টপিকঃ শ্যাম রাজার দেশে তৃতীয় পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব http://forum.projanmo.com/topic50744.html
স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ
হোটেলে ফিরে দেখি কেয়া আপুর বেশ জ্বর । কিছু খেতে চাইল না শুধু বলল ওষুধ খেয়েছি,ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে । দুশ্চিন্তা নিয়েই গেলাম বিছানায় । বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়াটা ভাল লক্ষণ না ।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম বেশ দুশ্চিন্তা নিয়ে।কেয়া আপুর রুমে গিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম যে ভয়ের কোন কারন নেই , ওঁর জ্বর নাই । যাইহোক সেদিন প্ল্যান ছিল প্রাসাত সুত জা তুম বা স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ এ যাবার ।
সকাল এর নাস্তা খেয়ে একবারে বের হয়ে গেলাম স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ এর উদ্দেশে ।প্যাকেজ আগেই নেয়া ছিল হোটেল থেকে । কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম এবং এর প্রধান ফটকের সামনে নেমে যেতে হল ট্যাক্সি থেকে । টিকেট দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম ।মুল স্থাপনাটা এখান থেকে খানিকটা দূরে আর এই পথটুকু ওঁরাই নিয়ে যায় ঘোড়ার গাড়ি করে । ব্যাপারটা বেশ মজার লাগল ।
ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে দূর থেকে দেখলাম স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ । নামার পর দেখলাম সাইন বোর্ডে বৌদ্ধ দর্শন সম্পরকে লিখা ।
আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম তার দিকে ।ওখান থেকে স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ দেখলাম ।
এখান থেকে ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে নীচে ।সিঁড়ির মুখের দরজাটাও কাঠের আর কারুকার্যময়।
ওখানে একটা ছোট্ট জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে যার উপর কাঠের লগ ফেলা। চারপাশটায় কেমন বুনো বুনো ভাব ।
কাঠের সাঁকো পার হয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম ।সাগর তীরে বিশাল কাঠের তৈরি স্থাপনা ।চারপাশ থেকে হু হু করে সুমুদ্দুরের বাতাস বইছিল । সম্পূর্ণ স্থাপনাটাই কাঠের তৈরি ।
হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্মের দেবদেবী হল এর মুল থিম ।
কাঠের সুক্ষ কারুকার্য আর নানা রকম দেবদেবীর ভাস্কর্য খোদিত করা আছে ।
পুরো স্থাপনাটা উচ্চতায় প্রায় ২০৫ মিটার অর্থাৎ ৩৪৫ ফিট । খেমের স্থাপত্য রিতী অনুযায়ী এই স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে ।
পুরো স্থাপনাটি জুড়ে বৌদ্ধ আর হিন্দু ধর্মের দেবদেবী এবং কম্বোডিয়া ,চীন আর ইন্ডিয়ার পৌরাণিক কাহিনীর বিমূর্ত ভাস্কর্য দেখা যায় ।
তারপর আমরা মূল প্রবেশ পথ দিয়ে গেলাম মুল ভবনটার ভিতরে ।
এখানে নানা রকম কারুকার্য করা ভাস্কর্যের পাশাপাশি রয়েছে খোদাই করা বা এমনি বোর্ডে লেখা নানা ধরনের বানী।বেশীরভাগ গৌতম বুদ্ধের ।অনেক খানি সময় নিয়ে দেখলাম ।
ঘুরে ফিরে আর সাগরের নির্মল বাতাস খেয়ে এসে বসলাম ওখানেই এক রেস্তরায় । রেস্তরাঁটাও কাঠের তৈরি ।
আমি আগেই বলেছি থাইল্যান্ড এর প্রতিটি দর্শনীয় স্থানেই আছে কালচারাল শো । এ জায়গাও তার ব্যাতিক্রম না । খেতে খেতে দেখলাম ওদের নাচ আর এক বিশেষ ধরনের মার্শাল আর্ট ।
এর মাঝে আবার মার্শাল আর্ট এর দুই শিল্পী মাঝে মাঝে অতিথিদের নিয়ে যাচ্ছিল তাদের সাথে অংশ নেয়ার জন্য ,শেষ পর্যায়ে এসে হঠাত করেই একজন সাঁই করে কোপ বসাল আমাদের টেবিলে ।ভয়ে আর হতচকিত হয়ে ছিটকে পরার দশা । সবাই মজা পেয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল ।
অনেকটা সময় আমরা এখানে কাটালাম তারপর ফিরে গেলাম হোটেলে ।
দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম । এরপর বের হয়ে গেলাম টুকটাক শপিং এ । পরেরদিন আমাদের যেতে হবে ব্যাংকক ,তাই বেশি ঘরাঘুরি না করে সন্ধ্যার একটু পর পরই রাতের খাবার সেরে ফেললাম ।
রুমে ফিরে ব্যাগ ব্যাগেজ গুছিয়ে রাখলাম কারন সকাল সকাল পরের দিন আবার ব্যাংককের উদ্দেশে যাত্রা............ (চলবে)