টপিকঃ আরো কতো অবনতি......??
আলো দেখি না আর মনের চোখে,
স্বপ্নগুলো ধূসর হয়ে আসে।
একসময় অনেক বড় বড় ভাবনা ভাবতাম,
দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম।
কিচ্ছু না, শুধু ছাই পড়েছে, স্বপ্ন হয়েছে ভস্ম,
চোখের সামনে মেধা হচ্ছে নি:স্ব,
আর শুধু নির্বাক মনে ভাসছে এ দৃশ্য।
কি করবো আর! এসব হজম করতে করতে
অভ্যেস হয়ে গেছে,তাই আর লাগেনা গায়ে।
ভাবিনি সে দিন আসবে, হয়ে যাব যাদুকর,
মোবাইল ফোনটা হবে যাদুর কাঠি, ফেসবুক হবে কারিগর।
পরীক্ষার আগের দিন ক্লাস ফাইভের বাচ্চাটাকে বলতে হবে,
এগুলাই পড়ো, এই প্রশ্নগুলোই পরীক্ষায় আসবে,
বাচ্চাটা পরীক্ষা দিয়ে এসে বেজায় খুশি হয়ে
শুধু দেখেছে যাদুর মত আগের রাতে যা ই পড়ে পরীক্ষায় তা ই এসে পড়ে।
নিষ্পাপ শিশুর বুদ্ধি হয়েছে, বুঝতে শিখেছে জিপিএ পাঁচ,
তার পেছনে ছুটতে হলে ধারতে হয় না বইয়ের আশপাশ।
ছোট্টবেলার উর্বর মস্তিষ্ক সাড়া দেয় স্মৃতিচারণে,
কিরে তোর মনে নেই ক্লাস ফাইভের কথা বোকা ওরে?
আরে তোর মা বাবা ভাই তোকে প্রশ্ন দিয়েছিল এনে,
আজ তুই বড় হয়ে উঠেছিস এসএসিতে,
তোর মা বাবা ভাই তোর প্রশ্নের খোঁজ দেবেনা এখন লজ্জাতে,
শিকড়ে তোর বিবেক পঁচে গেছে,
কিন্তু তুই জানতে পারিসনি, সব থেকে গেছে আড়ালে।
অনেক বড় হয়েছিস,এ যুগের ছেলেমেয়ে
একটা ফেসবুক আইডি খুলে নে।
কি ভাবছিস আজ?
তুই তো খুব বড় হয়ে গেছিস
বাবা মা যে তোকে ক্লাস ফাইভে প্রশ্ন বলে দিয়েছিল তা এখন বুঝে গেছিস।
তখন তোর বয়স হয়নি বিবেক বোঝার মতন।
আজ এইচএসসি,আরেকবার হাতের কাছে প্রশ্ন!
তবে এবার কেন বাবা বলে ওসব দেখিস না, পড়ে যা সব না হয়ে বিতৃষ্ঞ।
খালি খালি পড়তে বলো না বাবা,দেখোনা সবই তো আউট হয়ে যায়!
শুধু শুধু আমি খাটি, সবাই প্রশ্ন পায়।
বিনামূল্যে ছড়িয়ে পড়া সে ভাইরাসে,
ছেলেমেয়ের মুখের কৃত্তিম হাসিতে,
প্রহসনে মোড়ানো পরীক্ষায় মধু-চোনা এক কাতারে,
সেবন করে সর্বোচ্চ রেজাল্টের স্বাদ একই সাথে।
রাত এগারটা বাজে, দাদাকে মা বলতো অঙ্ক পরীক্ষার আগে,
বাবা আজ ঘুমো, ঠান্ডা মাথায় দিবি কাল অঙ্ক পরীক্ষা, উঠবি আগে ভাগে।
আজ দাদার চেয়ারে যখন আমি,
হাতে ফোন নিয়ে করি সল্ভের অপেক্ষা,
বিবেকের নিষ্পেষণে চাপা পড়ে বাবা বলে শুধু বলে সব পড়ে যেতে,
কথা কানে তুলি না, কে চায় শিওর প্রশ্ন পেয়ে বাকি পড়া পড়ে যেঁচে ভুলতে?
আজ রেজাল্টের দিন টেস্টে ফেল করা নাদিয়া ফোন দিয়ে,
জিপিএ ৫ পেয়ে, এমন খুশির দিন হয়না আর এর চেয়ে।
আমিও খুশি, আর ও ও খুশি, সবাই এক কাতারে পরে,
কে পড়েছে দিনে আধ ঘণ্টা, কে পাঁচ ঘণ্টা সে হিসেব গেছি ভুলে।
এ আর কি এমন ব্যাপার সবাই তো করেছে ভালো,
তাও মিষ্টি বিলি না করলে আত্মীয়রা মুখ করে কালো।
দু দিন পর নাদিয়া ফোন করে বলে আমায়, "জানিস তুই ওরে?"
লাগবে কিনা মেডিকেল প্রশ্ন, বিকোচ্ছে পার পিস করে।
কিহ! বলে বলি মাথা খারাপ কিনা? রাখবি কি তুই ফোন?
আরে বিশ্বাস হয় না তোর, আমার কথা আগে শোন।
সেদিন আর কোনো কথা না শুনে ফোন দিয়েছি কেটে,
রেজাল্টের দিন বলে নাদিয়া, বললাম তোকে নিতে,
আমার কথা পাত্তা দিলি না মোটে।
তবু নাদিয়া লিভার, কিডনি, লাঙ্কস চিনে ঠিকঠাক করেছে ডাক্তারি পাস,
সে পাশ হোক যেনতেন, তবুও এইচএসসি পাশ।
আজ নাদিয়ার ছোট্ট বাচ্চা ভিডিও গেমস খেলে,
কলেজ লাইফ পার করে সে শুধু হায় বর্ণমালা চেনে।
জিজ্ঞাসি কেন জাতির আজ হয়েছে এ অবস্থা,
বহমান ধারায় পিএসসি থেকে এইচএসসির আগের রাতে,
প্রশ্নপত্র দেয় ধরা সবার হাতে হাতে।
কি হবে পড়ে এতো আর, সর্বোচ্চ রেজাল্ট যাবে পাওয়া,
একে একে সে আশায় বারোটি বছর বই হয়নি ধরা।
আমার দেশের ভবিষ্যত মেডিকেল কলেজের ক্লাসে,
গত বারো বছরে পড়া হয়নি কিছু,টিচার শেখায় বর্ণমালা একে একে,
A for abdomen, B for Blood,
এভাবেই প্রতিটা ডাক্তার চেম্বার হয় নিরব মৃত্যুফাঁদ।
নিরক্ষর জাতির পথে এগোতে নেই বেশি বাকি,
যদি না থাকে কোন স্বপ্ন, না কোন ফল,উদ্দেশ্যহীন পথে কে হতে চায় পারি?
বাঘ বেড়ালের মূল্য যখন একই কাতারে পড়ে,
বিড়ালের তো একাদশে বৃহস্পতি,বাঘগুলো কুঁড়ে মরে।
বাঘের সমান মাংস বিড়াল না খেতে পেরে,
করে বাঘের ভোগ নষ্ট, নিজেও গিলতে না পারে।