টপিকঃ ছোট্ট জীবনে ভ্রমণ করা স্থানগুলো (পর্ব-১১)
পুরনো ঢাকার লালবাগে ঐতিহ্যের জোয়ারে গা ভাসাতে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। দেশের অন্যতম প্রাচীনতম ও ঐতিহাসিক নগরী ঢাকা ঘুরে দেখে এলাম ঢাকেশ্বরী মন্দির আর লালবাগ কেল্লা। দুটিই পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত।ঢাকা নামকরণের বিভিন্ন ঐতিহ্যের কথনে বিভিন্ন মতবাদ শোনা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কারণেই এই নগরীর নামকরণ ঢাকা করা হয়েছে এটিও একটি প্রচলিত মতবাদ।বর্তমানে ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দিরের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মূলত মন্দিরটি একটি দুর্গা মন্দির। যেখানে দুর্গার বিগ্রহের নিয়মিত পূজা করা হয়। আবার দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সময়কালীন পূজা আয়োজনের জন্য আরও একটি আলাদা মন্দির রয়েছে।সে মন্দিরে দুর্গাপূজার তিথিকালীন সময়ে সার্বজনীন দুর্গোৎসব পালন করা হয়।
প্রতিদিনের পূজার মন্দির:
সার্বজনীন পূজা আয়োজনের মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা:
এছাড়া রয়েছে চারটি শিব মন্দির। কিছুটা ডোমের মত চোঙাকার করে মন্দিরের নকশা নির্মিত। প্রত্যেকটি মন্দির আলাদা আলাদা। কিন্তু চারটি মন্দির একই সাথে সহাবস্থান করে।প্রতিটি মন্দিরের ভেতর রয়েছে আলাদা আলাদা করে চারটি শিবলিঙ্গ।
চারটি শিবমন্দির:
নিয়মিত পূজা মন্দিরের প্রবেশদ্বার:
মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে অনেক ফুলগাছ আর বাঁ পাশে রয়েছে একটি নয়নাভিরাম লেক।শিবমন্দিরের পাশে রয়েছে একটি বড় আকৃতির আমগাছ।ঢাকেশ্বরী মন্দির ঐতিহ্যগত ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন, এটি ১২০০ খ্রিস্টাব্দের সময় নির্মিত বলে শোনা যায়, যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
অত:পর ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘুরে পাড়ি জমাই পুরান ঢাকার আরেক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন লালবাগ কেল্লায়। কেল্লায় প্রবেশের জন্য রয়েছে দুটি গেট। প্রথম গেটটি তোরণাকারে চৌকো সেপ নিয়ে গঠিত। সেটি অবশ্য দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নয়। অপর গেটটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।পুরো এলাকাটিকে বিভিন্ন শৌখিন গাছ এবং ফুলগাছ দ্বারা সাজানো হয়েছে।
প্রধান ভবন:
কেল্লার প্রধান ভবনটি প্রতি দুটি করে গম্বুজ সম্বলিত স্তম্ভসহ প্রতি পাশে তিনটি করে ফটক ও গম্বুজ দ্বারা নির্মিত। কেল্লার চার পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সেই প্রাচীরগুলো আবার বিশেষ নির্মানশৈলীতে তৈরি, দেয়ালের পরতে পরতে আছে ছোট ছোট খোপ, এসব খোপের ভেতর বন্দুকযুদ্ধ করে শত্রুসেনাদের আক্রমণ করা হত।
প্রাচীরের একাংশ:
কেল্লার কেন্দ্রস্থলে দরবার হল রয়েছে।এছাড়া আছে দরবার হল ও মসজিদের মাঝে রয়েছে পরীবিবির সমাধি।দরবার হলে আরবিতে লিখিত বিভিন্ন শিলালিপি দেখা যায়।পরীবিবির সমাধিটি মার্বেল ও কষ্টিপাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে।রয়েছে ছোটখাট একটি মিউজিয়ামও।
কেল্লার ডানপাশে পেছন দিকে রয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী শিয়া মসজিদ। যার নির্মানশৈলীতেও লালবাগ কেল্লার ছাপ লক্ষ্য করা যায়, কেল্লার মতই ঈষৎ গোলাপী রঙে মোড়ানো মসজিদটি যার উপরে অবস্থান করছে কয়েকটি বিশালাকৃতি গম্বুজ। মসজিদটি অবশ্য কেল্লার জন্য সংরক্ষিত এলাকার বাইরে অবস্থিত।তবে সেটি মোগল সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের অংশ কিনা তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
মসজিদের গম্বুজের উপর আকাশের বর্নিল খেলার একটি চিত্র:
এইতো পুরান ঢাকার ছোট্ট সফরের ছোট্ট অভিজ্ঞতা, ফিরে আসবো আবার নতুন কোনো জায়গার সংকলন নিয়ে।