টপিকঃ কত শক্তি হাইড্রোজেন বোমায়: ১
হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে অনেকর মধ্যেই ভ্রান্ত ধারানা বিরাজমান। হাইড্রোজেন বোমা বেশী শক্তিশালী নাকি এটম বোমা বেশী শক্তিশালী? প্রশ্নের উত্তরে বেশীরভাগই ভুল উত্তর দেবেন। কারনটা সম্ভবত এর নামের দরুন। নাম শুনে মনে হয় হাইড্রোজেন বোমা হল হাইড্রোজেনের দহন-ক্রিয়ার শক্তি দিয়ে বানানো বোমা। অনেকটা মার্সিয়ান মুভিতে পানি বানাতে গিয়ে বিস্ফরনের মত। আসলে তা নয়।
ছবি: দ্যা মার্সিয়ান মুভি স্ক্রিনসট
এই জাতীয় বোমা যে খুব একটা কাজের না তা মুভিতেই দেখা গেছে। বিস্ফোরনের পর ম্যাটের চুলে একটু ধোয়া ধরলেও সবই অক্ষত ছিল। ব্যায়বহুল এবং কম শক্তি উৎপাদনের কারনে কোন মিলিটারীই এই ধরনে বোমা ব্যাবহার করেননা। ফলে “হাইড্রোজেন বোমা” নামটা অব্যাবহৃত রয়ে গেছে। এই সুযোগে পারমানবিক বোমা পার্টি তাদের নতুন জেনারেশন পারমানবিক বোমার নাম “হাইড্রোজেন বোমা” দিয়ে দিয়েছেন।
জি হ্যা হাইড্রোজেন বোমা নিজেও একটা পারমানবিক বোমা। একের ভেতরে দুই।
আরো একটু খোলসা করি। পারমানবিক বিক্রিয়া হয় দুই ধরনের। বিভাজন(Fission) এবং সংযোজন(Fusion)। নামদিয়েই বোঝাযায় কোনটা কি। ফিশান ক্রিয়ায় বড় একটা পরমানুকে (ইউরেনিয়াম ২৩৫ এবং অথবা প্লুটোনিয়াম ২৩৯ পরমানু ) ভেঙ্গে দুটা ছোট পরমানু প্লাস কিছু খুচরা বানানো হয়। পারমানু দুটা থেকে যায় আর খুচরা ভর হয়ে যায় শক্তি। যেমন ইউরেনিয়াম ভেঙ্গে হয় আর্গন আর বেরিয়াম। আর্গন আর বিরিয়ামের মিলিত ভর ইউরেনিয়ামের একার ভরের চেয়ে একটু কম। সেই রয়ে যাওয়া অংশটুকুই পরিনত হয় শক্তিতে। অনেকটা পাচ টাকার নোট ভেঙ্গে দুটা দু টাকার নোট বানানো আর এক টাকার গাট্টা খাওয়ার মত।
ছবি: উইকি
যেহেতু E=mc^2 সেহেতু সেই অতি অল্প খুচরা ভরটাই বিপুল শক্তি উৎপন্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অন্যদিকে ফিউশান হল উল্টা। দুইটা ছোট পরমানু একসাথ করে একটা বড়পরমানু প্লাস কিছু খুচরা বানানো এই ক্ষেত্রেও খুচরাটুকু পরিনত হয় শক্তিতে। আমাদের সূর্য্যে পারমানবিক বিক্রিয়াটা এই টাইপের। সূর্য্যে হাইড্রোজেন সংজোজিত হয়ে পরিনত হয় হিলিয়াম আর শক্তিতে।
ছবি: উইকি
সাধারন (হিরোশিমা আমলের) “এটম বোমা” হল ফিশান বোমা। তত্তগত ভাবে যত বেশী ইউরেনিয়াম তত বেশী শক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা দুইখানে। প্রথমত পরমানু ক্ষুদ্র হওয়ায় ইউরেনিয়াম কে ভাঙতে যে নিউট্রন ছুড়েদেয়া হয় সেটা ইউরেনিয়াম পরমানুতে লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে। তাই প্রয়োজনের অনেক বেশী ইউরেনিয়াম দিতে হয়। অত ইউএরনিয়াম জোগাড় করা ব্যায়বহুল। আদতে একটা বোমাতে থাকা ইরেনিয়ামের ছোট একটা অংশই শুধু ভাঙ্গে, বাকিটা থেকে যায় বা অপচয় হয়, সেই থেকে যাওয়া ইউরেনিয়াম থেকে হয় রেডিয়েশন পরবর্তী হাজার বছর যাবৎ।
আরেকটা সমস্যা হল ক্রিটিক্যাল ম্যাস, যার সার মর্ম হল, আপনি চাইলেই বস্তায় বস্তায় ইরেনিয়াম দিয়ে বিশাল এক বোমা বানতে পারবেননা। কারন একটা নির্দিস্ট ভরের পর স্তুপটা আর স্টেবল থাকেনা। এখন আপনি যদি কবিদের উপর বিরক্ত হয়ে আকাশের চাঁদটা গুড়িয়ে দিতে চান। এবং এর তার জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল একটা ফিশান এটম বম বানাতে চান (যদিও অত ইউরেনিয়াম দুনিয়ার মানুষে হাতে নাই, ধরে নিন জুয়েলআইচ পাছার ভেতর থেকে ১০০ বস্তা ইউরেনিয়াম এনে দিলেন), ক্রিটিক্যাল ভর সমস্যার জন্য ট্যাকনিক্যল ভাবে তা সম্ভব নয়। অন্তত আমাদের বর্তমান টেকনলজী দিয়ে। তাহলে উপায়? কবিদের অত্যাচার সহ্য করতে হবে... পূর্ণিমার চাদ যেন ঝলশানো রুটি...? না তা হবে কেন। উপায় হল হাইড্রোজেন বম।
একটা পুরানো দাদার আমলের সাধারন ফিশান এটম বম নিয়ে এটা একবস্তা লিথিয়াম - হাইড্রোজেন আইসোটোপের পেস্টের ভেতর ভরে দিলেই হাইড্রোজেন বোমা হয়ে গেল। ভেতরের এটম বমটা যখন ফাটে তখন অতি প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়, সেই তাপে বাইরের হাইড্রোজেন আইসোটোপ ফিউজ হতে থাকে, ঠিক সূর্য্যে হওয়া বিক্রিয়ার মত। ডিউটেরাইড হয় ট্রিটিয়াম, এবং পরে ট্রিটিয়াম হয় হিলিয়াম। এই ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল ম্যাস লিমিটেশন নাই। এক বস্তার যায়গায় দশ বস্তা লিথিয়াম ডিউটেরাইড দিলেও সমস্যা নাই। তার উপর ফিউশনের হিট/মিস রেট ফিশানের চেয়ে অনেকগুল ভাল। ব্যাস এখন শুধু আইচকে রাজি করানো গেলেই চাদের একটা বিহিত করা যায়।
টেলার- উলাম (Teller–Ulam) মডেল। ছবি: উইকি
হিরোশিমায় ফেলা লিটল বয় এটম বোমার ইয়েল্ড ছিল ১৫ কিলোটন টিএনটি সমতুল্য। ফিশান বমের হিসেবে ঐটাই অনেক। অন্যদিকে ১৯৬১ সালে রাশিয়ায় টেস্ট(!) করা এইচ বম টেসার বব্মা ছিল ৫০,০০০ কিলোটন টিএনটি ইয়েল্ডের!! হিরোশিমারটাকে লিটল বয় কেন নাম দিয়েছিল এইচ বম বেরুনোর পর সেটা পরিস্কার হল!
ভাবছেন টিএনটি কি জিনিস? ৫০ হাজার কিলোটন টিএনটি কত খানি শক্তি? মানে কয়টা রজনীকান্ত ঘুসিতে এক কিলোটন টিএনটির সমান শক্তি থাকে?
হুমম
- চলবে