টপিকঃ আমি অণিমা
আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক চঞ্চল ছিলাম। প্রজাপতির মত এক মুহূর্ত স্থির থাকতে পারতাম না। সারাক্ষন আমার হইচই করা চাই।
একদিন বাবা ডেকে বললেন, পাঁচ মিনিটের জন্য একটু শান্ত হয়ে দাঁড়াও তো!
আমি হাসিমুখে বললাম, আচ্ছা! শুধু পা নাড়াবো কেমন? বাবা হতাশ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
আরো দুইটা ভাইয়ের সাথে ঘরের সব চেয়ে আদরের মেয়ে হিসেবে এইভাবেই বড় হতে লাগলাম। বলা যেতে পারে সবার মধ্যমণি। এই জন্যই হয়তো একটু আহ্লাদী হতে শুরু করলাম। এখন ভেবে দেখলে মনে হয় খানিকটা ন্যাকামিও ছিল আমার মধ্যে। তাছাড়া আমি একটা সাধারন সাদাসিধা টাইপের মেয়ে হিসেবে বড় হতে লাগলাম। খুব অল্পতেই খুশি হতাম, আবার অল্পতেই মন খারাপ করতাম। যার কারনে আমাকে রাগানো খুব সহজ ছিল। আবার খুব অল্পতেই রাগ ভেঙ্গে যেত।
২০১১ সালের শেষের কথা। কলেজে সবে মাত্র ভর্তি হয়েছি। আমার সব ফ্রেন্ডরা তখন ধুমিয়ে ফেসবুক ইউজ শুরু করল। আমার মনে হল কেউ আঠা দিয়ে ওদের হাতে ফোন জুড়ে দিয়েছে। সব সময় ওদের হাতে ফোন! ব্যাপারটা আমাকে বিরক্ত করা শুরু করল যখন দেখলাম খেতে গিয়ে, রিক্সায় বসে এমনকি প্রাইভেট পড়তে গিয়েও ফোন ওদের হাতে ফোন থাকত। আমি ওদের পাশে বসে গম্ভীর মুখে ওদের ফেসবুক গুতাগুতি দেখতাম। কিন্তু কিছু বলতাম না। যাইহোক আমার বিরক্তি ধিরে ধিরে বাড়তে লাগল। বিরক্তি বেড়ে একসময় কৌতূহলে রুপ নিল। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে টের পেলাম আমার নিজেরও ফেসবুকিং করতে ইচ্ছা করছে !
সমস্যা দাড়ালো আমাকে তখনো সেলফোন কিনে দেয়া হয়নি। আমাদের বংশের মেয়েদের জন্য সেলফোন হারাম ঘোষণা করা হয়েছে কিছুদিন আগে। এর শানে নজুল হল কাজিনদের মধ্যে কেউ কেউ সেলফোন হাতে পাওয়ার পর অতি উৎসাহী হয়ে একাধিক প্রেমে জড়িয়ে যাচ্ছে। রাতের পর রাত ফিসফিস করে কথা বলছে। খিলখিল করে হাসতে গিয়ে হাসি গিলে ফেলছে। ঝগড়া হলে কাঁদতে গিয়ে মুখ চেপে রাখছে যেন শব্দ নাহ হয়। এইধরনের লুকোচুরি ভালোবাসা বেশি দিন চলে না। মাঝখান দিয়ে আমাদের ফোন হাতছাড়া হল।
আমি বোধহয় মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে এসেছি।আসলে এই প্রথম কোন কিছু লিখছি তো,তাই সব গুলিয়ে ফেলছি। ব্যাপার নাহ, এলোমেলো লিখতে খারাপ লাগছে না। যাইহোক আমার প্রেমময়ী কাজিনগুলোর জন্য বাকী যারা মাত্র বড় হচ্ছে তাদের সবার উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল কারো হাতে যেন ফোন দেখা না যায়। বড়দের কথা হল আমাদের ফোনের দরকারটাই বা কি? আমরা কি ব্যবসা-বানিজ্য করি? বান্ধবীর সাথে ফোনে কিসের কথা? পড়াশোনার কোন কথা থাকলে সেটা মায়ের সামনে বসে বলতে হবে। আর বাচ্চা মেয়ের এত বান্ধবীই বা কিসের?
ফোন না থাকার কারণে তৎক্ষণাৎ ফেসবুকিং শুরু করতে পারলাম না। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর মনে হল কিছু একটা প্রতিবাদ করার মত বড় হয়ে গিয়েছি। গম্ভীর মুখে আম্মুকে গিয়ে বললাম একটা মোবাইল কিনে দিতে। আম্মু যেন শুনলই না। বুঝতে পারলাম চেঁচামেচি না করলে কাজ হবে না। চেচামেচি শুরু করার আগেই আম্মু একবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার আগের মত পাতিলে চামচ নাড়তে লাগল। । এইবার ভিন্ন পন্থা নিলাম। ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিলাম । সকাল সন্ধ্যা আম্মুর শাড়ীর আচঁলের কোণা ধরে ঘ্যানরঘ্যানর চালিয়ে গেলাম। এইভাবে দুইদিন অত্যন্ত ডেডিকেশান এর সাথে ঘ্যানঘ্যান করার পর আম্মু আম্মুর ফোন আমাকে ইউজ করতে দিতে রাজী হল। তবে বাইরে যাওয়ার সময় নেয়া যাবে না আর রাতে ১০টার পর থেকে ফোন আম্মুর কাছে থাকবে।
এই প্রথম কোথাও লেখার চেষ্টা করলাম বলা যেতে পারে আমার জীবনের প্রথম লেখা। ভাল হবে না জানি। তবে ফোরামে অনেকদিন ধরেই লেখা পড়ি। মুন আপু
তার ছেড়া কাউয়া, উদাসিন ,ফারহান, স্বপ্নিল ছাড়া ভাইয়া আপুদের লেখা পড়ে লিখতে ইচ্ছা করছিল। যাইহোক। লেখাটি কন্টিনিউ করব যদি খুব পচা না হয়