টপিকঃ ল্যাসিক করে ফেলেছি ! ইয়াহুউউউউউউউউ...... :)
গতকাল (শনিবার) আমি ল্যাসিক আই সার্জারী করে ফেলেছি। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম ল্যাসিক করে ফেলবো কিন্তু ভয়ে করতে সাহস পাই নাই। গত বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে গেলাম হারুন আই ফাউন্ডেশন হসপিটালে। সেখানে গিয়ে প্রি-ল্যাসিক টেস্ট করালাম। অনেকগুলো টেস্ট। কর্নিয়ার পুরুত্ব মাপলো। আমার অনেক মোটা কর্নিয়া। দুইবার ল্যাসিক করা যাবে। করলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন টেস্ট। চোখে ক্যারাটোকোনাস রোগ আছে কিনা সেই টেস্ট। রিপোর্ট নেগেটিভ। ক্যারাটোকোনাস তো দূরের কথা, নাম নিশানা পর্যন্ত নাই। চোখের রিফ্রেকশন টেস্ট করলো। ডান চোখে মাইনাস ৩ এর একটু বেশি। বাম চোখে মাইনাস ৪ মনে হয়। পাওয়ার স্ট্যাবল। সুতরাং ল্যাসিক করা যাবে।
হসপিটালে আমার সাথে আরো ৭ / ৮ জন আসলো প্রি-ল্যাসিক টেস্ট করাতে। ল্যাসিক সার্জন হচ্ছেন সন্ধানীর পরিচালক ও হারুন আই ফাউন্ডেশনের কর্নিয়া স্পেশালিস্ট ডাঃ সাঈদ এ. হাসান। জাপান থেকে প্রশিক্ষিত ডাক্তার। তিনি প্রতি শনিবার ধানমন্ডির হারুন আই ফাউন্ডেশন হসপিটালে ল্যাসিক করান আর প্রতি মঙ্গলবার করান গুলশানে ল্যাসিক সাইট সেন্টারে। যেখানে যে করাতে চায় সেখানেই তিনি করান।
ডাক্তারের পাবলিসিটি করে দিলাম এখানে। হি রকস।
Dr. Syed A. Hassan
M.B.B.S, D.O (D.U), FICO (Japan)
Fellow Cornea-Ant.Segment (Hyd)
Fellow Lasik & Phaco Surgery (LVPEI)
Fellow Refractive surgery (Japan)
Director cum Senior Consultant
Sandhani Eye Hospital, Dhaka.
Chamber: Harun Eye Hospital
আমি খুব ভয়ে ছিলাম। চোখের ব্যাপার। উনিশ বিশ হলে আমি শেষ। ডাক্তারকে বললাম, স্যার আমি খুব নার্ভাস। ল্যাসিক করার সময় যদি আমার চোখ নড়ে যায় তাহলে কি হবে? ডাক্তার হেসে বললো, তাহলে কাজ হবে না। নড়ে গেলে শেষ। আমি বুঝলাম, আমার সাথে একটু মজা করছে। আমি বললাম, স্যার আমি আগামী শনিবারেই ল্যাসিক করতে চাই। আর ভাল লাগে না চশমা আর কন্টাক্ট লেন্সের যন্ত্রনা। ডাক্তার বললো, ঠিক আছে। শনিবারে চলে আসবে, তোমার সাথে তোমার বাবা-মা বা বড় ভাই কাউকে নিয়ে আসবে। তারপরে আমাকে একটা ড্রপ লিখে দিলো। এন্টি বায়োটিক ড্রপ। Zymar Eye Drop. প্রতি ৬ ঘন্টা পর পর এক ফোঁটা করে দিতে বললো অপারেশনের দিন পর্যন্ত।
গতকাল শনিবার আমি আমার বড় চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে গেলাম হসপিটালে। ডাক্তারের সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম। আমার সাথে আরো ৬ জন ল্যাসিক করাবে। আমাদের অপারেশন থিয়েটারে নিলো। আমার শরীর পুরা ফ্রিজ। সার্জিকাল গাউন পরালো। আমার সিরিয়াল এলো। আমি ভিতরে গেলাম। আমাকে দেখে সার্জনের সাথে থাকা আরেক ডাক্তার বললো, নায়ক আসছে। লোল। সার্জন তখন হেসে দিলো। বললো, ও খুব ভয় পায়। তখন আরেক ডাক্তার বললো, ভয়ের কিছু নাই। তুমি শুধু লাল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকবে। বাকি কাজ আমাদের। সেখানে আরো একজন মহিলা ডাক্তার ছিলো। সাথে ছিলো একজন মহিলা নার্স ও আরেকজন পুরুষ নার্স। বেডে শুলাম। আমার শরীর তখন কাঁপছিলো। নার্স বললো, ভয়ের কিছু নাই। মাত্র ১০ মিনিটের ব্যাপার। আমার চোখের সামনে একটা মেশিন নিয়ে আসলো। সাথে তো একের পর এক ড্রপ পড়ছে চোখে। ডাক্তার আমাকে বললো, বাবা, তুমি শুধু উপরে তাকিয়ে থাকো। আমি তাকিয়ে থাকলাম। চোখে একটু প্রেশার পড়লো। সবকিছু কালো হয়ে গেলো আর একটা সুন্দর শব্দ হলো। তারপরে আবার চোখে আলো দেখলাম। এবার বললো, এবার ঐ যে লাল আলো দেখা যায় সেদিকে তাকিয়ে থাকো। আমি তাকিয়ে ছিলাম। কি সুন্দর একটা মিউজিক বাজলো কিন্তু চুল পোড়া গন্ধ বের হলো। আরেক ডাক্তার বললো, ৮,৭,৬,৫,৪,৩,২,১,০। লেজার দেয়া শেষ। এবার ড্রপ দিলো চোখে। এক চোখে সার্জারী শেষ। একইভাবে আরেক চোখে করলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝি নাই। শুধু একটু অস্বস্থি লাগছিলো কিন্তু কোনো ব্যাথা লাগে নাই।
আমাকে নার্স নিয়ে অন্য রুমে বসালো। টপাটপ ড্রপ দিতে লাগলো। আর বললো, বিশ থেকে আধা ঘন্টা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন এখানে। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় আরেকজন সহকারী এসে ছোট ছোট পাঁচ ছয়টা ট্যাবলেট মুখে দিয়ে দিলো আর পানি দিলো। খেয়ে ফেললাম ট্যাবলেট। কিছুক্ষন পরে চোখ খুলে মনে মনে বললাম, ইয়া খোদা, দুনিয়া এত স্পষ্ট ! আমি তো জানতাম না। সব কিছু কি স্বচ্ছ, কি পরিষ্কার তবে চোখে তখন ড্রপ অনেক থাকার কারনে চোখ বেশিক্ষন খুলে রাখতে পারি নি। ডাক্তার সবার ল্যাসিক করিয়ে আরেকবার সবার চেকআপ করালো। এরপরে এক প্যাক ড্রপ, ট্যাবলেট দিয়ে সবাইকে রিলিজ দিয়ে দিলো। আমি কালো সানগ্লাস পড়ে কাজিনের সাথে চলে এলাম বাসায়। বাসায় এসে ড্রপ দিলাম, খাবার খেলাম। তারপরে ট্যাবলেটগুলো খেলাম। ঘুমের ট্যাবলেটও ছিলো। দিলাম এক ঘুম। সকালে উঠে দেখি, আমি মনে হয় স্বর্গরাজ্যে এসেছি, না হয় স্বপ্ন দেখছি। এত স্বচ্ছ, এত পরিষ্কার সব কিছু, যা আমি গত দশ বছরে কখনো দেখি নাই। কিছুক্ষন বাইরে তাকালাম। সব কি সুন্দর! এরপরে আবার ড্রপ দিয়ে একটু শুলাম। কিছুক্ষন পরে ছাদে গেলাম। চার দিকে তাকালাম। কি যে ভাল লাগছিলো বলে বুঝাতে পারবো না। আমার মনেই হচ্ছে না আমি ল্যাসিক করিয়েছি। আল্লাহর রহমতে কোনো সাইড এফেক্ট আমার হয় নি। কারো কারো শুনেছি ড্রাই আই হয় কিন্তু আমার হয় নাই। সব কিছু শুধু পরিষ্কার দেখছি। এটাই শুধু সাইড এফেক্ট!
আজকে আবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করালাম। চোখ পরীক্ষা করলো। চার্ট পড়তে দিলো। আগে আমি খালি চোখে বড় E টাও ঠিকমতো দেখতে পারতাম না। ডিসটর্টেড দেখাতো। সেই আমি এখন একেবারে সব শেষ লাইন পুরো স্পষ্ট দেখছি। মিরাকাল লাগছে আমার কাছে। ডাক্তার বললো, সবকিছু পারফেক্ট। কিছু মেডিসিন বাদ দিলো কিন্তু একটা ট্যাবলেট ও ড্রপগুলো ১ সপ্তাহ কন্টিনিউ করতে বললো। এরপরে মেডিসিন, ড্রপ দেয়া বাদ। চশমা, লেন্সমুক্ত জীবন, আহা ......
সব মিলিয়ে মোট খরচ হলো, ৪১ হাজার টাকা। (প্রি-ল্যাসিক - ৩০০০ টাকা, সার্জারী- ৩৬ হাজার টাকা, মেডিসিন - ১২০০ টাকা, ডাক্তারের ভিজিট - ৮০০ টাকা)