটি বছরের বিবর্তনের ফলে আজকের মানুষ হয়েছে।
মানুষ আসলে বানরেরই একটা প্রজাতি।
ভাষাগত বিভ্রাট। "মানুষ বানরের প্রজাতি" - এর অর্থ অনেকটা এরকমঃ আপনার কোনো রেণ্ডম কাযিন হলো আপনার পিতা বা মাতার জনক/জননী।
দুঃখজনকভাবে বাংলায় ape শব্দটি তেমন প্রচলিত নয়, আর সঠিক অনুবাদও নেই। অভিধানে ape-এর শব্দার্থ "বনমানুষ" - আমার মতে এটা খুবই দুর্বল এবং দুর্বোধ্য অনুবাদ। "বনমানুষ" শুনলে অনেকেই ধরে নেবে আ্যামাযন বা আফ্রিকার জঙ্গলে বসবাস করা মানুষ... 
সবাই এইপ, আর তারই একটা ছোটো সাবগ্রুপ "গ্রেট এইপ"-এর অন্তর্ভুক্ত হলাম আমরা মানুষেরাঃ

নীচে এইপ বিবর্তনের ক্ল্যাডোগ্রামঃ

দেখা যাচ্ছে, বানর (ওল্ড ও নিউ ওয়ার্ল্ড মাংকীয)
আমরা "বানর" বলতে যা বুঝি তাদের থেকে আমাদের বংশধারা পৃথক হয়েছে কমপক্ষে সোয়া দুই কোটি বছর আগেইঃ

গ্রেট এইপসদের ক্ল্যাডোগ্রামঃ

আমাদের সবচেয়ে কাছের "আত্মীয়" বানররা নয় (বরং এইপসদের মধ্যে ওরাই সবচেয়ে দূরের), তারা হলোঃ শিম্পাঞ্জী আর বনোবো। শিম্পাঞ্জী লাইনের সাথে আমাদের স্পিট হয়েছে কমসেকম ষাট লক্ষ বছর আগে।
বানর/গরিলা/শিম্পাঞ্জী/ব্লাব্লা থেকে মানুষ এসেছে এই বাক্যটি ভুল। সঠিক হবে - শিম্পাঞ্জী ও আমরা একই পূর্বপুরুষ শেয়ার করি।
নিয়াজ মূর্শেদ লিখেছেন:মানুষ কথা বলতে পারে অন্য প্রানী পারে না? ভুল।
মানুষ ছাড়া আরেকটা মানুষেরই মতো দেখতে প্রানী যে কিনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে কথা বলতে পারতো।
এই প্রানীর নাম নিয়ানডারথান।
নিয়াণ্ডার্টাল-রাই একমাত্র হোমিনিড প্রজাতী ছিলো না। ইউরোপ, সেন্ট্রাল এশিয়া আর মিডল ঈস্টে ছিলো নিয়াণ্ডার্টাল প্রজাতী, এশিয়ায় ছিলো ডেনিসোভান এবং ইন্দোনেশিয়ায় ছিলো ফ্লোরেসিয়েন্সিস প্রজাতীর হোমিনিড মানব। এরা আমাদের লক্ষ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন মহাদেশে বসতি স্থাপন করেছিলো।
এখানে টাইমলাইনঃ

আমরা - হোমো স্যাপিয়েন্সদের বংশলতিকা সংক্ষেপে এরকমঃ ২০০,০০০ বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায় এ্যানাটমিকালী মডার্ণ মানুষের আবির্ভাব, আনুমানিক ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে বের হয়ে বাদবাকী পৃথিবীতে ইমিগ্রেট করেছি, এবং আমাদের প্রাচীন "মাইগ্র্যাণ্ট ক্রাইসিস"-এর প্রভাবে পুরনো মানব প্রজাতীরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 
তবে একেবারে ঝাড়েবংশে নিশ্চিহ্ণ করতে পারি নি। এসব বিলুপ্ত মানুষদের চিহ্ণ আমাদের, নন-আফ্রিকান মানুষদের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। প্রায় সকল নন-আফ্রিকান মানুষের ১ - ৪% জীন এসেছে নিয়াণ্ডার্টালদের থেকে। এছাড়া, এশিয়া ও মেলানেশিয়ান মানুষের ৬% পর্যন্ত ডিএনএ এসেছে ডেনিসোভানদের থেকে।
আধুনি মেডিকেল সাইন্সে এসব জীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বেশ কিছু এ্যালার্জী, রোগের কারণ হিসাবে সন্দেহ করা হয় নিয়াণ্ডার্টাল জীনকে। টাইপ-২ ডায়াবিটিস, ক্রহন'স ডিজিজ, লুপাস, সিরোসিস, হার্টের অসুখ, ডিপ্রেশন এমন কি সিগারেট আসক্তির পেছনে নিয়াণ্ডার্টাল জীনের ভূমিকা পেয়েছেন গবেষকরা।
নিয়াজ মূর্শেদ লিখেছেন:মানুষের মতো এই প্রানীরও FOXP2 নামক জিন থাকায় শব্দ গঠন করতে পারত। আর কোনো প্রানীর মধ্যে এই জিন নেই।
FOXP2 জীন অসংখ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে আছে। কুমির, ইঁদুর থেকে শুরু করে সংবার্ড পাখির মধ্যেও এটার ভ্যারিয়েণ্ট সনাক্ত হয়েছে।
FOXP2 প্রথম সনাক্ত করা হয় এক পাকিস্তানী পরিবারে - এই পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের মধ্যে স্পীচ ডিজওর্ডার ছিলো। তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ২০০১ সালে FOXP2 প্রোটিনের অস্তিত্ব খুঁজে পান গবেষকরা। প্রথম প্রথম এটাকে "language gene" বলা হতো। তবে এখন আর ওই সিম্পলিস্টিক ধারণা নেই।
FOXP2-তে ৭০০-র অধিক এ্যামিনো এসিড আছে। শিম্পাঞ্জী, গরিলা আর ম্যাকাক বানরদের সাথে আমাদের পার্থক্য মাত্র ২টা এমিনো এসিডে। আর ইঁদুরের সাথে পার্থক্য মাত্র ৩টা এমিনো এসিডে।
এখানে একটা প্যাটার্ণ লক্ষনীয় - ইঁদুরের সাথে আমাদের প্রাইমেটদের বংশধারার স্প্লিট হয়েছিলো ১৩ কোটি বছর আগে। অর্থাৎ, ১৩ কোটি বছরে FOXP2 সিকোয়েন্সে মাত্র একটা এমিনো এসিডের মিউটেশন ঘটেছে। তার অর্থ হলো, মানুষের যে ২টা মিউটেশন আছে তা ঘটেছে সাম্প্রতিক কালেঃ অন্ততঃ ২ লক্ষ বছর আগে।
মানুষের FOXP2-র ৩টা মিউটেশন ইঁদুরের মধ্যে দিয়ে গবেষকরা দেখেছেন ইঁদুরগুলোর ব্রেইনে খুব সামান্য পরিবর্তন হয়েছে, এবং এরা হাই-পীচড সাউণ্ড ভোকালাইযেশন করতে পারছে। এ থেকে গবেষকরা ধারণা করছেন, FOXP2 মূলতঃ ব্রেইনে-কে মাসল মুভমেণ্ট রেগুলেট করার আলাদা ক্ষমতা দিয়েছে। কথা বলার সময় নির্দিষ্ট সিকোয়েন্সে, জটিল প্যাটার্ণে মাসল মুভমেণ্ট করতে হয় আমাদের - FOXP2 ওই ক্ষমতাগুলো আমাদের দিয়েছে।
এখন আর FOXP2-কে ভাষার মাস্টার জীন বলে মনে করা হয় না। ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান... 
2 minutes and 14 seconds after:
পারেন ও বটে। ওই পোস্টগুলো আমিও খুঁজছিলাম 
যাকগে, প্রজন্মের চলমান এনসাইক্লোপিডিয়া ডেডু ভাই থাকতে আর কোনো চিন্তা নেই... 
Calm... like a bomb.