টপিকঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিদেশ সফর : সাফল্য ও ব্যর্থতা
১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা হবার পর অর্জিত হয়েছে অনেক কিছু। সময়ের পরিক্রমায় ওয়ানডেতে গত ৫/৬ বছর ধরেই হয়ে উঠেছে ধারাবাহিক একটি দল।তবে আমাদের অধিকাংশ সাফল্যই ঘরের মাটিতে। ক্রিকেট দুনিয়ায় নতুন হওয়ায় আমাদের বিদেশ সফরের সুযোগ এসেছে কালেভদ্রে। অনেকে তাই বিদেশে আমাদের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তুলে।তবে বলব আমাদের সাফল্যের অনুপাত দেশ অনুপাতে বিদেশে কম নয় বৈকি।
ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাবার দেড় বছরের মাথায়ই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খালেদ মাহমুদের আগুনঝরা বোলিংয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬১ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ।ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সে বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকেও হারায় তারা।
২০০৫ ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ত্রিদেশীয় হলেও বাংলাদেশ শুধু অংশগ্রহণই করতে গেছে এরূপ ধারণা আমাদেরও ছিল। কিন্তু আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে গিলক্রিস্ট,ম্যাকগ্রা,পন্টিং,হেইডেনদের ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।কার্ডিফে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ কে ভুলতে পারে সে কথা। শচীন,দ্রাবিড়,লক্ষ্মন,গাঙ্গুলী,জহির খান,যুবরাজ কে ছিলনা সে ভারতীয় দলে। মাশরাফি ও রাজ্জাকের বোলিং তোপে তাসের ঘরের মত ভেঙে গেল সেরা ব্যাটিং লাইন আপ।আর ডাউন দ্য উইকেটে এসে তামিমের সেই ছক্কাগুলো।১৯২ রানের মামুলি টার্গেট ৫ উইকেটে চেজ করে বাংলাদেশ।অতপর সে গায়ানা আশরাফুলের সে ৮৭ রানের কাব্যে বল হাতে নায়ক রাজ্জাক। ১৮৪ রানে সাউথ আফ্রিকাকে অলআউট করে ৬৭ রানের জয়ের স্বাদ নিয়ে সুপার এইট খেলেছিল বাংলাদেশ।
২০০৮ অস্ট্রেলিয়া সফর: টেস্ট, ওয়ানডে সবগুলোতে পরাজিত হলেও শেষ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে তাদের মাটিতে ১৯৮ রানে বেঁধে ফেলেছিল বাংলাদেশ।তবে সে ম্যাচটি ৭৩ রানে হেরেই গেছে বাংলাদেশ।
একই সালে সাউথ আফ্রিকা সিরিজেও সবগুলো ম্যাচ হারলেও একমাত্র টি২০ টি তে মাত্র ৯ রানে হারে বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকার ১১৮ রানের জবাবে ১০৯ রান করেছিল বাংলাদেশ।
২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে প্রতিপক্ষকে টেস্ট সিরিজে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ করে ২-০ তে। সিরিজে সাকিব নেন ১৩ উইকেট আর তামিম করেন ১৯৭ রান।একইভাবে ওডিআই সিরিজেও ৩-০ তে স্বগতিকদের হোয়াইটওয়াস করে তারা।দুটি জয় ৩ উইকেটে ও একটি ৫০ রানে।
২০১০ ইংল্যান্ড সফর। ব্রিস্টলে আসে অবিশ্বাস্য এক জয় যেখানে ইংল্যান্ডের দেয়া ২৫০ রানের টার্গেট তাড়া করে ৬ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ।কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ও টেস্ট ২-০ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ।লর্ডসে টেস্ট সেঞ্চুরি পান তামিম আর এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।একইবছর নিউজিল্যান্ড সফর করে সবগুলো ম্যাচ হারলেও টেস্টে তাদের বিপক্ষে প্রথমবারের মত ৪০০ রান পার করেছিল বাংলাদেশ।
২০১২ শ্রীলঙ্কা সফর: স্মরণীয় এ সফরে টেস্টে সর্বোচ্চ ৬৩৮ রান করার পাশাপাশি মুসফিক পান প্রথম ডবল সেঞ্চুরি।টেস্ট সিরিজটা ১-০ তে হারলেও ওয়ানডে সিরিজটি ১-১ এ ড্র করে বাংলাদেশ।বৃষ্টির কারণে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
জিম্বাবুয়ে সফর:
২০০৬ : ৩-২ এ সিরিজ জয়
২০০৭ : ৫-০ তে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ
২০০৯ : ৪-১ এ সিরিজ জয়।
তামিম ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৪ রান করেন এবং বাংলাদেশ প্রথম ৩০০+ রান চেজ করে জয়লাভ করে এ সিরিজে।
২০১১ : টেস্ট সিরিজ ১-০ তে হার ও ওয়ানডে সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে হার
২০১৩: ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হার। টেস্ট সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র।
এছাড়া আয়ারল্যান্ড সফর ২০১০ ২ ম্যাচ ওডিআই সিরিজটি ১-১ এ ড্র হয়।
ভারতে এখনও সফরে যায়নি বাংলাদেশ।
মোটামুটি ১৮ বছরের ছোট্ট পথচলায় আমাদের বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা এটুকুই। বিদেশ সফরের সুযোগই এসেছে কম।কিন্তু কিছু নয় বরং পারফর্মেন্স আসলেই ছিল চোখে পড়ার মত।
বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাক।দেশ বিদেশ সবক্ষেত্রে সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক।আরো বেশি বেশি খেলা হোক। সুযোগ পেলে নিজেদের আমরা প্রমাণ করতে পারি। গর্জন হবেই।
সাবাস বাংলাদেশ।