টপিকঃ গহীন বান্দরবান: পর্ব-২
পর্ব-২ঃ থানচি
প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা চলার পর বাস যে জায়গায় এসে থামলো তার নাম বালিপাড়া বাজার। এতক্ষনে আমাদের থানচি পৌঁছে যাবার কথা। কিন্তু এখনো নাকি আরো ঘন্টাখানেক লাগবে। বাস দশ মিনিটের জন্য থামবে এখানে। আমরা নেমে গেলাম। একপাশে একটা চাপকল পাওয়া গেল। পানি সেরকম ঠান্ডা আর সুস্বাদু। হাত মুখে অনেক্ষণ ধরে পানি ছিটালাম, বেশ শান্তি লাগছিল, আর হাতের খালি বোতলগুলোতেও পানি ভরে রাখলাম ।
বালিপাড়া বাজার
অবশেষে বাস যখন থানচি বাজার এসে পৌঁছাল তখন প্রায় বেলা সাড়ে বারোটা পার হয়ে গেছে। সারাটা রাস্তা আশেপাশের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে গেছে টের পাইনি। থানচি বাজার নেমে প্রথম কাজ হচ্ছে গাইড ভাড়া করা। নওশাদ এর আগে একবার এসেছিল কেওক্রাডং, তখন যে গাইড ছিল তার নাম্বারে ফোন দিল। গাইডের নাম্বার বন্ধ। ব্যাপার হচ্ছে এখানে শুধু রবি আর টেলিটকের নেটওয়ার্ক আছে। এখন কি নেটওয়ার্ক সমস্যা না অন্যকিছু, বুঝতে পারছিলাম না।
আশেপাশে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম কেউ গাইড আছে নাকি। একজনকে পাওয়া গেল, বাঙ্গালী গাইড, যদিও কথাবার্তায় খুব সুবিধার মনে হলোনা। এখন পিক সিজন হবার কারনে বেশিরভাগ গাইডরা অলরেডি বিভিন্ন গ্রুপের সাথে বেরিয়ে গেছে। পাহাড়ী আরেকজনকে পাওয়া গেল। পরে বোঝা গেল, এরা আসলে সবাই মিলে মিশেই কাজ করে।
গাইডের সাথে কথা বার্তা বলে চুড়ান্ত করলাম, আমরা মোট তিনদিন থাকবো, যাব নাফাখুম, আমিয়খুম আর সাথে সাতভাইখুম নামে কি জানি একটা জায়গা আছে সেখানে। আমরা টোটাল ছয়জন, সাথে সবসময় গাইড একজন থাকবে। দশ হাজার টাকা চাইলো, যার সাথে গাইডের থাকা খাওয়ার খরচ আলাদা যোগ হবে। সাধারনত যেখানেই থাকি, জনপ্রতি দুইশো টাকা করে লাগবে থাকার জন্য। অবশেষে আট হাজার টাকায় চুক্তি হলো, বেশি দরাদরি করার অপশন ছিলনা যেহেতু এমনিতেই গাইড পাওয়া যাচ্ছে না।
রীমা Tea স্টল, থানচি বাজার
গাইডের কথামতে আমাদের কিছু কেনাকাটা করতে হবে। তিনদিন খাবার জন্য চাল, ডাল, তেল, মশলা, লবন আরো কত কি। রান্না করার জন্য তিনদিনে কি পরিমান জিনিসপত্র লাগতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের কারো কোনরকম ধারনা নেই। তারেক বাসায় ফোন দিয়ে কি কি লাগতে পারে তার ব্যাপারে ধারনা নিতে লাগলো। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম যে তারেক আমাদের প্রতিজন হিসেব করে চাল ডালের কেজি বের করছে আর দোকানদারকে বলছে দেবার জন্য। অবশেষে সবার সাথে কথা বলে জিনিসপত্র কিনে নিলাম।
বাসায় ফোন দিয়ে জানালাম যে আগামী তিনদিন নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবো, শুধু শুধু যেন টেনশন না করে। বান্দরবানে মশার উৎপাতের কথা আগে থেকেই শুনেছি তাই আমরা কয়েকজন ওডোমস ক্রিম আর সাথে আর কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম।
পায়ে স্নিকারস পরে গিয়েছিলাম কিন্তু গাইড বললো এটা পরে পাহাড়ে উঠা যাবেনা, আলাদা প্লাস্টিকের জুতা পাওয়া যায়। সেটাও কিনে নিলাম। আর অবশেষে কড়া রোদ থেকে বাঁচার জন্য একটা হ্যাট। এরকম সাজ সাজ রব দেখে নিজের কাছেই বেশ এক্সাইটিং লাগছিল। তখনও তো বুঝিনি আগামী তিনটা দিন কি পরিমান এক্সাইটমেন্ট আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
থানচি বাজার
গাইড আমাদেরকে একটা ফরম দিল, এখান থেকে ভেতরে কোথাও যেতে হলে আর্মিদের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। আমরা সবাই আমাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্ব্বার, অভিভাবকের ফোন নাম্বার দিয়ে ফরম পুরন করলাম। গাইড বললো যদি জিজ্ঞেস করি কই যাচ্ছি, আমি যেন বলি নাফাখুম। বাকী জায়গাগুলোর কথা শুনলে মাঝে মাঝে অনুমতি দিতে ঝামেলা করে। আমি আর গাইড সহ অনুমতি নিতে গেলাম। খুব একটা ঝামেলা হলোনা। তারা শুধু একটু অবাক হলো শুনে যে আমরা সবাই চাকুরীজীবী। ঈদের পরে এতদিন ছুটি কিভাবে ম্যানেজ করলাম, আমাদের একেকজনের বাড়ী একেক জায়গায় তারপরও আমরা একসাথে কিভাবে হলাম, এইসব হাবিজাবি।
গাইডের সাথে কথা হলো, প্রথমে আমরা যাব রিমাক্রি। সেখান থেকে যাব নাফাখুম তারপর অন্যান্য জায়গায়। রিমাক্রি যাবার জন্য ইঞ্জিন বোট ভাড়া করতে হলো, এখানেও প্রায় তিন হাজার টাকা লাগলো। সাথে একছড়ি কলা কিনে নিলাম। বান্দরবান এসেছি আর কলা না খেয়ে থাকবো, সে কি করে হয়!
থানচি বাজারে নরসুন্দর
চলবে...