টপিকঃ মাটি বাবা'র বিয়ে
সারা রাত জেগে জেগে সকালে মাত্র ঘুমিয়েছি। এমন সময় আম্মার ফোন। ধরতেই কোন ভূমিকা না করে সরাসরি বললেন, "বহুত হইছে আর না। এইবার কোন কথা শুনব না। আমি তোর বিয়ে ঠিক করছি। আগামী ১৯ তারিখ বিয়ে। ডেট ফাইনাল।"
প্রথমে ভাবলাম, ঘুমের মধ্যে মনে হয় স্বপ্ন দেখতেছি। পারে দেখি না, আসলেই সত্য। কোন মতে উত্তর দিলাম, "হটাত কোরবানির আগেই আমাকে কোরবানি করার ইচ্ছা জাগল কেন?" আম্মা একের পর এক কারণের তোপ বর্ষাতে লাগলেন আর আমি শুনতে শুনতে ভাবলাম, "আসলেই। বয়স তো কম হল না। এখন না বিয়ে করলে কখন......................? তাছাড়া বিয়ে ব্যাপারটা মানে হয় খারাপ না। অরুণ দা, আর উদা দা আর পলু দা ছাড়া প্রায় সবাই করছে। আমিও বাদ থাকি কেন?" একটু আমতা আমতা করে রাজি হয়ে গেলাম। আম্মা জিজ্ঞেস করল, "তুই পাত্রী দেখবি না?" আমি বললাম, "আপনি দেখলেই চলবে। আপনার পছন্দই আমার পছন্দ।"
গল্পের শুরু এভাবেই। এরপর সারাদিন ফোনের পর ফোন। এবং তাদের মূল বক্তব্য-
ছোট কাকা: শুনলাম তুমি নাকি মেয়ে দেখতে চাও না। মেয়ে অনেক সুন্দর। তোমার পছন্দ হবেই। আমাদের খুব পছন্দ হইছে।
ছোট চাচী: আমরা সবাই দেখছি। কোন সমস্যা নাই। খুব সুন্দরী। ছবি তুলে পাঠিয়ে দিব।
বড় দুলাভাই: এখনও বল, তোর কোন পছন্দ আছে নাকি? পছন্দ থাকলে বিয়ে ক্যান্সেল.....
মেঝ আপা: এত তারাহুরা করে বিয়ের আয়োজন। ঘটনা কি রে? মেয়ের কোন সমস্যা নাই তো?
শিষ্য ১: স্যার, আপনার বিয়েতে তো ফারুক থাকতে পারল না। বলছিলাম, আমাদের তিন জনের কারো না কারো আপনার বিয়েতে থাকা হবে না।
শিষ্য ২: এইটা কি বলেন স্যার। আপনি কিভাবে বুঝলেন, এই বিয়ে হবে না। (ও খুশি মনে আমাকে বিয়ের সংবাদ দিতে গেছিল। আমি বলছি, নো চিন্তা। এই বিয়ে হবে না। ও বলে কেন? বললাম- মাটি বাবার ভবিষ্যতবাণী।)
শিষ্য ৩: স্যার, আমারে রেখেই বিয়ে করতে যাবেন। আফসুস!! বিরাট আফসুস.....................
পরের দিন আবার আবার সারা রাত জেগে সকাল বেলা ঘুমিয়েছি। এমন সময় আবার ফোন....। বিরক্ত হয়ে জিগাইলাম, "কে?" বলে, "জিয়া ভাইয়া?" বললাম, "হুম। তুমি কে?"
"আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।" ওপাশ থেকে উত্তর এলো। বললাম, "বলে ফেল। নো প্রবলেম....."
"ভাই, দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে আমার বউরে আপনার পছন্দ হইল? আমার বউরে বিয়ে করবেন? কথা শুনে একটা হোঁচট খেলেও মুহূর্তেই সামলে নিলাম নিজেকে। সুবোধ বালকের মত বললাম, "আপনি কার কথা বলতেছেন? (তুমি থেকে আপনি )"
"রুমির কথা। ভাই ২০১২ সালে আমি আর রুমী পালায়া বিয়ে করছি.............।" পোলার কথা শুনে আমি তো টাশকিত। কি আর করি! বললাম "ভাই, অন্যের বউয়ের সাথে পরকীয়া করার ইচ্ছা ছিল (১০০% মিছা কথা)। অন্যের বউরে বিয়ে করার কথা তো ভাবি নাই। ভেবে দেখতে হবে। আপনি বরং একটা কাজ করুন, আপনার বিয়ের প্রমাণপত্র নিয়ে জলদি আমার সামনে হাজির হয়ে যান। সময় খুবই কম। বেশি দেরী করলে কিন্তু বউ হারাতে পারেন।" ছেলে সন্ধ্যায় দেখা করবে বলে কথা দিল। আমি হালকার উপর ফোন দিয়ে বিবাহের ঘটক কে বিষয়টা জানায়া দিলাম।
ছেলেটারে দেখেই মায়া লাগল। কি নিরীহ এবং পিচ্চি পোলা। এখনও গ্রাজুয়েশন শেষ করে নাই। তারপরও বিয়ে নামের জটিল ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছে। বললাম, "বল তোমার কি বলার আছে?" (দেইখাই আবার আপনি থেকে তুমিতে ফিরে গেছি।)
ছেলেটা যা বলল তার মূল বক্তব্য, "আমার ক্লাস ফাইভ থেকে একে অপরকে পছন্দ করতাম (ব্যাটা, প্রাইমারীর গণ্ডি পার না হয়েই প্রেম করছস। এখন বোঝ ঠেলা)। আমরা গরীব বলে ওর ফ্যামিলি'র মত ছিল না। (বাংলা ছবির পুরাণ কাহিনী)। তাই এইসএসসি পাশ করার পর ঢাকায় পরীক্ষা দিতে এসে আমরা বিয়ে করি। এরপর ৬ মাস একসাথে ছিলাম। (এরপর যে বাড়িতে ছিল, সেই বাড়ির ঠিকানা দিল আমাকে)। এখন ওর ফ্যামিলি থেকে বিয়ে ঠিক করেছে। অসুস্থ বাবা আগের বিয়ের কথা শুনলে স্ট্রোক করতে পারে এই ভয়ে সে বলতেছে না (পারফেক্ট বাংলা সিনেমার প্লট)। ভাই, ওরে ছাড়া আমি বাঁচব না। আপনি এই কাজ কইরেন না।" আমি বললাম, "ওক্কে, করব না। বিয়ের কাবিন নামা দেখাও।" বলে, "ভাই, কাবিন নামা গ্রামে। আমার মোবাইলে দুজনার ছবি আছে। মেসেজ আছে......। দেখেন...................।"
আমি বললাম, "ছবি কোন প্রমাণ হল। তোমার ছবি দাও। ১০ মিনিটে ঐশ্বরিয়ারে চিপকাইয়া ধরে আছ এমন ছবি বানায়া দিচ্ছি।(মাহমুদ রাব্বী ওরফে ছিন্নমূল ওরফে ভেজা বিড়াল ওরফে...................... ভাই, ঐশ্বরিয়ার নাম নেয়ায় আমি দুঃখিত। আপনি আবার ক্ষেইপেন না।) আর এসএমএস..... হতে পারে তোমার সাথে প্রেম ছিল। আমি তো বলছি, তোমার বউরে বিয়ে করব না। তোমার প্রেমিকারে বিয়ে করব না, তা তো বলি নাই।" শুনে পোলার মুখে কোন কথা নাই........ টানা ৫ মিনিট চুপ করে বসে থাকল........। তারপর বলে, আমি ফোন দেই ...... আপনি লাউড স্পীকারে কথা শোনেন। আমি বললাম, "হবে না। আমি তো বলছি, তোমার প্রেম থাকতেই পারে। তুমি সেটা মনে করায়া দিয়ে ব্ল্যাক মেইল করতে পার। আমি খুব উদার মাইন্ডের ছেলে। অন্যের প্রেমিকাকে বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নাই। তবে অন্যের বউকে বিয়ে করতে আপত্তি আছে.......।" ছেলেটা বলল, "তাইলে আমাকে কিভাবে প্রমাণ করতে হবে?" আমি বললাম, "বিয়ের রেজিস্ট্রেশন দেখাও। অথবা ঐ মেয়ের যে নম্বর আমাকে দেয়া হয়েছে সেই নম্বর থেকে ফোন করে আমাকে বলতে বল, সে বিয়েতে রাজি নয়। তাহলেই হবে.........." ছেলেটা ওক্কে বলে চলে গেল। যাবার আগে বলে গেল, আমি ঘটককে জানিয়েছি এতেই তাদের বাড়িতে এক দফা আক্রমণ হয়ে গেছে। আমার সাথে দেখা করেছে শুনলে ওকে মেরেই ফেলবে। তাই সেটা যেনো কাউকে না বলি।
সন্ধ্যায় ঘটক আমকে ফোন দিল। দিয়ে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলতেছে, "সব ভুয়া। ঐ ছেলে একটা ফ্রড। ঐ ছেলের সাথে কোন সম্পর্ক নাই। আমি এই মাত্র । ছেলের বাড়ি থেকে খবর নিয়ে এলাম। তুই চাইলে ছেলের বাবার সাথে কথা বলতে পারিস।" আমি বললাম, "ভাই, একটু ব্রেক দেন। আমি খালি আপনাকে বলছি একটা ছেলে ফোন দিছিল। সেই ছেলের নামও আমি জানি না। আপনাদের বলি নাই। বাড়ি কোথায়, তাও বলি নাই। আপনি সোজা সেই ছেলের বাড়িতে ক্যামনে গেলেন? কাহিনী কি সেইটা খুলে কন?" এইবার ঘটক ভাই আমতা আমতা শুরু করল। বলে না, ছেলে ডিস্টার্ব করত...... হ্যান ত্যান সাত সতের....................... ব্লা ব্লা...................। আমি বললাম, "ভাই টেনশন নিয়েন না। যা বোঝার বুঝে নিছি। রাতে আমি মেয়ের সাথে কথা বলব। যা শোনার তার কাছেই শুনব।"
রাত ৯ টা। আমার জীবনের ট্র্যাজিক কাহিনী শুরু। নম্বর টিপে ফোন দিলাম.... রিং হয়। কেউ ধরে না। আবার দিলাম.... এইবার একটা মেয়ে ধরে সালাম দিয়ে কে জানতে চাইল। বললাম, "কে, সেটা জানা কি খুব জরুরী?" বলে,"হ্যাঁ। অপরিচিত কারো সাথে আমি কথা বলব কেন?"
- "কথা বলতে বলতেই তো মানুষ পরিচিত হয়।"
- "তা হয়ত। তবে আপনি কে না বললে ফোন কেটে দিব।
- আমি? আমি হলাম সেই যে আপনাকে সারা জীবন জ্বালাবে এমন লাইসেন্স দেবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপনার অভিভাবকরা। (আরি শ্লা, নিজের ডায়লগে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারব না, ভেবে সারা জীবন দূরে থাকতাম। এখন দেখি ভালই ডায়লগ মারতে পারি। ) বুঝেছেন, কে আমি?
- হুম...............
এরপর...... এরপর না বলি........
চাঁদনী রাত.....সুপার মুনের সুপার আলোয় রোমান্টিক আলোচনা......... কিন্তু মেয়ে তো না করে না। তার না না করার কথা ছিল। (সেই ছেলে বলছিল, কথা হয়েছে। রাতে আমি ফোন করলেই না করে দেবে।)। আমি ঐ ছেলের কথা বলতেই আমাকে সুন্দর করে যা বলল, "পৃথিবীতে আমিই তো একমাত্র মেয়ে না, যে আপনাকে আমাকেই বিয়ে করতে হবে। আপনি খোঁজ নিন। । ছেলের কাছে বিয়ের প্রমাণ দেখতে চান। যদি দেখাতে পারে, আমাকে বিয়ে করবেন না। আর যদি আপনার মন থেকে সন্দেহ দুর হয় তবেই বিয়ে কইরেন। তবে একটা কথা, কোনদিন এই বিষয়টা তুলে আমাকে খোঁটা দিতে পারবেন না।"
রাতেই সেই ছেলেকে আবার ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। বাধ্য হয়ে সেই ছেলের দুলাভাই কে ফোন দিলাম (দুলাভাই আমার পরিচিত এবং তার মাধ্যমেই আমারে সাথে যোগাযোগ করছে।) এবং বললাম, মেয়ে অস্বীকার করে এবং এই বিয়েতে তার অমত নাই। এখন বলেন, কাবিন নামা কখন দেখাবেন? ওর দুলাভাই বলল, "ভাই আমি তো কিছু বুঝতেছি না। ওর ফোন বন্ধ। কাল আপনার সাথে কথা বলব...................."
আবার সারা রাত জেগে সকালে ঘুমাতে যাওয়া এবং যথারীতি ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গা........ এবার ফোন দিয়েছে ছোট কাকা। তিনি সাত সকালে আমাকে হৃদয় বিদারক একখানা নিউজ দেবার জন্য ফোন দিয়েছেন.....। আসলে ঘটনা সত্য...... ঐ ছেলে যে বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে সেই বাড়িওয়ালা আমাদের পরিচিত। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ঐ মেয়ে ৩ মাস ঐ ছেলের সাথে ঐ বাড়ি ভাড়া করে ছিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খবর হল, তখনও বিয়ের ডকুমেন্ট দেখাতে না পারায় বাড়িওয়ালা ৩ মাস পর ঐ দম্পতিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং মেয়ের ভাই গিয়ে মেয়েকে ঐ বাড়ি থেকে নিয়ে আসে।
বাকি ঘটনা আপনারা বুঝে নেন। খালি আমি এইটুক বুঝতে পারছি না, "দেশ কি এতটাই এগিয়ে গেছে যে গ্রামের মেয়েরাও লিভ টুগেদার করতে শুরু করল?" আর পরিশেষে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন: "উদা দা, অরুণ দা আর পলাশ ভাই কি ঠিক ট্রাকে আছেন? আমার কি উচিৎ না, তাদের সাথে সঙ্গী হওয়া?
নোট: এই লেখাটা পলাশ ভাই এবং রহস্য মানব ভাইয়ের জন্য। তাদের অনুরোধে ঢেঁকি গিললাম।