টপিকঃ শ্যাম রাজার দেশে ( ষষ্ঠ পর্ব )
ব্যাং পা ইন সামার প্যালেস আর ছনবুরির ওপেন জু খাও খিয়াও
মুয়াং বোরান থেকে যখন বের হলাম তখন বেলা সাড়ে বারটার মত হবে । গাড়িতে ওঠার সময় ড্রিঙ্কস আর হাল্কা নাস্তা কিনে নিলাম । এবারের গন্তব্য ব্যাং পা ইন এর সামার প্যালেস । প্রায় দেড় ঘন্টার বেশি সময় ড্রাইভ করার পর আমরা এসে পৌছালাম আয়ুত্থা প্রদেশের ব্যাং পা ইন জেলার প্যালেস এর সামনে । এই প্যালেস বা প্রাসাদ কে ব্যাং পা ইন প্যালেস বলে আবার সামার প্যালেস ও বলা হয় । প্রতি বছর গ্রীষ্ম কালে রাজা হাতিতে চড়ে অথবা নদীপথে এই প্রাসাদে এসে থাকেন । এই প্যালেস ছাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত।
যেখান থেকে প্যালেস এ যাবার রাস্তা সেখানেই গাড়ি থেমে গেল । রাজার বাড়ি বলে কথা ,বেশ অনেকটা দুরেই গাড়ি থামাতে হয় । কটকটা রোদের মাঝে একটা সেতু হেঁটে পার হয়ে বসার জায়গা ।সেতুটা বেশ দীর্ঘ কিংবা হয়ত গরমের কারনে বেশি দীর্ঘ মনে হচ্ছিল ।
সেতু পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করার পর একটা বড় রুমে গিয়ে বসলাম । সেখানে দেখলাম সামরিক বাহিনীর লোকজন । ওখানে ব্যাগ চেক করার পর পিছনের দরজা দিয়ে যেতে হয় প্যালেস এ । আবার একসাথে অনেক কে যেতেও দিচ্ছে না । পাঁচ / ছয় জন করে যাচ্ছে আবার ওরা ফিরে আসার পর আরেক দল । আসলে আমরা গিয়েছিলাম জুন মাসে আর এসময়টা রাজা অখানে থাকেন তাই একটু বাড়তি কড়াকড়ি ছিল ।
যাইহোক যখন আমাদের পালা এল গিয়ে দেখি এখানে আরও একটা সেতু তারপর রাজার বাড়ি ।
ছাও ফ্রায়া নদীর তীরে এই প্রাসাদ । একেতো প্যাচপ্যাচে গরম তারপর একটু একটু ক্ষুধাও লাগছিল তাই বেশি দূর না গিয়ে আমরা দূর থেকেই বাড়ি দেখে ফিরতি পথ ধরলাম ।
এসময় বাড়ির ভিতর তো যেতে দিবেই না শুধু বাগানটা দেখা হল না । আবারও অনেকটা পথ হেঁটে গাড়িতে উঠলাম । ড্রাইভার এবার নিয়ে এল ছনবুরির শপিং মলে । বেলা তখন চারটা বেজে গেছে । শপিং মলে ঢুকে প্রথমেই আমরা চলে গেলাম দোতলায় । আগে পেট পূজা তারপর কেনাকাটা ।
মলটা বেশ বড় ,আমরা বেশ কিছু কেনাকাটা করে সন্ধ্যা সন্ধ্যা বের হয়ে এলাম । এবার যাব খাও খিয়াও ওপেন জু তে ।
রাত আট টার আগে জু খোলে না ।আমরা টিকেট কেটে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম । হঠাত জু এর একটা মেয়ে আমাদের ডেকে নিয়ে গেল আর কিছু না বলেই আপুর ঘাড়ে ছেড়ে দিল একটা সিভিট মানে গন্ধগোকুল। ওর তো ভয়ডর একটু কম তাই কোন সমস্যা নাই কিন্তু সে আমাদেরও গন্ধগোকুল এর সাথে ছবি তুলতে প্রায় বাধ্য করল ।
ছোট দুইটা দূর থেকে তুলেই খালাস কিন্তু আমার ঘাড়ে ওইটা ছেড়ে দিল । ইশ ।
যাইহোক আটটা নাগাদ আমরা ট্রামে চড়ে বসলাম জু ঘুরে দেখার জন্য । যেহেতু ওপেন জু তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হল ,জোরে কথা বলা যাবে না আর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতেও নিষেধ করল ।ফ্ল্যাশ এর আলোতে কোন প্রাণি কি রিঅ্যাকশন দেখায় কে জানে ।তবে চুপিচুপি মোবাইলে ছবি তোলা যায় ।
একঝাক পেলিকান এর দল পার হয়ে আমাদের ট্রাম ছুটে চলল আরও ভিতরে ।
একটু পর পর প্রায় থেমে যাচ্ছে যখনি কোন প্রাণি সামনে দেখা যাচ্ছিল । পাখির পর দেখা মিলল ইগুয়েনার । বিশাল গিরগিটি ।
হঠাত দূরে দেখি ছোট ছোট টর্চ এর মত কি যেন জ্বলছে । গাইড বলল চিতা। সবাই একটু নড়ে চড়ে বসলো ।
রাতের আঁধারে হরেক রকম প্রাণি আর পোকার ডাক ,কেমন যেন একটা ছমছমে ভাব । এরপর ট্রাম এসে থেমে গেল এক জায়গায় । এখানে দশ মিনিটের বিরতি । সবাই নেমে দেখি এক বিশাল কাঁচের খাঁচার ভিতর খুব কম করে হলেও গোটা বিশেক সিংহ । ভিতরে হালকা আলোয় দেখলাম দু এক টা বসে আছে আর বাকিগুলা কেমন এদিক সেদিক ঘুরছে আর গর্জন করছে । মনে হচ্ছিল এক্ষুনি খাঁচা ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসবে । নিষেধ সত্ত্বেও অনেকে ছবি তুলছিল আবার কথাও বলছিল ।
বেশ কিছুক্ষণ থেকেই বুঝতে পারছিলাম আমাদের মাঝে ফিসফাস হচ্ছে এবার তা একেবারে প্রকাশ্য রূপ নিল । আমাদের চারজনের দলের একমাত্র পুরুষ মানুষটি বেশ রাগের সাথেই বলল ,সবাই এমন স্টুপিডের মত কথা বলছে কেন ? কথা বলা তো মানা । চল চলে যাই । যদি সিংহ বের হয় কি হবে তাইলে ? তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ।
আপু হাসতে হাসতে বলল ,মানুষের গায়ে আধমরা তেলাপোকা ছেড়ে দিয়ে খুব তো বীরত্ব দেখাও ,আর এখানে এসে সব সাহস ফুসসসসসসসস।
যাক , যথা সময়ে ট্রাম এল আর আমরাও ফিরে এলাম হোটেলে ।পুরো রাস্তা আমার ভাইজান মুখ গোমরা করে বসে ছিল ।
হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে এগারোটা , রাতের খাবার অর্ডার করে ফ্রেশ হতে গেলাম । আজ আর বাইরে খাবার সময় নাই ,তাই রুমেই খানাদানা .................. ( চলবে)