টপিকঃ খোলা পিঠা!
বাপবা!! সবাই যেমন রান্না ঘরে দৌড়দৌড়ি লাগিয়েছে কই যাই আমি!
আমার লিখা পড়তে পড়তে কারো রেসেপি পড়ার সময় হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে
যাক! বিকাল আম্মুকে বলছিলাম শীততো চলে এল! "ছাইয়া" পিঠা বানাবা!
এই পিঠার নাম "ছাইয়া পিঠা" কেন এটা আমি জানি না! এটা দুই রকমের হয়! একটা নারিকেল-গুড়-চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি হয়, সেটা দেখতে বাদামী রঙের হয় আর একটা শুধুই চালের গুড়ি- নারিকেল দিয়ে তৈরি হয় সাদা রঙের। আকৃতি হয় গোল করে বানিয়ে দুইদিকে লাটিমের মত চোখা করে দেয়া হয়!
শীতকাল আসলেই আমার চিতই পিঠা, ভাঁপা আর এই "ছাইয়া" পিঠা খাবার আবদার শুরু হয়ে যায়! তো আম্মুর কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে করতেই আম্মা বলল, "কোনায় গিয়ে বসে থাক। কানের সামনে প্যান প্যান করবি না তোদের বাপ-মেয়ে প্যান প্যান খেন খেন শুনতে শুনতে শেষ হইয়া যাইতেছি; আমারে পিঠা বানায় খাইয়া ফেল ...... "
আমি
কি আর করার মুড়ি এক মুঠা হাতে নিয়া সারা ঘরে হাঁটতে হাঁটতে চিবাইলাম। তারপর রুমে এসে ল্যাপি নিয়া খুটখুট খুটখুট করতে লাগলাম।
একটু পরে আম্মা এসে আমাকে খোলা পিঠা বানায় দিয়া গেল! সাথে মধু আর একটু নারিকেল!
ওই পিঠা না হোক, এই পিঠা; চলবে!
তবে এটাকে কেন "বন্ধ পিঠা" না বলে "খোলা পিঠা" বলে তা আমার জানা নাই!
এটা দেখে, লাফায় লাফায় গেলাম রান্না ঘরে! দেখলাম আব্বুর জন্য বানাবে এখন আম্মু। তো আমি ডালের চামুচ নিয়া দাঁড়ায় আম্মুকে বললাম "আমি আমি!" মেয়ের এত্ত উৎসাহ দেখে মা না করে কেমনে
দিলাম গরম গরম কড়াইতে এক চামুচ পিঠার মিশ্রণ ঢেলে, এক হাত দিয়ে কোন রকমে নাড়ালাম কড়াই!! কি হইল এটা কই গোল গোল হবে, তা না আমারটা হইসে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাপ
আমি আম্মুর দিকে তাকাইলাম; আম্মা বলে ......... এত ঢঙ্গ করে নাড়াইলেতো এমন হবেই।
আমি বললাম দেখায় দেও একটা! পরে আম্মা একটা দেখায় দিল। ব্যাস, আমি এইবার আমার ইচ্ছা মত বানাইতে লাগলাম
কোনটা ছোট , কোনটা বড়! ; কিন্তু সব গোল গোল পারফেক্ট
এর আগেও আমি মিশ্রণ করে দিয়েছি কিন্তু কড়াইতে দিয়ে রেডি করে খাবার উপযুক্ত করি নাই। কারন আমার কোন বারই ঠিকমত হয় নাই। হয় পুড়ে গেছে , নাইলে ভেতরে কাঁচা রয়ে গেছে, নাইলে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে! আজ হইল ঠিক মত! খুব সোজা একটা রেসেপি! বলেই দি কি ভাবে করতে হবে; নাকি?
আচ্ছা যা যা লাগবেঃ
পিঠার মিশ্রনেরজন্যঃ
১। চালের গুড়া
২। হাসের ডিম (২-৩), (যদি না পাওয়া যায় তবে মুরগির ডিম)
৩।পানি
৪। লবণ ( স্বাদ মত)
খাবার উপযুক্ত করার জন্যঃ
১। একটা কড়াই
২।কড়াই এর জন্য ঢাকনা- কড়াই সাইজের
৩। একটা চামুচ!
এবার আসি বানানোর পদ্ধতিতেঃ
মিশ্রণ তৈরির জন্য, প্রথমে একটা বাটিতে ডিমগুলো ভেঙ্গে নেই! তারপর তার সাথে চালের গুড়া মেশাবো। অবশ্যই হাত আগে ভালো করে ধুরে নেবেন যদি হাত দিয়ে করেন! তারপর মাখা মাখা হয়ে এলে পানি দেব। পানি এমন ভাবে দিতে হবে যাতে খুব বেশি ঘন না হয় আবার খুব বেশি পাতলা না হয়। চামুচ দিয়ে যখন নাড়বেন তখন চামচে নিয়ে উপর থেকে পাত্রের দিকে ঢালবেন তাহলে বুঝা যাবে এর ঘনত্ব আসলে কতটুকু হয়েছে; ঘন না পাতলা। যদি মনে করেন পানি বেশি হয়ে গেছে তবে চালের গুড়া মিশিয়ে নিবেন। অবশ্যই লবণ দেবেন সাথে, তবে বেশি নয়! প্রয়োজনে আবার লবণ দিবেন।
আমি কোন পরিমাপ বলে দেই নেই আগে কারন জিনিশটা করতে করতে একটা আন্দাজ হয়ে গেছে! কখনও মেপে করি নাই আমি! আম্মুর কাছেও মাপটা চেয়েছিলাম বলতে পারে নাই। তো আমরা প্রয়োজন অনুপাতে নেব। কিছুটা আন্দাজ করেও বলা যায়!
এবার হাত ধুয়ে, কড়াইটা চুলায় বসাবেন! যেহেতু আমরা শহরের মানুষ, লাকড়ি চুলার জন্য আয়োজন করতে হবে না। আগুন জ্বালিয়ে, কড়াই বসিয়ে দেবেন। একদম গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কারন টাটকা গরম না হলে পিঠা সুনদর ভাবে হবে না। দেখা যাবে তুলতে গিয়ে ভেঙ্গে যাবে বা নষ্ট হয়ে যাবে! কড়কড়া গরম না হলে ছড়ায় না মিশ্রণ ঠিকমত!
গরম হল কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটু খানি পিঠার মিশ্রণ কড়াইতে ঢেলে দেখতে পারেন!
হয়ে গেলে। ডালের চামুচে ( বলতে, যে চামুচের সামনের দিকটা একটু গভীর হয়, পানিয় জাতীয় খাবার গুলা তোলার সুবিধার্তে যে চামচ ব্যবহার করা হয় সে গুলো) করে এক চামচ কড়াইতে দিয়েই, চামুচ নামিয়ে সাথে সাথে কড়াই এর দুইপাশ ধরে উঠিয়ে, চুলা থেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে, গোলগোল করে নাড়তে থাকুন পুরোটা মিশ্রণ কড়াইতে ছড়িয়ে গেলে সাথে সাথে চুলায় দিয়ে দিন! এরপর ঢাকনা দিয়ে একমিনিট ( যদি মিশ্রণের পরিমান বেশি দিয়ে থাকেন) বা আধা মিনিট রাখবেন (যদি কম দিয়ে থাকেন)। ঢাকনা উঠিয়ে রেখে, চামুচ দিয়ে আস্তে আস্তে করে পিঠাটা করাই থেকে আলত করে খুঁচিয়ে তুলে ফেলুন!
তোলার আগে হয়েছে কিনা, আন্দাজ না বুজলে একটু ঢাকনা উল্টিয়ে দেখতে পারেন! করেকবার করতে করতে বোঝা যায় কতক্ষণ পর ঢাকনা সরাতে হবে।
হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন। প্রথমটা নামিয়ে নিজের খেয়ে দেখতে পারেন লবণের মাত্রা ঠিক আছে কিনা। কম মনে হলে একটু লবন মিশিয়ে দিতে পারেন বাকি মিশ্রণটুকুর সাথে!
এইভাবে আপনার ইচ্ছেমত করে বানিয়ে খেতে পারেন!
এর সাথে আপনি একটু নারিকেল আর মধু একসাথে মাখিয়ে খেতে পারেন। যারা মিষ্টি পছন্দ করে। আবার চাইলে মাংস দিয়ে খেতে পারেন বা ঝাল সবজি দিয়েও খেতে পারেন। ঝাল দিয়ে খেতেও অনেক ভাল লাগে!
বানাবো পর চোখের সামনে ধরলে অনেক গুড়া গুড়া ফুঁটো দেখা যায় পিঠাতে! এটাকে মনে হয় জালি পিঠাও বলে! আমি ঠিক জানি না! এটাই আমার দেখতে খুব ভাল লাগে। এক চোখে বন্ধ করে পিঠার মধ্যে দিয়ে অন্য প্রান্ত দেখা আর বানানোর পর অনেক মোলায়েম হয়!
মুরগির ডিম দিলে এত মোলায়েম হয় না; হাসের ডিমে যতটা হয়। আর ডিম হত দিবেন এটা তত মোলায়েম হবে আর ঘন হবে।
আর এই মিশ্রণ আপনি চাইলে ফ্রিজে রেখেও; পরে বানিয়ে খেতে পারবেন। বাটির মুখ ভালভাবে লাগে এমন পাত্রে রেখে ২-৩ দিন পর্যন্ত রাখতে পারবেন।!
আমি আজ মধু দিয়ে খেয়েছি একবার আবার ঝাল দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছিল তো মাছের তরকারি ছাড়া আর কিছু ছিল না, তো আমি একটু আলু আর ঝোল দিয়ে খেয়েছি রাতে
ভালোই লেগেছে!
এইবার নিজেরা বানিয়ে বানিয়ে গরম গরম খেয়ে দেখেন কেমন লাগে খেলে একতা করে ছবি এই টপিকে পোস্ট করে যাবেন!
সবাই ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। আর পরিমিত খাওয়া দাওয়ার মধ্যে থাকুন
**বসে বসে অনেক গুলো বানান ঠিক করলাম! আরও ভুল চোখে পড়লে একটু বলে দিন!**