টপিকঃ "ঢাকা - সেন্ট মার্টিন - কক্সবাজার - ঢাকা" - পর্ব ১
অফিসের গাড়ীতে বাসায় ফিরছি। হঠাৎ রনির ফোন –
- দোস্ত, একটা তো ঝামেলা হয়ে গেছে।
- কি ঝামেলা?
- কালকে মনে হয় আমার যাওয়া হচ্ছে না।
- যাওয়া হচ্ছে না মানে?
- আর বলিস না, বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান আসছে, তাকে নিয়ে ফ্যাক্টরী তে ট্রায়াল দিতে হবে। আমার বস ও থাকতে পারতেছে না, উনার অন্য আরেকে জায়গায় ট্রায়াল আছে। আমাকেই থাকতে হবে।
- এই মুহুর্তে এটা কোন কথা বললি! টিকেট কাটা শেষ, অফিস থেকে ছুটিও নিয়ে রাখছি। আর এখন বলতেছিস তুই যেতে পারবি না!
- আমারতো যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শেষ মুহুর্তে এই ক্যাচাল লাগবে, কে জানতো।
- দেখ বস কে ম্যানেজ করতে পারিস কিনা।
- বলছিলাম, কিন্তু কিচ্ছু করার নাই। ট্রায়াল এ আমাকে থাকতেই হবে।
- তার মানে তুই যাচ্ছিস না?
- তোরে আমি বর্তমান অবস্থার কথা বললাম, তুই বল আমার কি করার আছে?
- আচ্ছা, আমি নওশাদ দের সাথে কথা বলে দেখি। ওরা যদি ঠিক থাকে, আমি যাবই যাব।
- আচ্ছা দেখ কথা বলে, আর কি হয় না হয়, আমাকে জানাস।
মেজাজ টাই গরম হয়ে গেল। এত প্লান প্রোগ্রাম করে যদি শেষ পর্যন্ত্য নাই যেতে পারি, তাইলে এই আফসোস কই রাখবো! নওশাদ কে ফোন দিলাম। ও, রাজীব আর রাজীব এর এক বন্ধুর যাওয়ার কথা। নওশাদ বললো, ওরা তিনজন যাবেই, আমি আর রনি সহ টোটাল পাঁচ জন হবার কথা, এখন রনি না গেলে আমরা চার জন হব। ওকে কনফার্ম করলাম, আমরা চারজন ই যাব। কাল সন্ধ্যায় বাসস্ট্যান্ড এ সবাই একসাথ হব।
২৫ শে মার্চ। আগামীকাল সরকারী ছুটি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই অফিসে কাজের প্রেসার একটু বেশি। আমার আবার তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। আজকে যে রাস্তায় কি পরিমান জ্যাম হবে, আল্লাই জানে। পড়িমড়ি করে কাজ শেষ করে বসকে বলে বিকেল ৪ টার দিকেই অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম।
বাসায় এসে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য ফকিরাপুল। সেখান থেকে সরাসরি টেকনাফ এর টিকেট কাটা আছে। টিকেট একেবারে শেষ মুহূর্তে কাটা হয়েছিল বলে সিট পড়েছিল একেবারে পেছনের সিটের আগের সিটে। বাস ছাড়ার সময় সন্ধ্যা ৭ টা। জ্যাম ঠেলে মহাখালী পৌঁছাতে পৌঁছাতে সোয়া ছয়টা বেজে গেল। টেনশনে পড়ে গেলাম, এতকিছু করার পর কি এখন বাসই মিস করবো!!! নওশাদ কে আবার ফোন দিলাম, ওরা ততক্ষণে বাসস্ট্যান্ড এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ওকে বললাম যাতে বাসের ড্রাইভার কে কিছু সময়ের জন্য ম্যানেজ করে রাখে, আমি সিএনজি নিয়ে আসতেছি।
বাস থেকে নেমে আশে পাশে সিএনজির খোঁজ করলাম। কুফা মনে হয় আজ ভালো করেই লেগেছে। কোন খালি সিএনজি নাই, যাও দুই একটা আছে, সেগুলো ফকিরাপুল যাবে না। শেষ পর্যন্ত্য মহাখালী কলেরা হসপিটাল (কলেরা হসপিটালই তো নাম, নাকি?) পার হয়ে এক জায়গায় খালি সিএনজি একটা পেলাম। ভাড়া চাইলো ২০০ টাকা। আমি বললাম, ২০০ টাকাই দিব যদি আমাকে ৭ টার মধ্যে ফকিরাপুল পৌঁছে দেয়। ঘড়িতে ততক্ষণে ছয়টা পঁচিশ। ড্রাইভার বললো, সে তার সাধ্যমত চেষ্টা করবে, যদি ভালোয় ভালোয় মগবাজার এর জ্যামটা পার হয়ে যেতে পারে, তাহলে সাতটার আগেই ফকিরাপুল পৌঁছানো যাবে। সিএনজিতে উঠে বসতে সিএনজি ড্রাইভার তার পংখীরাজের ঘোড়ায় টান লাগাল, সে কি টান! চোখের পলকেই নাবিস্কো, সাতরাস্তা পার হয়ে মগবাজার রেলগেট এসে পৌঁছালাম ।
বিধাতার লিখন যায়না খন্ডন, মগবাজার রেলগেট এ রেল আসার কারনে সিগনাল পড়ে আছে বেশ কিছুক্ষন ধরে। রেল আসার আর টাইম পেলো না। এ জ্যাম নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হলেও আজকে কেন জানি সবকিছু ওলটা পালট মনে হচ্ছে। কিছু সময় পার করে অবেশেষে রেল আসলো। সিএনজির ড্রাইভার কোন ফাঁকফোঁকর দিয়ে টেনে একেবার মগবাজার মোড়ে নিয়ে এলো। ড্রাইভার চালু আছে, রিকশাওয়ালাদের ফাঁকি ঠিকই জায়গা করে মোড়ে চলে আসছে। এখানে আরেকটা সিগনাল। এদিকে সময় দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। ড্রাইভার চাচা বললো, এখনও সময় আছে, এই জ্যামটা পার হতে পারলে নিমিষেই পৌঁছায়ে যাব। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বিধায় কিছুক্ষণের মধ্যেই সিগনালে সবুজ বাতি জ্বলে উঠলো। বেইলি রোডের খালি রাস্তায় ড্রাইভার কে আর পায় কে! এমন টান দিলো, কাকরাইল, পল্টন যেন উড়ে পার হয়ে গেলাম। ঘড়িতে সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগেই সিএনজি ফকিরাপুল হাজির। মনে মনে ভাবলাম, ট্যুর শুরু করার শুরুতেই যে এক্সচাইটমেন্ট পাওয়া গেল, পুরো ট্যুরটা নিশ্চয়ই মন্দ হবে না।
নওশাদ কে আবারো ফোন দিলাম। ওরা গাড়ীতে বসে অপেক্ষা করছে। এদিক ওদিক বিভিন্ন গাড়ী খুঁজলাম, কিন্তু ওদেরকে দেখতে পেলাম না। আবার ফোন দিলাম। ও বললো, লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সবার সামনের গাড়ীতে ওরা তিনজনই আছে। আমি সবার সামনের গাড়ীতে খোঁজ নিলাম। ওই গাড়ি পুরো খালি, নওশাদ দের কোন অস্তিত্ব নাই এখানে। মনে ধন্দ লেগে গেল, আমি কি নওশাদ এর সাথেই এতক্ষণ কথা বলছিলাম নাকি ভুল কোন জায়গায় চলে আসছি! এ জায়গা কি আসলেই ফকিরাপুল, ড্রাইভার কি আমাকে অন্য কোন জায়গায় নামিয়ে দিল!! কিন্তু এরকম ভুল তো হবার কথা না, আমি তো ফকিরাপুল চিনি। মাথা টাথা সব মনে হয় আজ হ্যাং। (চলবে...)