টপিকঃ টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

কোনো সন্দেহ নেই, সব সময় স্রোতের অনুকূলে চলতে পারা চালাকির ক্যাটাগরীতে পড়ে। কিন্তু সেটাই যে যুক্তিযুক্ত এমন নয়। কারণ চালাক’রা আবার চরিত্রহীন হয়। সুযোগে দিনের আলোতে যে মানুষটাকে হেয় প্রতিপন্ন করে; প্রয়োজনে রাতের আঁধারে সেই মানুষটির পায়ে ধরতেও পিছপা হয় না। সিঙ্গাপুরে আইসিসির সভায় পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার বাইরে অন্য টেষ্ট খেলুড়ে দেশগুলোর ভূমিকা যা ছিল, তা এক কথায় ধিক্কার জনক। এমনিতেই বৈশ্বিক খেলাগুলোর মধ্যে আইসিসির প্রকৃত সীমানা খুব ছোট। তার মধ্যে আবার কারো কারো এমন ছড়ি ঘোরানোর ষড়যন্ত্রমূলক মনোভাব এবং তার থেকে তৈরী বিভাজন দুঃখজনক। আশা করি অদূর ভবিষ্যতিই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে টেষ্ট খেলুরে দেশগুলো নিজেদের তাগিদেই গর্জে ওঠবে। তবে যদি না ওঠতে পারে, তাহলে আমি খেলাটির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। বিশেষ করে টেষ্ট খেলাটির। আমার মনে হয় না শ্রীনীবাসনের মতো জানু ব্যবসায়ী’রা এই ফর্মেট’টা বা ক্রিকেটের উন্নতিকে আদৌ হৃদয়ে ধারণ করেন। ইংল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-নিউজিল্যান্ড বা সাউথ আফ্রিকাতেও খেলাটি বড়জোড় বানিজ্য বা শখ। আর এটা তাদের একেবারেই প্রথম স্থান অধিকারধারী খেলা নয়। কিন্তু সাবকন্টিনেন্টে ক্রিকেটের অপর নাম প্রাণের স্পন্দন। বাঙালীর ক্ষেত্রে তো এই কয়দিনে তার চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সামান্য লাভের কথা না ভেবে, বিসিবির উচিত ছিল প্রস্তাবটির বিরোধী জোটে থাকা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হয়েছে ঠিক তার উল্টো।
          কিছু কিছু মানুষ বলতে পারেন, বিসিবি কৌশলী ভূমিকা নিয়ে ঠিক কাজটাই করেছে। কিন্তু তাঁদের মানতে হবে, কাজটা নীতিবহির্ভূতই ছিল। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো অনৈতিক কাজের সাথে নেই। আমি এমনটাও আশা করিনি, যে নিজেদের ওপর পুরোটা ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-সাউথ আফ্রিকা সমস্যাটা ঠেকাবে আর আমরা তাঁর ফল ভোগ করব। গৌরবময় স্বাধীনতা অর্জনকারী একটা জাতির পরিচয় আর দশটা দালাল জাতির সাথে ব্র্যাকেটবন্ধী হতে পারে না। একজন বাঙালী হিসেবে আমি বিসিবির উপঢৌকন প্রাপ্তিকে বর্জন করতে আগ্রহী। কারণ এটা আমাকে লজ্জিত করে।
          ধারণা করি, অদূর ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের ক্রিকেটে। ক্রিকেট খেলায় টেষ্ট ফর্মেটটিকে বিবেচনা করা হয় একটি দল বা ক্রিকেটারের মান যাচাইয়ের সর্বোচ্চ পরীক্ষার হল হিসেবে। আর কোনো দেশের দ্বারা টেষ্ট ফর্মেটকে অবজ্ঞার মানে কতটা লজ্জাজনক হতে পারে, তার সাম্প্রতিকতম ঊদাহরণ হল, ভারতীয় ক্রিকেটের ভরাডুবি। শুধু মাত্র টেষ্ট ফর্মেটেই দলটি দেশের বাইরে টানা 11 ম্যাচের মধ্যে 10টি হেরেছে। আর সর্বশেষ 8টি ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ ধরে তাঁরা জয়ের মূখই দেখছে না। এই দলটিই আবার প্রায় কয়েক দশকের মধ্যে দেশের মাটিতেও প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেষ্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে। যদিও শুধুমাত্র ভারত নয়; বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সার্বিক ক্রিকেটের মান সারা বিশ্বজুড়েই অনেক বেশি নেমে গেছে। এখন ব্যবসা এবং একতরফা ব্যাটিং বিনোদন বান্ধব পিচ বানিয়েও জৌলুসে ভরা ক্রিকেটার পাওয়া যাচ্ছে না। আর ফাস্ট বোলিংতো পরিণত হয়েছে এক ধরণের মৃত শিল্পে। বর্তমান ক্রিকেটের মরা সব উইকেটে বাহাতি স্পিনার’রাই মোটামুটি স্কিল ছাড়া অফ এবং আর্ম বল করে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। দর্শকদের জন্য এই দৃশ্য দেখাও বিরক্তিকর। কারণ মানুষ বিনোদনদায়ী ব্যাটিংয়ের সাথে যেমন ব্যাকরণ চায়; তেমনি রবীন্দ্র জাদেজার উইকেট নেয়ার চেয়ে, ডেল স্টেইনের উইকেট নেয়াকে বেশি উপভোগ করে।
          আমি বুঝতে পারছি না, আমাদের অতি উঁচু মানের এই খেলাটির ভবিষ্যত আসলে কী? দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এটাকে নিয়ে কী করতে চায়? বা তাঁরা এর প্রসারের জন্য কী ভাবছে? বা কী করছে? এভাবে চলতে থাকলে, অচিরেই সাবকন্টিনেন্টে ফুটবল ক্রিকেটকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ডিসের প্রসারের ফলে ঘরে ঘরে ইউরোপিয়ান লিগগুলো চলে যাচ্ছে। এখন প্রতিটি এল ক্ল্যাসিকো আসার সপ্তাহ খানেক আগেই প্রতিটি অঞ্চলে সাড়া পড়ে যায়। যেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল আসছে। ক্রমাগত তলানিতে নামতে থাকা ক্রিকেটের মান ফুটবলের এই জনপ্রিয়তা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এক সময় স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটের প্রতি মানুষের ভালবাসা হ্রাস পেতে থাকবে। আর সত্যি সত্যিই সাবকন্টিনেন্টের ক্রিকেটে ঘুণপোঁকায় ধরলে, ক্রিকেটের ভবিষ্যত আলোকিত হবে না। হয়তো এর প্রভাবটা দৃষ্টিগোচর হতে আরো দশটা বছর সময় লাগবে। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকবে না। কিছু লোক হয়তো চাইছে, সময় (ক্ষমতা) থাকতে সোনার ডিম পাড়া মুরগীটাকে মেরে এক সাথে সব ডিম হাতিয়ে নেই। তাঁদের হয়তো ক্রিকেট খেলাটির প্রতি ভালবাসা বা দায়বদ্ধতা কিছুই নেই। তাই বলে কী ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাবে?

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন দ্যা ডেডলক (১০-০২-২০১৪ ১৪:২০)

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন মাহমুদ রাব্বি (১১-০২-২০১৪ ০৯:০০)

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

টেস্ট ক্রিকেটের শিল্প উপলব্ধি করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। একজন ক্রিকেটার তাঁর মেধার বিচ্ছুরণ দেখাতে পারেন টেস্টেই, ওয়ানডে বা টি২০-এ নয়। সমস্যা হচ্ছে, পুরো বিশ্ব যেভাবে টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছে, তাতে ক্ল্যাসিক্যাল বিষয়গুলো একসময় উঠেই যাবে। আগামী ৫০ বছর পর হয়তো ওয়ানডে বলেও কিছু থাকবে না।

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভালো মানের প্লেয়ার আসছে,
বাংলাদেশ কে আরো বেশী বেশী টেস্ট খেলা উচিৎ

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

ক্রিকেট ওই তিন দেশের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশ তার অবস্থানে সঠিক কাজটিই করেছে....যেখানে নিউজিল্যান্ড-দক্ষিন আফ্রিকার মতো দেশগুলো বিক্রি হয়ে যায়.......তার তুলনায় আমরাতো নসি্য।
ভবিষ্যতে ভারতই সব এফটিফি নিয়ন্ত্রন করবে......এবং বানিজ্যিক কারনেই তাদের৯৯% খেলাই হবে তাদের দেশে। তারা যদি ভবিষ্যতে আম্পায়ারিং বা বিপক্ষদলের টিম সিলেকশনেও নাক গলায়, তাতেও অবাক হবার কিছু থাকবেনা...।

টিপসই দিবার চাই....স্বাক্ষর দিতে পারিনা......

১০

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

১১

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

কেহ কি বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৯ দলের খেলা গুলো দেখেছেন বা ফলাফল শুনেছেন? তারা যে ভাবে খেলছেন তাতে আমরা আশাবাদী

১২

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

১৩

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?

১৪

Re: টেষ্ট ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্ন কী শুরু হয়ে গেছে?