টপিকঃ ISIS এর সাথে জীবন যাপন
গতকাল বিকেলে আইএস এর পঞ্চাশটার মতো গাড়ি লিবিয়ার সিরত শহর জুড়ে র্যালি করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই আইএস সিরত দখল করে নিয়েছে এটা শুনছিলাম। কিন্তু তখন পর্যন্ত ওরা শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখল নিয়েই চুপচাপ ছিল। আজই প্রথমবারের মতো নিজেদের অস্তিত্ব প্রদর্শন করল। সমুদ্রের পাড়ের রাস্তাটা দিয়ে (চার নম্বর ছবিটা, যেটা আমাদের বাসা থেকে তিন-চারশ মিটার দূরে) র্যালিটা যাওয়ার সময় আমাদের বাসা থেকে দেখা যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু প্যারেডটা যে এই বিশাল আকারের, সেটা তখন বুঝতে পারিনি। এখন ছবিগুলো দেখেই মাথা ঘুরছে! আগামী দিনগুলো কাটাবো কিভাবে, সেটা ভেবেই কূল পাচ্ছি না।
গত প্রায় দেড়-দুই বছর ধরেই সিরত আনসার আশ্শারীয়ার অধীনে ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে সিরত আনঅফিশিয়ালি একেবারে সরাসরি দায়েশ তথা ইসলামিক স্টেটের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আইএসরা গত বৃহস্পতিবার প্রথম সিরতের প্রধান রেডিও স্টেশন দখল করে নেয়। এবং সেখান থেকে নিয়মিত সিরতের মানুষকে সকল অনৈসলামিক কর্মকান্ড পরিহার করে ইসলামিক স্টেটের খলিফা আবুবকর আল বাগদাদীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার আহ্বান জানাতে থাকে।
এরপর তারা ধীরে ধীরে সবগুলো ইনস্টিটিউশন তারা দখল করে নিতে থাকে। গত বুধবার থেকে সিরতের পাসপোর্ট অফিসও (জাওয়াজাত) আইএস এর দখলে। তারা সিরতের ওয়াগাদুগো কনফারেন্স সেন্টারও (সেক্রেটারিয়েট কম্প্লেক্স) দখলে নিয়েছে এবং সেখানের ভবনগুলোর উপর স্নাইপার মোতায়েন করেছে। গতকাল রাতে তারা সিরত ইউনিভার্সিটি দখল করে নিয়েছে এবং শোনা যাচ্ছে সিরত মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মাত্র কয়েকদিন আগে আইএস সিরতের ট্রাফিকের প্রধানকে হত্যা করেছিল এবং হত্যা করা হবে এরকম ট্রাফিক অফিসারদের একটা লিস্ট প্রকাশ করেছে। আর গত শুক্রবার প্রকাশিত একটা ভিডিওতে দেখা গেছে সিরতের ২১ জন মিসরীয় খ্রিস্টানকে জবাই করে তাদের লাশের উপর মাথাগুলো সাজিয়ে রেখেছে আইএস এর জঙ্গিরা।
আইএস এর ভয়ে গত কয়েকদিনে সিরতের বেশ কিছু অমুসলমান বিদেশী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশীও আছে। গতকালও একজন বাংলাদেশী হিন্দু মুসলমান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এম্বাসী থেকে আমাকে সিরতের অমুসলমান বাংলাদেশীদের একটা তালিক তৈরি করে পাঠাতে অনুরোধ করার পর খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেখছি, বাকি যেসব হিন্দু আছে, তাদের অনেকেও মুসলমান হয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। একজন মুসলমানের কাছে এরচেয়ে অপমানজনক সংবাদ আর কি হতে পারে! যেই ধর্মটা মানুষের গ্রহণ করার কথা ছিল মুগ্ধ হয়ে, স্বেচ্ছায়, দলে-দলে; সেই ধর্মটাই এখন মানুষ গ্রহণ করছে চাপে পড়ে, গর্দান হারানোর ভয়ে!
বিঃদ্রঃ উপরের লেখার মধ্যে কোন ফ্লো না থাকার কারণে দুঃখিত। আসলে লেখাগুলো আমার গত কয়েকদিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কালেকশন।