টপিকঃ শ্যাম রাজার দেশে (চতুর্থ পর্ব )
রাজধানী ব্যাংকক
পরের দিন সকাল সকাল ব্যাগ বোচকা বেধে তৈরি হয়ে নিলাম । আজ যাব ব্যাংকক । নাস্তা খেয়ে বের হয়ে গেলাম ,গাড়ির বাবস্থা ট্যুর অপারেটর করেছিল তাই কোন চিন্তা ছিলনা । পাতায়া থেকে ব্যাংকক যেতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘন্টা । সুকুম্ভিতের হোটেল অ্যাম্বাসেডর এ আমাদের রিজারভেশন ছিল। সকাল সোয়া দশটা নাগাদ আমরা পউছে গেলাম হোটেলে । চেক ইন এর ফর্মালিটি সেরে সোজা রুমে চলে গেলাম । কেয়া আপু আমাদের সাথে না উঠে নিচেই থেকে গেল সারাদিনের প্যাকেজ ঠিক করার জন্য ।
আধা ঘন্টার মত বিশ্রাম নিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম ঘুরতে । আমাদের প্রথম গন্তব্য গ্র্যান্ড প্যালেস ।
কটকটে গরমে আমরা পৌঁছালাম গ্র্যান্ড প্যালেসে ।
সূর্যের আলোর তীব্রতায় সব কিছুই চকচক করছিল । আহা !! গল্প উপন্যাসে কত পড়েছি রাজার বাড়ির কথা। যেখানে চিলে কোঠায় থাকে রূপসী রাজকন্যা আর সিপাই রা সব দোর পাহাড়া দেয় । অচিন দেশের রাজারকুমার টগবগ টগবগ ঘোড়ায় চেপে আসে রাজকুমারীর খোঁজে । এখানে রাজার বাড়িটা বিশাল হলেও সিপাই গুলো সব আধুনিক আর না দেখলাম রাজা না তাঁর কন্যা বা পুত্র । শুধু পর্যটকের ছড়াছড়ি ।
তবে প্রাসাদটা বেশ চমৎকার। গাছপালা ,মন্দির আর নানা রকম ফুলের বাগান আছে এই প্যালেস চত্বরে ।
এই প্যালেস ১৭৮২ সাল থেকে অফিশিয়ালি থাই রাজার বাসভবন । কি সুন্দর কারুকার্যময় সব দেয়াল ।
ডিমন রা সব পিলার আর ছাদের খিলান ধরে দাড়িয়ে আছে ।
অনেকগুলো আলাদা আলাদা ভবন মিলেই গ্র্যান্ড প্যালেস । সব ভবনেই অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রহরী ।
এর মাঝেই আছে আবার এমারেল্ড বুদ্ধার মন্দির । এর দেয়ালের নকশা গুলো দেখার মত । মনে হয় যেন খুলে নিয়ে যাই । একদম মিনা করা গহনার মত ।
ভিতরে এমারেল্ড বুদ্ধার মন্দিরের কাছে এক চমৎকার মিউজিয়াম আছে । ঘুরতে ঘুরতে এক ভবনের ছাদে দেখলাম তিনটা শ্বেতহস্তী । আসল না নকল ।
ভিতরটা পুরো ঘুরে দেখার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার । কিন্তু সূর্য্যি মামার যন্ত্রণার বেশিক্ষণ থাকতে মন চাইছিল না । তারপরেও দেড় কি দুই ঘন্টা সময় নিয়েছিলাম আমরা ।
গ্র্যান্ড প্যালেস থেকে বের হয়ে আমরা হালকা স্নাক্স আর ড্রিঙ্কস খেয়ে নিলাম । পিপাসায় প্রাণ ছটফট করছিল ।
এরপর ছাও ফ্রায়া নদী ভ্রমনে গেলাম । ড্রাইভার বার বার জিজ্ঞাসা করছিল যে দেড় /দুই ঘন্টা সময় লাগবে ঘুরতে আমরা লাঞ্চ করব কি না । কিন্তু কেউ ক্ষুধা অনুভব না করায় পরে খাবার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
ছাও ফ্রায়া নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে ব্যাংকক শহর ,যেমন আমাদের বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা । আমরা যেখানে থামলাম সেখানে অনেকগুলা ইঞ্জিন চালিত নৌকা আছে যা পর্যটকদের ঘুরানোর কাজ করে থাকে । আমরা দুই ঘন্টার জন্য একটা নৌকা ভাড়া করলাম মানে টিকেট কাটতে হল আর কি। ছাওনি দেয়া নৌকা তাই রোদ মাথায় লাগছিল না ।
দুই পাশে উঁচু উঁচু সব ভবন আর নদীতে ঢেউ ও ছিল যথেষ্ট । নদীর বাতাস আর পরিবেশ দুটোই বেশ লাগছিল ।
দুই পাশে নদীর উপর ঘর। নদী থেকে দেখা যাচ্ছিলো রাজার গ্র্যান্ড প্রাসাদ ।
ছোট ছোট নৌকায় করে থাই মহিলারা বিক্রি করছিল নানা রকম পণ্য । ভাসমান বাজার দেখতে বেশ লাগছিল । এক নৌকা থেকে আমরা কিনলাম পানি আর ফ্রেশ কিউই ফল । আমার ভাই এই ফল পছন্দ না করলেও আমাদের তিনজন এর এটা বেশ লাগে খেতে ।
হঠাত এক জায়গায় দেখলাম নদীর পানি অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশ কাল। মাঝির কাছে জানলাম এটা ছাও খাল । এখানে এসে মিশেছে ব্যাংকক শহর এর বর্জ্য কিন্তু কোন দুর্গন্ধ পেলাম না । এক ফোটা আবর্জনাও চোখে পড়ল না।
ওদের সুয়ারেজ বাবস্থাপনা আর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বাবস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । ভাবলাম ইশ ! যদি আমাদের বুড়িগঙ্গা এমন হত !
ঘোরাফেরা শেষ করে নামলাম নৌকা থেকে । এবার লাঞ্চ করার পালা । যেখানে নামলাম তার উল্টো দিকেই আছে এক মুসলিম রেস্তরাঁ । যেখানে খেলাম ইন্ডিয়ান খানা । আমি যথেষ্ট ঝাল খাবার খাই তারপরও আমাদের সবার নাক মুখ লাল হয়ে চোখ দিয়ে পানি বের এল । ঝাল কাহাকে বলে ও কত প্রকার তা বুঝতে পেরে বের হয়ে এলাম । বেরিয়েই আইস ক্রিম ।
বেলা তখন চারটা পার হয়ে গেছে ,এবার গেলাম ওয়াট বা মন্দিরে । ওরা ওদের মন্দির মানে প্যাগোডা কে ওয়াট বলে। প্যাগোডা /ওয়াট এ পৌছাতে পৌছাতে বিকেল সাড়ে পাঁচটার কিছু বেশি ।
এসময় প্যাগোডা /ওয়াট বন্ধ হয়ে যায় বলে ভিড়ভাট্টা তেমন ছিল না ।
বাইরে কয়েকজন মহিলা অনেক সুন্দর সুন্দর অর্কিড ,পদ্ম গোলাপ সহ আরও নানা রকম ফুলের পশরা সাজিয়ে বসেছে ।
মন্দির এর পরিবেশ অনেক পরিচ্ছন্ন । চারপাশে মনে হয় যেন ফুলের মেলা।
আমরা ওখানে কিছুখন থেকে চলে এলাম লুম্ফিনি তে । এখানে ব্যাংকক এর বিশাল নাইট মার্কেট বসে । দোকানপাট তখনও খুলে নাই ঠিক মত । তবে ফুটপাথের দোকানীরা বসে গেছে ।আটটার মধ্যে সব দোকান খুলে গেল ।
কি নাই এখানে । ইচ্ছে হচ্ছিল সব কিনে নিয়ে যাই । কেনাকাটা আপাতত শেষ করে গেলাম রাতের খাবার খেতে । নাইট মার্কেটের পাশেই এক চমৎকার জাপানিজ রেস্তরাঁয় ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে টুকটুক করে হোটেলে ফিরলাম কারন নাইট মার্কেটে পৌঁছেই গাড়ি ছেঁড়ে দিতে হয়েছিল । ...................................................... (চলবে)