টপিকঃ একদা উদা দার বাস ভ্রমন আর এলোমেলো ভাবনা.....
আচানক ঘটনা ঘটল সেদিন । আমি বাসে করে যাচ্ছিলাম সেদিন । কিন্তু কোথায় যাচ্ছিলাম ভুলে গেছি । ক্যামেরা তো সাথেই থাকে আমার। সাথে না একেবারে হাতে । মাঝে মাঝেই ক্লিক দেই বেসম্ভব কিছু দেখলে । বাসে বসে এই সেই উল্টা পাল্টা ভাবনাই ঘুরে ফিরে আসে। সেই যে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল আর ফিরে আইল না আহারে ! আচ্ছা যাক গা বান্দরনি কোনহানখার । তোর মত কত বান্দরনি আছে আমার লাগি পথে ঘাটে দেখিছ তোর চেয়েও সুন্দ্রি আসবে আমার ঘরে না খালি পুরা জীবন জুড়ে ।
বাস ছাড়ার পর হঠাৎই চোখ আটকালো বাসের উল্টো সিটে বসা বেসম্ভব এক সুন্দর সুন্দ্রি ললনা। চোখ তুলে তাকিয়ে প্রথমবারের মতো দেখলাম । সে একটা পিয়ারি হাসি দিল । খাইলাম নি একটা ধাক্কা ওরে বাপস প্রথম চক্ষু দর্শনেই প্রেম ইয়া মাবুদ । কেউ যদি শুনে কি যে বলবে ! আর তাকামোই না । ম্যাপো মোল্লা হুনলে আমারে ক্ষ্যাপাবে। (মনে মনে ভাবনার জগতে ডুব)
আচ্ছা ম্যাপো মোল্লার কি ইহকালে আর জ্ঞান বুদ্ধি হইবো না? নাকি? হেই বেটা এখন গুগল মামুরে নিয়া দাওয়াত দেয়, গুতাগুতি করে, তার বাড়ি চিনায়, পথঘাট চিনায় । আরে বেটা গুগুল মামুর মাইয়া আছেনি কোনো হেতেরে পথঘাট চিনানোর কি হইল । (চিন্তায় আবার ছেদ)
আচম্বিতে বাসটা একটা খসে ব্রেক কষলো । ওরে বাবা সুন্দ্রি দেখি গতরে পইড়া গেছেগা । বাপরে কি সেন্ট মাখছে মাথা ঘুরে খালি দেহি আহ খুশবো খুশবো আর খুশবো । সুন্দ্রি সরি বলতেই মনটা আসমানে উইড়া গেল । ইটস ওকে ম্যাম । এবার একটা মিচকা হাসি। এখন তো বার বার চোখ গিয়ে পড়ছে সুন্দ্রির চোখে মুখে । চোখে মুখে ঠিক না এদিক সেদিক , গালের টোল ...... ইত্যাদি ইত্যাদি । একি! সুন্দ্রি বার বার মিচকি হাসি দিচ্ছে কেন রে বাবা । কেউতো আমার এই উদাস মার্কা চেহারার দিকে তাকায়ে ওভাবে হাসেনি কখনো । তাইলে কি এটাই আসল প্রেম মহব্বোত । মানে কি এসবের তাহলে তো দেখছি ব্যাচেলর জীবনের বিদায় ঘটবে অতিসত্বর । ধ্যত যাউগ্গা যা হবার হবে। আর কতদিন চুলায় চুলাচুলি করা যায় । রানতে রানতে জীবন ত্যানা ত্যানা । আর না ! বাবা .......(মনে মনে) তারে নিয়া একটা কোবতে লিখে ফেললে মন্দ হতো না.....
আমি চাই কেউ এসে আমার দরজা জানালা খোলে দিক ।
আমি চাই না সে বিশ্ব সুন্দ্রি...... সে যেন আমার পাশে এসে বসে
আমার পাতের মাছ খেয়ে কাঁটা আমার থালায় তুলে দেয় ।
আমি চাই না সে আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকুক.....
আমি চাই আমি আসলেই সে যেন বায়না ধরে আমাকে হাতে তুলে খাইয়ে দিক ।
আমি চাই না সে রান্নাবান্না করুক
আমি চাই সে যেন ঘরে বসে সারাদিন সাজুগুজু করে
আর আমি আসলেই যেন বলে দেখতো প্রিয় কেমন লাগছে গো আমায় ।
একটা ছবি আঁকো তো আমায় নিয়ে । নীল পঙ্খীরাজে দুজন ঘুরতেছি এমন একটা ছবি,
সে যেন বলে, সারাদিন ঘুরে বেড়াইছ মজা করে তাই না?
যাও তো এবার হেঁসেলে যাও আমার জন্য রাইন্ধা বাইড়া নিয়া আস ।
আমার সাজুগুজু নষ্ট হয়ে যাবে প্রিয়ে, আচ্ছা তুমি কি আমায় একটুও ভালবাস না গো ।
ইয়া মাবুদ সব উল্টা ভাবনা ভাইবা লাইতাছি এইডা কি হইল । ছবি ভাই ঠিকই কইছে আমি হইলাম ছ্যাকু উদা ।
আচ্ছা এত ভাবনা ভাবতাছি । যে রুমে থাকি সেটা তো সিঙ্গেল রুম । হেতেরে নিয়া থাকুম কই ? আচ্ছা কোন এক ফাঁকে জিগ্যেস করে দেখুম নে...... সে যে জায়গায় থাকে সেখানে কয়টা রুম । তার এখানেই না হয় উঠে পড়া যাবে । ঘরটা কিভাবে সাজানো থাকবে হুমমমমমমমম । একটা খাট সিঙ্গেল সে না হয় খাটে থাকবে আর আমি মাটিতে অথবা দুইজনই এক খাটেই থাকুম । কিভাবে! সেটা বুঝে নিন । জানালার পাশে একটা ইজি চেয়ার, পাশে থাকবে সুন্দ্রির ড্রেসিং টেবিল । আজকাল বাইরে যে বদ ভুঁই বাপরে তার চেয়ে বরং সুন্দ্রির চুলের ঘ্রাণ নেয়া যাবে । আলমারি, কফি টেবিল দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার । অহহো আর একটা টিভি থাকলে মন্দ হতো না । কোথায় রাখব সেটাকে । আচ্ছা সেটা পরে ভাবতাছি । দেয়ালে থাকবে নিজের আর্ট করা সুন্দ্রিদের ছবি পোট্রেট (মনে মনে-এসব দেখলে সে আর আবার চেইতা যাইবো নাতো । আরে চেতবো কেন এসব তো কলা আরে কাঁচকলা না । শিল্প কলা । কিভাবে মেয়েদের ভাজে ভাজে আর্ট করা যায়। সেটাতো একটা বিরাট গুণ বরং খুশিই হইবো প্রতিভা দেইখ্যা ।)
আচ্ছা আমার আয়রোজগার তো কম । বিয়ের আসরে কারে কারে রাখবো । তার আত্মীয় স্বজন আমার আত্মীয় স্বজন ওরে বাপস আর ভাবতে পারছি না । না থাক বন্ধুদের নিয়াই বিয়ার কামডা সাইড়ালাই । ফোরামের কয়েকজনকে দাওয়াত দিতে হপে । আচ্ছা একটা তালিকা তৈরী করি.....
যেমন
১। ডেডু-বাপরে বেটা তো খালি মডেলদের আর সুন্দ্রিদের দেখলে পাগল হয়া যাইবে । এখানে আসলে কি না কি হয় । তারে বাদ দিলাম । না বাদ দেয়া ঠিক হপে না । সে আসলে আরো কিছু মডেল কইন্যাগো কথা হুনন যাইবো ।
২।মেরাজ০০৭ তারে দেয়া যায় একটু হুজুর টাইপ আছে । ঠান্ডা মেজাজের পোলা ।
৩। মেহেদী তিরাশি হ্যা সে অত্যধিক কম খায় । তারে আনলে লাভই হবে খাবার বাঁচবে
৪। আউল...... সে যদিও একটু রাজনীতিবিদা তথাপিও দাওয়াত তারেও দিমু । সে তো আবার নতুন ফটোগ্রাফার কই থাইকা খাল বিল নদী নালার ছবি তুইলা আনে ভালাই লাগে ।
৫। ব্রাশু- তারে তো দাওয়াত দিতেই হবে । বিজ্ঞানী মানুষ । একটু আধটু গবেষনা করলে মন্দ হবে না বিয়া নিয়া ।
৬। পলাশ মাহমুদ-আয় বেটা বুকে আয় । বেটারে বড়ই মহব্বত করি আমি যদিও একটু পাগল কিছিমের ইদানিং মুটকো হয়া গেছেগা । খাবার আবার বেশী লাগেই কিনা আল্লাহ মালুম । কিন্তু তার তো আবার দুই ব্যাগ রক্ত লাইগবে । যদি আবার বউয়ের কাছে রক্ত চাইয়া বসে তাইলে কি করা যাবে । আচ্ছা সেটা নিয়া পরে ভাবতাছি ।
৭। কালা বিলাই - উনি খুবই উপকারী বন্ধু । বিয়া শাদির ব্যাপার, কাঁটাকোটা অনেক হবে । দুইদিকেই লাভ হপে । পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আবার খাবার কম। মাশাল্লাহ ।
৮। রাসেল ১৩ আর রাসেল দুইজনেই থাকবে নে । একজন ফডো উঠাবে আর একজন কয়েকদিন আগে মাইর খাইছে । ভালা খাওন দাওনের প্রয়োজন আছে । হাজার হলেও তো একটা দায়িত্ব আছে আমার ।
৯। জলদস্যু- উনারে দাওয়াত দিলে একলা আইতো না । তিনজন । বাপরে আমি নাই । তারে বাদ । আর উনার যে সাইজ । আস্ত খাসির বারবিকিউ লাগবে । আমি নাই ।
১০। ম্যাপো মোল্লা- উনারে তো দাওয়াত দিবই । গুগল মামার ভাগিনা । বড় পেয়ারের লোক তারে আনলে লাভই হবে । আমার এলাকার ম্যাপটাও তার হাতে ধরাই দিমু । বয়স হইলে কি হইবেক বেচারার অনেক রোমাঞ্চ আছে মানে রোমান্টিক । আর এরাম লোকই আমার পছন্দ ।
১১। ছবি ভাই- এই হতচ্ছারিরে দাওয়াত না দিলে আর আমার উপায় নাই । বাপরে যে পিছলা টাইপ মহিলা তার উপর আবার জামাই হাজি সাব । দোয়া দরুদেরও তো প্রয়োজন আছে জীবনে । কিন্তু ভয় তো এখানেই তার ভাইজান ম্যাপো মোল্লারে কিছু কইতেই পারুম না । আহারে তারপরও দাওয়াত দিতেই হইবে ।
১২। ছড়াবাজ- আমি জানি সে এই বিয়া নিয়াও ছড়া লিখ্যা ফেলাইবো । দামী জিনিস গিফ্ট না দিয়ে সে আম্রে ছড়া গিফট করবো। কৃপণের কৃপণ । ই ই ই :'(
১৩। নাহিদ ইসলাম-নতুন পাগলদের এমনিতে ভালা লাগে । বেচারা নতুন আসছে বন্ধু লিস্টে একটু আধটু উৎসাহ পাইবো ।
১৪। ঝলকনা-বাচ্চা মেয়েটার বড্ড শখ আমার বিয়া খাইব । আসুক তবে সে যেন জ্যান্ত মেইল টেডিবিয়ার সাথে কইরা লইয়া আহে। সেটা ইনভাইটেশন কার্ডে লিখ্যা দিমুনে।
১৫। তিতাস-সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু । গ্যাস কিনতেও তো টেকা লাগে । না সে বন্ধুরে দিয়াই আগুনের কামডা সাইড়া ফেলামো নে।
১৬। জিএমকাশ-বেচারা পুরাতন যুগ নিয়া বড্ড মাতামাতি করে অনেক ভালা লাগে । কত জিনিসের সাথে পরিচয় কইরা দেয় । মুরগ ফাইট., কুত কুত খেলা আরও কত কি । তারে দাওয়াত দিতেই হবে ।
১৭। জেসম বন্ড-বেচারা আমার মতই মাইয়াদের অতিশয় স্নেহ করে । আয় বাবা বুকে আয় । আমার বিয়াতে তোর থাইকতেই হইবে । ইদানিং পোলাডা একটু মনমড়া হইয়া থাকে কিন্তু ক্যারে ? আচ্ছা আইলে জিগামো নে । পারলে একটা বিয়া দিয়া দিমু একই আসরে ।
মাহমুদ রাব্বি তো বেড়াইতে গেছে । নাইলে জোড় কইরা দাওয়াত নিতো । বাকি থাকলো তাছেকা, দক্ষিণের মাহবুব হুম দক্ষিণা বাতাস খাইতে তারে আনাই লাগবো বিয়াতে । নাইদ্যার তো কথাই নাই । তারে দাওয়াত না দিলে বুঝামো ক্যামনে যে তার চেয়েও সুন্দ্রি আমার ঘরে আছে । বেচারী প্রথম মন খারাপই করবো । তার চেয়ে সুন্দ্রিরে দেইখ্যা । আহারে বেচারীর লাইগ্যা মায়াই লাগতাছে । কি যে করি!!!! করার কিচুই নাই । ব্ড্ড দেমাগ দেখায় ঝগড়াইট্টা মাইয়া । পুকুরে যা, চুলায় যাক তোর মাতব্বরী ।
ভাবতে ভাবতে ছ্যাকা উদা ৬ষ্ঠ আসমানে উঠে গেলেন । সেখানেও তিনি ভাবতেই আছেন ভাবতেই আছেন.......আজ যদি আমরা বাসে না থেকে একটা অজগর টাইপ লিফটে চড়তাম তাইলে কতই না মজা হতো । তাও ছবি ভাইয়ের অফিস বাংলাদেশ ব্যাংকের বত্রিশ তলা বিল্ডিংয়ের লিফটে........ লিফটা মাঝামাঝি এসে মানে ১৬ তলায় আসলে বিদ্যুত চলে যেত তখন হেব্বি মজা হতো । তখন কি যে হতো ধুর লুলামি ভাবনা ভাবতাছি ক্যারো আজিব দেখি । আচ্ছা সব কিছু নিয়ে তো ভাবা হলো আর কি কিছু বাকি আছে ? ও হ্যা সুন্দ্রির নামটাই তো জানা হলো নারে হায়রে কপাল । ঠিকমত তো পরিচিতই হই নাই । তয় এটা খুবই তুচ্ছ একটা ব্যাপার । আধুনিক জগতে এসবই লৌকিকতা । বড় কথা হলো আমরা দুইজন দুইজনকে ভালবাসি । প্রথম দর্শনেই তার হাসিটায় আম্রে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে । তাইলে এখন পরিচয় পর্বর্টা সেড়ে নেয়া যায়......
আচ্ছা এভাবে কি পরিচয় পর্বটা সাড়া যায়-যেমন
১। আপনি খুব সুন্দ্রি । গায়ে গতরে সুন্দ্রি । মনে আর হাসিতেও সুন্দ্রি । আপনি কি আম্রে বিয়া করবেন । অথবা
২। আপনার সাথে পরিচিত হতে পারি কি? দেখেন আমি কত সুন্দর হ্যানসাম । চুল দেখছেন ঋত্তিক রৌশন আর বডি দেখছেন ইয়া আলি......... সালমান খানের মত । বুকের ছাতি দেখছেন এক্কেরে শাহরুখ খান ধুরু যা শাহরুখ খানের বুকে লোম নাই । দয়া মায়া নাই যার বুকে লোম নাই তার । না বলা যায়, কারণ শাহরুখরে তো সবাই হেব্বি লাইক করে ।
৩। আপনার হাসিটা মাসাল্লাহ সুন্দর । আপনি আমার নামটা জানতে ইচ্ছুক অথবা আমি কি করি কোথায় থাকি?
৪। হ্যালো ম্যাম এক্সকিউজমি আপনার নামটা? যদি বলতেন তাইলে আমি আমার পরিচয়টা আপনাকে দিতে পারতাম অথবা আপনাকে আমার কেমন লাগে তাও শুনাতে পারতাম
৫। অথবা.......কথা শুরু করা যায় এভাবে-আচ্ছা আমি অমুক জায়গায় যেতে হলে বাস থেকে কোথায় নামতে হবে ? এসব বা এখানের একটাও পছন্দ হবে না বা মনে ধরবে না তার চেয়ে বরং লাষ্টে একটা কথা দিয়া ট্রাই করা যায় .......
হ্যালো ম্যাম আপনি হাসছেন কেন? সে চোখ নামিয়ে নিয়ে আরো বেশী করে হাসতেই থাকবে । সে মৌন থাকবে আমি তার মৌনতা থেকে জেনে নিব তার অব্যক্ত উত্তর - কারণ সে চোখ নামিয়ে নিয়েছে চোখ থেকে । অই হতচ্ছাড়ি চোখ নামাবি না । তা না হলে জানবো কিভাবে চোখের ভাষা কারণ চোখ যে মনের কথা বলে, চোখে চোখ রাখা সে তো নয়, চোখের সে ভাষা বুঝতে হলে, চোখেরও চোখ থাকা চাই.......তার পর সে আবার চোখ তুলবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই আবারো হাসতেই থাকবে ।
উঠে দাঁড়াই । নতুন জীবনের পথে পা বাড়ানোই টা এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ ।
বাস্তবে ফিরে এসে তাকে জিগ্যেস করলাম-আচ্ছা আপনি এভাবে হাসছেন কেন?
তখন সুন্দ্রি সশব্দে হেসে উঠলো আর আমার হাতে একটা টিস্যু ধরিয়ে বললো ........ মিনমিনে গলায় বলল বাসের ব্রেক কষে যখন আমি আপনার উপরে পড়ে গেছিলাম তখনই কান্ডটা ঘটে যায় আই এম রিয়েলি সরি ফর দেট....... আপনার গালে লিপষ্টিকের চিহ্ণটা মুছে নিন প্লিজ। তা না হলে বাস থেকে নামলে বিপদে পড়বেন মানে লজ্জায় পড়বেন
এই মেঘ এই রোদ্দুর