টপিকঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ এর নমুনা
ম্যাচ শুরু হওয়ার ১৬ ঘণ্টা আগেও অন্ধকারে দুই দল। তৃতীয় ওয়ানডে দিবারাত্রিরই হবে নাকি দিনের আলোয়? নাকি এক দিন পিছিয়ে ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, জানতেন না বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বসানো নতুন ফ্লাডলাইটের 'শুভ মহরত'টা এমনই উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছিল সবাইকে। অবশেষে গতকাল রাত সোয়া ৮টায় স্টেডিয়ামে এসে চূড়ান্ত রায় দিলেন মাইক্রোম্যাঙ্ ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। না, ইংল্যান্ডের সাবেক এ ওপেনার নন, তাঁর অনুমোদন পেয়ে আজকের দিবারাত্রির ম্যাচ সকাল ৯টায় শুরুর ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও ট্যুর অরগানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
মিরপুরের ফ্লাডলাইট নিয়ে কয়েক দিন ধরেই স্নায়ুচাপে ভুগছিল বিসিবি। তবু সফরসূচি মেনে খেলা পূর্বনির্ধারিত সময়ে আয়োজনের ব্যাপারে 'অভাবিত' আত্মবিশ্বাস দেখা গেছে আয়োজকদের মধ্যে। সে আত্মবিশ্বাস অবশেষে কাল সন্ধ্যায় চুরমার হওয়ার পর গাজী আশরাফের হৃদয়ভাঙা ঘোষণা, 'আমরা এখন দেখছি, আলোটা অর্ধেক জ্বলেছে। তবে সারা মাঠের যেখানে যে পরিমাণ আলো থাকার কথা, সে পরিমাণ আলো নেই। ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এ আলোতে খেলা আয়োজন যুক্তিযুক্ত হবে না। দল দুটি তা মেনে নিয়েছে। এ কারণেই আগামীকাল সকাল ৯টায় খেলা শুরু হবে।' ফ্লাডলাইটের প্রস্তুতি নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ম্যাচের আগের রাতে কেন এ সিদ্ধান্ত? এ প্রশ্নে আয়োজক কমিটি প্রধানের উত্তর, 'আসলে আমরা আমাদের চেষ্টা করেছিলাম। আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে ফ্লাডলাইট সময়মতো জ্বলবে। যতটুকু আলো প্রয়োজন, ততটুকুই পাওয়া যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হচ্ছে না। কিছু অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার আছে।এক দিন আগে থেকে কাজ শুরু করলে হয়তো সেটি হয়ে যেত।'
কিন্তু ফ্লাডলাইট স্থাপনের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পরিচালক রিজওয়ান মুস্তাফিজের জোর দাবি, 'আমাদের মাত্র ১০ দিন আগে জানানো হয় যে দিবারাত্রির ম্যাচ হবে। আমরা তখনই নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু বিসিবি তাতে কান দেয়নি।' ঠিকাদারের এ বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন গাজী আশরাফ, 'আমি অরগানাইজিং সেক্রেটারির ভূমিকা পালন করছি। আমার যতটুকু জানা ছিল, কাজটি এরই মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা। অনেক দিন আগেই এ বিষয়ে কথা হয়ে ছিল। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তখন থেকেই আমরা জানি যে তৃতীয় ম্যাচটি ফ্লাডলাইটে করব।' ফ্লাডলাইট কাল জ্বলেছে ঠিকই। তবে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় জ্বলে ওঠা বাতি আলোকিত করে শুধু ৩০ গজ পর্যন্ত।
ঠিকাদারকে দিয়ে যখন কাজ করানো হয়েছে, তখন সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় বুঝিয়ে দেওয়ার নিশ্চয় একটা সময়সীমা ছিল। রিজওয়ান মুস্তাফিজ জানিয়েছেন, 'নভেম্বরের কোনো একটা তারিখ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আমরা আবেদন করেছি। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছি। কারণ যে কম্পানির ফ্লাডলাইট, সেই অ্যাবাকাসের বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় আসবে ১২ ডিসেম্বর। অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে এটা ঠিক করতে।' ডেডলাইন নিয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লিপু, 'এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু এখন কিছু বলতে পারছি না। যারা টিকিট কেটেছেন, তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, খেলাটি দুপুর ১টার বদলে সকাল ৯টায় শুরু হবে।'
ফ্লাডলাইট চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পর্কে বিসিবিও অবগত নয়। কারণ এ কাজের নির্দেশদানকারী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বরাবরই সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে আবেদন গৃহীত হওয়ার বিষয়ে কোনো পক্ষই জানে না! জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহমান একবার এসে বলে গেলেন, 'আমরা সারা রাত কাজ করে হলেও লাইট ঠিক করব। কাল (আজ) ডে-নাইট ম্যাচই হবে।' ক্রিস ব্রডের 'রায়' জানার পর অবশ্য মিস্টার রহমানকে স্টেডিয়াম এলাকায় দেখা যায়নি!
এ ঘটনার দায়ভার শেষমেশ বর্তাচ্ছে বিসিবির কাঁধেই। বিশ্বকাপের দুই মাস আগে ফ্লাডলাইট নিয়ে এ কাণ্ড জানবে পুরো বিশ্ব। সঙ্গে গাঁটের টাকা গচ্চা যাওয়ার ব্যাপারও আছে। এমনিতেই পাওনা বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করছে সম্প্রচার-স্বত্ব কেনা নিমবাস। ম্যাচের সময় বদলে যাওয়ায় বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে সাদা চোখে ম্যাচ চার ঘণ্টা এগিয়ে আনায় এ সময়টুকুর 'এয়ার টাইম' বাড়তি কিনতে হবে বিসিবিকে। তার পরও ঝামেলা আছে। পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করে এ চার ঘণ্টা নিও টিভি দেখাবে কি না, কাল সাড়ে ৯টায়ও এ নিয়ে দেনদরবার করছিলেন বিসিবির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন।
সুত্র ঃ কালের কণ্ঠ