টপিকঃ বিভ্রম
ডুবে যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলো বড়ই সহজ। যেখানে ডুব দেয়ার সাধ... নিজেকে কষ্ট করে সেখানে নিয়ে যাওয়া। স্থান কাল ভেদে ডুবে যাওয়ার গতি নির্ধারণ হয় শুধু। কঠিন থেকে কঠিনতর হলো উঠে আসা।
ধুরো... কি লিখছি এইসব? কালই এসাইনমেন্টটা সাবমিট করার কথা। অথচ আমি 'অভ্র দেব'এর সেবায় ব্যস্ত! কাজে মন দেয়ার প্রয়াস পাই... মন বসে না! দূরে একটা কোকিল ডাকছে!
দুপুরের পর পর অফিসটা একটু ঝিমিয়ে আসে। থাই সহকর্মী কানে হেডফোন লাগিয়ে ইউটিউবের চ্যানেল থেকে চ্যানেলে ঘুরে বেড়ায়, অনেকগুলো ফলোয়ার সুজিন্দা'র... বেশ জনপ্রিয় এক মিউজিক চ্যানেলের এডমিন সে। লাঞ্চের আগে আগে স্মোকজোনে দেখা... বলে কি, "গিটার বাজিয়ে একটা গান করবা। সেটা অবশ্যই হাইরেজুলেশনে ভিডিও করবা। আমাকে দাও... আমি ইউটিউবে বুলশিট আপলোড করলেও হাজার হাজার লাইক পরবে!"
আমি হাসি... "বাডি, আমার গান... হিউম্যান শিট! একটা লাইকও পাবা না!"
হতাশ হয় সুজিন্দা... "নো ম্যান! ইউ আর টোট্টালি হোপলেস!"
আমার টেবিলের ঠিক উল্টোদিকে বসে কোরিন... ছোটখাটো এক চাইনিজ তরুণী। বুঝি, আমাকে পছন্দ করে... সারাটাদিন ডেস্কের আড়ালে একটা ছোট্ট আয়নায় তাকিয়ে থাকে সে... একটু লিপস্টিক, মেকআপ ব্রাশের আলতো আঁচড়ে সুশ্রী চেহারাটা আরোও আকর্ষণীয় করার প্রয়াসে ব্যস্ত। চোখাচোখি হতেই বলি... "ঠোঁট দুটো এমনিতেই মাথা খারাপ করে দেয়। ওতে আর অতিরিক্ত অস্ত্র যোগ করার কি দরকার?"
মিষ্টি হাসি কোরিনের, আবার রূপচর্চায় হয় মনযোগী!
আমি মনিটরে চোখ রেখেই বলি, "তোমার পেপার নাইফটা দাও।"
কোরিন জিজ্ঞেস করে, "কেন? তোমারটা কি হলো?"
উত্তরে বলি... "আসলে হয়েছে কি, হৃদয়টা কেটে তোমার পায়ে নিবেদন করতে চাই! বহুদিন ধরে কাটাকুটি করতে করতে আমারটায় তেমন ধার নেই আর। মেয়ে, তোমার প্রেমে পরে গেছি!"
কপট চোখ পাকায় হলুদ মেয়েটি, "আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, ম্যান!"
আমি আড়মোড়া ভেঙে চেয়ার ছাড়ি, "মিথ্যাচার যখন করছো, বুঝতে হবে তোমার ছুড়িটা দেয়ার সাহস নেই! ঠিক আছে, দিবা না তো? তাহলে আমি বরং একটা নাইফ কিনেই আনি!"
বস বেরিয়ে যান লাঞ্চব্রেক শেষ হবার ঘন্টা বাজলে, তারও ঘন্টাখানেক পর আমি একটা সিগারেট হাতে লবিতে। পেছনের জানালায় তখন রোদ্দুর, অদূরে জল চিকচিক সমুদ্র। আচ্ছা, এই সমুদ্রের গভীরতা কি চারুলতার চোখের চাইতেও বেশি?
দূরে কোথাও একটা কোকিল ডাকছে... কু... কু... কু...!! কোকিলের ডাকের সাথে উদাসীনতার একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে! এই মূহুর্তে আমি ঠিক আমার মধ্যে নেই! দেশের কথা মনে পড়ছে! বাংলাদেশে এখন শীতকাল, আরোও মাসখানেক পর কোকিল ডাকবে সেখানে। আচ্ছা, গভীর চোখের মেয়েটি কি করছে এখন? চারুলতা?? আমি হারিয়ে যাই... গভীর একজোড়া চোখের মায়াজালে! হঠাৎ পেছনের দরজা খুলে যায়... কোরিন একটা সিগারেট হাতে পাশে এসে দাঁড়ায়। মদির চাহনি তার চোখে, "কবি, কি করো? ছুড়ি কেনা হলো??"
কে??কোরিন? নাকি চারুলতা?
আমি কোরিনের মুখোমুখি হই... কিংবা চারুলতার!
দূর থেকে কু... কু... ডাক ভেসে আসে।
কোকিল একটা বজ্জাত পাখি!!
যদি না আসো... সুস্বাগতম!!