nasiful alam লিখেছেন:কোনো গ্রহের ঘূর্ণন কী ওই গ্রহে অবস্থিত মানুষের শারীরিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে?? ধরা যাক,'ক' ব্যক্তি পৃথিবীতে ও 'খ' ব্যক্তি বৃহস্পতিতে থাকে। পৃথিবীর বার্ষিক গতির হিসাব অনুযায়ী 'ক' এর বয়স যখন ১৮ বছর হবে,বৃহস্পতির বার্ষিক গতির হিসাব অনুযায়ী একই সময়ে 'খ' এর বয়স ১.৫২ বছর হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি কী সেই বয়স অনুপাতে হবে,নাকি সময় সমান বলে বৃদ্ধি একই হবে?? বিষয়টি জানতে চাই।
খুব সম্ভবতঃ না। ঘুর্ণনের সাথে বয়স বৃদ্ধির সম্পর্ক সম্ভবতঃ নেই।
আপনি যে ইফেক্টের কথা বলছেন সেটা গ্র্যাভিটেশনাল টাইম ডাইলেশন। গ্র্যাভিটেশনাল পটেন্শিয়াল যেখানে বেশি (অর্থাৎ মহাকর্ষ বল বেশি) সেখানে সময় ধীরে প্রবাহিত হয়, উল্টোটা অর্থাৎ সময় দ্রুত প্রবাহিত হয় যেখানে মহাকর্ষ বল কম।
চতুর্মাত্রিক স্পেস-টাইমকে গ্র্যাভিটি "বাঁকিয়ে" (curve) ফেলে। নীচের কাল্পনিক ছবির মতোঃ

কিন্তু আমরা জানি, আলোর গতি ধ্রুব। দূর্বল গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ডে পয়েণ্ট a থেকে b-তে যে সময়ে আলোর রশ্মি পরিভ্রমণ করে, জোরালো গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ডে c থেকে d-তেও একই সময়ে আলোরশ্মি পরিভ্রমণ করে (যেহেতু ওর গতিবেগ ধ্রুব):

এখানে, স্ট্রং গ্র্যাভিটেশনাল পটেনশিয়ালের দরুণ স্পেস-টাইম কার্ভেচারের কারণে c-d দূরত্ব "বেড়ে গেছে"।
এদিকে আমরা জানিঃ

যেহেতু, আলোর speed অপরিবর্তনীয়, আবার বেণ্ডিংয়ের কারণে c-d distance-ও বেড়ে গিয়েছে, অতএব এই ইকুয়েশনে একটা মাত্র ভ্যারিয়েবল-কেই ইলাস্টিক ব্যাণ্ডের মতো টেনেটুনে মান পরিবর্তন করার অবকাশ আছে - সে হলোঃ time
জুপিটারের সারফেস গ্র্যাভিটি যেহেতু পৃথিবীর তূলনায় প্রায় 2.4 গুণ বেশি, তাই সেখানে সময়ও ধীরে প্রবাহিত হয়। জমজ দুই ভাইকে যদি "রিয়েল টাইমে" দুই গ্রহে টেলিপোর্টেশন করা যেতো, তবে পৃথিবীবাসী চাচাচৌধরী ভাইয়ের বয়স যখন চব্বিশ, তখন জুপিটার সাবুর বয়স সবে ১০।
আইনস্টাইনের সময়ে সম্ভবতঃ আল্পস পাহাড়ের চূড়ায় ও পাদদেশে হাই ফ্রিকোয়েন্সী এ্যাটমিক ঘড়ি রেখে দেখা গেছে দু'টোর মধ্যে কয়েক ন্যানোসেকেণ্ড পার্থক্য - যদিও উভয় ঘড়িই তাদের সময় সাপেক্ষে ধ্রুব গতিতে ticking করে গেছে, কিন্তু পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশের গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ডের পার্থক্যের কারণে এমনটা হয়।
এতদিন অব্ধি রিলেটিভিটিকে ইউজলেস, আরকেইন ম্যাথমেটিকাল নলেজ মনে করা হতো। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে আধুনিক পৃথিবীতে রিলেটিভিটির সবচেয়ে বড় উপযোগীতা হয়েছে জিপিএস সিস্টেমে। ২৪টা জিপিএস স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০,০০০ কিমি ওপর দিয়ে ১৪,০০০ কিমি/সে গতিতে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। গ্লোবাল পযিশনিং স্যাটেলাইটে সিযিয়াম এ্যাটমিক ঘড়ি ব্যবহার করে যা প্রতি ন্যানোসেকেণ্ডে একবার করে টিক করে। (FYI, ১ সেকেণ্ড = ১০০০ মাইক্রোসেকেণ্ড = ১ বিলিয়ন ন্যানোসেকেণ্ড) রিলেটিভ ভেলোসিটি টাইম ডাইলেশন (স্পেশাল রিলেটিভিটি) এবং গ্র্যাভিটেশনাল টাইম ডাইলেশন (জেনারাল রিলেটিভিটি) - এ দুই রিলেটিভিস্টিক ইফেক্টের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ এবং স্যাটেলাইটগুলোর ঘড়িতে সময়ের ভিন্নতা হয়, ভূপৃষ্টের অবজার্ভেটরীর তুলনায় স্যাটেলাইটগুলো দৈনিক প্রায় ৩৮ মাইক্রোসেকেণ্ড বেশি টিক করে ফেলে (যেহেতু কক্ষপথে লো গ্র্যাভিটিতে সময় "দ্রুত প্রবাহিত" হয়)। ৩৮ মাইক্রোসেক (বা ৩৮ হাজার ন্যানোসেক) নিতান্তই অল্প মনে হতে পারে - কিন্তু বাস্তব জীবনে এই চোখের পলকের চেয়েও ক্ষুদ্র সময়কাল ভীষণ ক্রিটিকাল। ২ ডজন স্যাটেলাইটগুলো নিজেদের মধ্যে এবং ভূপৃষ্ঠের সাথে সময়ে পার্থক্য নির্ণয় করে, এবং তার সাথে জিপিএস রিসিভারের কো-অর্ডিনেটস ট্রাইল্যাটারেশন করে বস্তুর ৩ডি অবস্থান নির্ণয় করে। মিলিটারী/ইণ্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড হাই-প্রেসিশন জিপিএস রিসিভার কয়েক সেণ্টিমিটার প্রেসিশনে জিওলোকেট করতে পারে, আর আমাদের পকেটের এ্যণ্ড্রয়েড/আইফোনের মামুলী এজিপিএস-ও কয়েক মিটারের মধ্যে লোকেট করতে পারে। স্যাট ও সারফেসের মধ্যে টাইম ডিফারেন্স যদি এ্যাডযাস্ট না করে তা বরং পুঞ্জীভূত করতে দেয়া হয়, তবে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় জিপিএস লোকেশন ১০ কিমি পর্যন্ত এরর হবে। কল্পনা করতে পারেন, ঢাকা থেকে প্লেনে উঠলেন নিউ ইয়র্কে যাবেন বলে, জিপিএস-এ জেএফকে বা লাগার্ডিয়া এয়ারপোর্টের কো-অর্ডিনেটস সেট করে প্লেন খানা অটোপাইলটে ছেড়ে দিলেন লম্বা ঘুম...
১৬-১৮ ঘণ্টা পর প্লেন থেকে নেমে দেখলেন পৌঁছে গেছেন নিউ ক্যালিফোর্নিয়া (যার অন্য নাম নোয়াখালী)-তে
এতোদিন তো ছিলো এয়ার ট্রান্সপোর্ট। ড্রোন আর গুগল সেল্ফ ডৃভেন কারের যুগে রিলেটিভিটি এখন তো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বাই দি ওয়ে, রিলেটিভিস্টিক টাইম ডাইলেশনের বাইরেও গ্র্যাভিটির অনেক বায়োফিজিকাল ইফেক্ট আছে। ভূপৃষ্ঠের অধিক 9.8m/s অভিকর্ষ বলের কারণে আমাদের দেহের পেশীগুলোকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। পা থেকে রক্ত ওপরদিকে (এ্যাণ্টি-গ্র্যাভিটি) পাম্প করতে হৃৎপিণ্ডকে খুব বল প্রয়োগ করতে হয়। চলাফেরার জন্যও হাতপায়ের পেশীগুলোকে অধিক শক্তি খরচ করতে হয়। এমনকি ভূপৃষ্ঠে কোনো কিছু না করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও একটি বেশ শক্তিনাশক কাজ। এসব কারণেও বায়োলজীকালী বয়সবৃদ্ধি একটু দ্রুত হয়। আগে ধারণা করা হতো, মহাকাশের যিরো গ্র্যাভিটিতে শরীরের অর্গ্যানগুলো রেস্ট স্টেইটে থাকবে, ওতে করে বায়োলজিকাল এজিং ধীরে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো ইফেক্ট - শরীরের মাসলগুলো স্বল্প কিংবা অব্যবহারের কারণে গ্লোবাল মাসল ওয়েস্টিং হচ্ছে। অনেকদিন মহাকাশে (আইএসএস) থাকার পর যেসব এ্যাস্ট্রোনট-রা পৃথিবীতে ফিরে আসে, তারা ভূপৃষ্ঠের গ্র্যাভিটিতে প্রবেশ করে বিপাকে পড়ে - চলাফেরা তো দূরের কথা, উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও এদের থাকে না। টিভিতে হয়তো দেখেছেন এদের স্ট্রেচারে করে স্পেসক্রাফট থেকে বের করে আনা হয়। এখন ধারণা করা হচ্ছে, যিরো গ্র্যাভিটিতে বেশিদিন থাকলে মাসল ওয়েস্টিং ও ডিজইউজের কারণে বরং উল্টো মৃত্যু ত্বরাণ্বিত হতে পারে।
Calm... like a bomb.