টপিকঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট স্থায়ীভাবে দূর করার জন্য একটি প্রস্তাব
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট স্থায়ীভাবে দূর করার জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে “নির্দলীয় নির্বাচিত সরকার” ব্যবস্থা
ভূমিকা:
সরকার পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশে প্রায় প্রতি পাঁচ বছর পর পর কয়েকশ লোককে জীবন দিতে হয় এবং হরতাল-অবরোধ-জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের জন্য দেশের অর্থনীতির হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়৷ আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে সরকারই ক্ষমতায় আসে না কেন তাতে দেশের কোনো উন্নতি হয় না৷ এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকার পরিবর্তন করে অতীতে কোনো লাভ হয়নি, এবং ভবিষ্যতেও কোনো লাভ হবে না৷ যেটা করতে হবে সেটা হলো “সরকার ব্যবস্থা” পরিবর্তন করতে হবে৷ এমন একটা সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে যেখানে দুর্নীতি বা লুটপাটের কোনো সুযোগ থাকবে না৷ সেরকম একটা সরকার ব্যবস্থা হতে পারে “নির্দলীয় নির্বাচিত সরকার” ব্যবস্থা৷
“নির্দলীয় নির্বাচিত সরকার” ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
১. নতুন এই সরকার ব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকবে না৷ অর্থাৎ, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না৷ সবগুলো রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ-সংগঠন ও ছাত্র-সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যাবে৷
২. সংসদ পরিচালনার জন্য ৩০০টি নির্বাচনী এলাকা থেকে ৩০০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে আসবেন৷
ক) একজন সৎ ও যোগ্য লোককে সংসদ সদস্য পদে ভোট দেয়ার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে৷
খ) সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যে কোনো প্রভাব/দুর্নীতি প্রতিহত করার জন্য সরাসরি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
গ) যেহেতু কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না, তাই রাজনৈতিক দলের কলাগাছদের নির্বাচিত হয়ে আসার কোনো সুযোগ থাকবে না৷
৩. এই সংসদ সদস্যরা সংসদে বসে আলাপ-আলোচনা করে এবং তারপর সরাসরি ভোট দেয়ার মাধ্যমে ৩০ জন মন্ত্রী ও একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন৷
ক) প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের জন্য সেই মন্ত্রণালয়ের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কয়েকজন সৎ ও যোগ্য লোককে সাংসদরা মন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করবেন এবং মনোনীতদের সম্পর্কে সংসদে আলাপ-আলোচনার পর সাংসদরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সেই মন্ত্রণালয়ের জন্য মন্ত্রী নির্বাচিত করবেন৷
খ) পরবর্তীতে কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অদক্ষতার অভিযোগ উঠলে যে কোনো সংসদ সদস্য সেই মন্ত্রীকে ইমপিচ করার জন্য সংসদে আবেদন করতে পারবেন এবং সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করার পর সংসদ সদস্যরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সেই মন্ত্রীকে ইমপিচ করতে পারবেন৷
গ) এই প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷
৪. মন্ত্রী পরিষদের ৩১ জন সদস্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করবেন৷ মন্ত্রী নির্বাচনের জন্য সাংসদরা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ করার জন্য মন্ত্রীরাও সেই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন৷
এই সরকার ব্যবস্থার সুফলসমূহ:
১. বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের প্রধানই সর্বেসর্বা৷ সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেয়া থেকে শুরু করে, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য এবং রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সবগুলো পদেই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রধান নিয়োগ দিয়ে থাকেন৷ তাই পদ্ধতিগত কারণেই রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়ে ওঠেন একজন স্বৈরাচারী৷ এখানে জবাবদিহিতির কোনো অস্তিত্ব নেই৷ নতুন সরকার ব্যবস্থায় ত্রিমুখী জবাবদিহিতার কারণে কারোরই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ থাকবে না৷
২. ত্রিমুখী জবাবদিহিতা:
ক) মন্ত্রীরা সরাসরি সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে৷ দুর্নীতি করে কোনো মন্ত্রীই পার পাবে না৷
খ) রাষ্ট্রপতি সরাসরি মন্ত্রীপরিষদের কাছে জবাবদিহি করবে৷ তাই রাষ্ট্রপতির স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ থাকবে না৷
গ) সংসদ সদস্যরা যাতে নিজেদের স্বার্থে (এবং জনগণের স্বার্থ বিরোধী) কোনো আইন পাস করতে না পারে তা রাষ্ট্রপতি দেখবেন এবং এ ধরনের যে কোনো আইন তিনি প্রত্যাখ্যান করবেন৷ আর যে কোনো সাংসদের যে কোনো দুর্নীতি সম্পর্কিত মামলা সরাসরি রাষ্ট্রপতির তত্ত্বাবধানে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ প্রত্যেক সাংসদ তার কর্মকাণ্ডের জন্য সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করবেন৷
ঘ) সাংসদরা রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ করতে পারবে না (এই ক্ষমতা শুধু মন্ত্রী পরিষদের থাকবে) তাই তারা রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করবে৷
ঙ) মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ করতে পারবে, তাই তারা রাষ্ট্রপতির কাছে নয়, বরং সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে৷
চ) সাংসদরা মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদেরকে ইমপিচ করতে পারবে, তাই তারা মন্ত্রী পরিষদের কাছে নয় বরং রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করবে৷ অর্থাৎ জবাবদিহিতা হবে ত্রিমুখী৷
এই ত্রিমুখী জবাবদিহিতার কারণে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে৷ সংসদ সদস্য, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও রাষ্ট্রপতি - কেউই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ থাকবে না৷
৩. যেহেতু কোনো রাজনৈতিক দলই থাকবে না, তাই হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন কিছুই থাকবে না৷ দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য এরচেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে? এমন একটা বাংলাদেশের কথা কল্পনা করা যায় যেখানে হরতাল-অবরোধ, মিছিল, মিটিং, জ্বালাও-পোড়াও নেই?!
৪. রাজনৈতিক দলের সাথে সাথে, সবগুলো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সংগঠন ও ছাত্র-সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা হবে৷ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এরচেয়ে বড় সুখবর আর কিছু হতে পারে?
৫. যেহেতু কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তাই সরকারকে আর বিরোধী দলকে মোকাবেলা করার পেছনে ১ মিনিটও সময় ব্যয় করতে হবে না৷ তারা পুরো সময়টাই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজে লাগাতে পারবেন৷
৬. পুলিশ, বিজিবি সহ কোনো বাহিনীকেই আর সরকারি দলের লেজুড়বৃত্তি করতে হবে না৷ তারা স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারবে৷ আর পুলিশের জবাবদিহিতাও অনেক বেড়ে যাবে কারণ ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-সাংসদদেরকে খুশি রেখে, চাঁদার টাকার ভাগ দিয়ে দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না৷
৭. সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধাই একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য নয়৷ তাই সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি অনেকাংশেই দূর হবে এবং আমরা আমাদের সব মেধাবীদেরকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দেখার আশা করতে পারি৷
৮. দেশের প্রতিটি খাতেই সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে৷ প্রতি পাঁচ বছর পর পর আমরা শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোট দিতে পারবো!
-----------------------------------
এই সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?