টপিকঃ আমার আম্রিকা যাত্রা
আমি তখন আবু ধাবির একটা বিমান বন্দরে ট্রানজিটে আটকা পড়ে আছি। দেশের কথা ভাবছি, বাবা মায়ের কথা ভাবছি। গন্তব্য এমেরিকা। লস এঞ্জেলস।
ঢাকা থেকে প্লেনে উঠার সময় মনে হয়েছিল ঢাকা বিমান বন্দর "বিরাট বড়" !! ৩ টা টারমিনাল! কাস্টমস পার হতেই ২ ঘন্টা লাগে !!!বা বা গো !!
পুরাটুকু মনে নাই তবে এইটুকু মনে আছে যে ইমিগ্রেশন অফিসার চশমার ফাক দিয়ে "জ্ঞেয়ানি" দৃষ্টিতে ২ মিনিট চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
যাইহোক আবুধাবি নেমে টিকিটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম টারমিনাল নাম্বার ৬৪ আর গেট নাম্বার ১৪ ! তখন ঢাকা বিমান বন্দর আসলেই কত বড় সেটা সম্পর্কে একটা পরিস্কার ধারণা পেলাম।
প্রায় ১ ঘন্টা হেটে নিজের গেটের সামনে বসেতেই দেখলাম পাশের ভদ্রলোকের হাতে একটা শপিং ব্যাগ যেটায় বড় বড় করে লেখা, " আল্লার দান বিপনি বিতান" বুঝলাম ভায়েও আমার দেশি। কথা বলে জানতে পারলাম এই ব্যাগের আদি বাসস্থান নিউ মার্কেট ! আরো জানতে পারলাম তিনি নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন। ইদের ছুটিতে দেশে গেছিলেন। এখন নিউ মার্কেট থেকে কেনা কাটা করে আম্রিকা ফেরত যাচ্ছেন।
কিছুক্ষন পর একটা বাস এসে থামল গেটের সামনে। এ কি ! বাসে করে আম্রিকা নিবে নাকি ! না বাসে করে পেলেন পর্যন্ত নিবে। যানালেন আল্লার দান বিপনি বিতান ব্যাগ বহনকারী ভদ্রলোক।
আবুধাবি এয়ারপোর্টের একাংশ
প্রতিটা বাসে বা ট্রেনে একটা করে পিচ্চি থাকবে যে সারা রাস্তায় একটু পর পর কাঁদবে। পেলেনে উঠেও পাশের সিটে এইরকম একটা বাচ্চা পেলাম, যে একটু পরপর কোন কারন ছাড়া গলা ফাটিয়ে ' দে দে দে' বলে চেচাচ্ছে। মনে পড়ে গেলো ঢাকা থেকে আবু ধাবির প্লেনেও এইরকম একটা বাচ্চা ছিল। যার বাবা মা একটু পর পর " চোপ!! গাড্ডা আসবে" বলে বাচ্চাকে ভয় দেখানোর চেস্টা করছিল। "গাড্ডা" কি জিনিষ তা এখনও জানতে ইচ্ছা করে!
যাইহোক। পেলেনের সিট সুবিধার মনে হল না। হাটু লেগে যাচ্ছে সামনের সিটে। এর চাইতে তো সোহাগ ক্লাসিক ভালো !!! চিৎকাইৎ হয়ে ঘুমানো যায় !
পাশের সিটে বসছে এক ইন্ডীয়ান ছেলে। গন্তব্য নু ইয়র্ক ! একটু পরেই একটা বিরাট হা করে ঘুমিয়ে গেলো ! আমি কোন ভাবেই ঘুমাতে পারলাম না। প্লেনের সিট সত্যিই অনেক ছোট মনে হতে লাগলো !
আবুধাবি থেকে এসে নামতে হল জার্মানিতে। খুবই ছোট একটা এয়ারপোর্ট ! এইতই ছোট যে ম্যাক ডোনাল্ড খুজতে গিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বের হয়ে গেলাম কখন টেরই পেলাম না !
ড্রাসেলডরফ এয়ারপোর্ট, জার্মানি
এখানে ১১ ঘন্টা বসে থেকে পরবর্তী প্লেনে উঠলাম। মাথায় একটা জিনিসই কাজ করতেসিলো ঘুমাতে হবে। গত দুইদিন ঘুমাতে পারি নাই, প্লেনেও দেশের শোকে ঘুমাতে পারি নাই। এখন না ঘুমালেই না! জার্মানির এই প্লেনের সাথে আগের দুইটা প্লেনের পার্থক্য হল ঢাকা থেকে আবুধাবির প্লেনটা অনেক বড় ছিল, আবুধাবি থেকে জার্মানি পর্যন্ত প্লেনটা আরেকটু ছোট আর এই প্লেনটা আরো ছোট !!! আমার মনে হল মিনি বাসের সমান! তবে আগের দুইটা প্লেনের সাথে এইটার একটা মিল ঠিকই পাওয়া গেল যে এখানেও একটা পিচ্চি আছে যেও বিদেশি ভাষায় গলা ফাটিয়ে চিল্লাচ্ছে। বিদেশি ভাষা হলেও বুঝতে অসুবিধা হল না সেও "দে দে দে" বলে তার ভাষায়ই চিল্লাচ্ছে।
আসেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সব সাদা ! কোন ব্রাউন কালার নাই। ! আমি একলাই কালা! এই প্লেনের ড্রাইভারও খুব ডেয়ারিং টাইপের। হঠাৎ করেই ফুলস্পিডে একটা দৌড় লাগিয়ে আকাশে উঠে গেলো। আগের দুইটা প্লেনে খুব ভদ্র ভাবে স্পিড বাড়িয়ে ধিরে ধিরে ট্যাক্সিং করিয়ে প্লেন হাওয়ায় তোলে। আর এই বেটার কোন ভয় ডর নাই ! ডানে বামে এমন ভাবে সে মোচড়ানো শুরু করল মনে হল রোলার কোস্টারে উঠেছি ! একটু সাহস এপেতেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সব যাত্রি নরমালই আছে। তার মানে এয়ারবার্লিন নরমালি বেয়াদপ! এরা অভস্থ্য!
যাইহোক এটা আমার সবচেয়ে বড় ফ্লাইট ছিল এই যাত্রায়! প্রায় ১৪ ঘন্টা! পুরো সময় চুপচাপ বসেছিলাম। ৩ টা প্লেন মিলিয়ে টোটাল ৩২ ঘন্টা বসে ছিলাম প্লেনে। ঘুমানোর অনেক চেস্টা করেও ঘুমাতে পারলাম না। সারা জীবন একা রুমে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে অভ্যাস! আর প্রায় খাড়া এই সিটে তাই ঘুমই আসলো না। আমার লাইফের সবচাইতে বিরক্তিকর ১৪ টা ঘন্টা কিভাবে যে পার করেছি আল্লাহই জানে। এই জার্মানির লোক গুলা এত অমিশুক যে আমার কথা বলারই ইচ্ছা হল না। নিজেকে রেইসিজমের শিকার বলে মনে হল। পিট খাড়া করে এক ভাবেই ১৪ ঘন্টার প্রতিটা সেকেন্ড গুনছিলাম যে কখন শেষ হবে ! বাসায় গিয়ে বালিশ চেপে ধরে ঘুমাতে খুব ইচ্ছা করছিল
চলবে...