মাহবুব মুর্শেদ একটি তথ্যপূর্ণ দারুণ পোস্ট লিখেছেন সচলেঃ হোমিও-প্যাথেটিক গাঁজাবিজ্ঞান
ক্যালেণ্ডুলা এবং ইপিকাক হোমিওপ্যাথীর পক্ষে যুক্তি হিসাবে দেখানো হচ্ছে।
ক্যালেণ্ডুলা - এটি হোমিওপ্যাথীক ঔষধ নয়, বরং হার্বাল রিমেডী। হাহনেমানের কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই ভারতবর্ষে গাঁদা ফুলের এ্যাণ্টিসেপটিক গুণাবলী পরিচিত ছিলো - প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসকরা সাধারণ ক্ষত ড্রেসিং করতে গাঁদা ফুলের পেস্ট ব্যবহার করতেন। চাইনীজ ইস্টার্ণ মেডিসিনেও গাঁদা ফুলের ব্যবহার আছে। হোমিওপ্যাথে ব্যবহৃত হলেই কোনো দ্রব্য হোমিও ড্রাগ হয়ে যায় না (একই লজিকে সাধারণ পানীয় জলকেও "হোমিও ঔষধ" বলা যেতে পারে)। তাছাড়া আধুনিক মেডিসিনেও ক্যালেণ্ডুলা স্বীকৃত এবং বিভিন্ন মেডিকেল ওয়েণ্টমেন্টের এ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েণ্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ছোটোবেলায় কলকাতার আনন্দমেলা, সানন্দা ইত্যাদি ম্যাগাযিনে বোরো ক্যালেণ্ডুলা নামে একটি এ্যান্টিসেপটিক লোশনের এ্যাড দেখতাম। এছাড়া এ্যাণ্টি-টিউমার ড্রাগেও এটা ব্যবহৃত হয় সম্ভবতঃ। পিডিএফ লিংক
ইপিকাক - এটা ইপিকাকুয়ানা ফুল থেকে তৈরী হয়। এটাও হোমিও ড্রাগ না, বরং হার্বাল রিমেডী বলাই সঠিক হবে। আধুনিক মেডিসিনে এমেটিক (বমিকারক) হিসাবে ইপিকাক সীরাপ ব্যবহৃত হয় (যেমন বাচ্চারা কোনো ক্ষতিকর কিছু গিলে ফেললে বমি উদ্রেকের মাধ্যমে বস্তুটি শরীর থেকে বের করার জন্য)। আগে ব্রংকাইটিসের চিকিৎসাতেও ইপিকাক ব্যবহৃত হতো (এখন আরো ভালো এক্সপেক্টোরেণ্ট ড্রাগ ডেভেলপড হওয়ায় আর কেউ প্রেসক্রাইব করে না)। ইপিকাকের মূল উপাদান হলো এমেটিন(emetine)। সিন্থেটিক এমেটিন দিয়েও অনেক ড্রাগ আছে (যেমনঃ সিগমা)
দু'টোর কোনোটাই হোমিও-র জন্য ভালো উদাহরণ না। ওগুলো বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসাপদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-নেপালের মেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের "বালিশ" হিসাবে পরিচিত ডেভিডসন'স মেডিসিন বইয়ে মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশন নিরাময়ের জন্য ক্র্যানবেরী জ্যুস পান করতে উপদেশ দিয়েছে (ক্র্যাণবেরীর মলিকিউলের বিশেষ শেইপের কারণে ব্যাকটেরিয়ারা শরীর থেকে সহজে বেরিয়ে যায়) - ক্র্যানবেরীকে কেউ নিশ্চয়ই মেডিকেল ড্রাগ দাবী করবে না?
হোমিওপ্যাথী আদৌ কাজ করে কি করে না তা তো পরের ব্যাপার, তার আগে বড় সমস্যা হলো হোমিও প্র্যাক্টিশনাররা নিজেরাই জানেন না কোন ড্রাগ কিভাবে কাজ করে।
আধুনিক মেডিসিনে প্রতিটি ড্রাগ খুব এক্সটেন্সিভ এবং সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ বায়োকেমিকেল, বায়োফিজিকাল, ক্লিনিকাল ইত্যাদি টেস্টিং-এর মাধ্যমে যায়। (আমি ফার্মাসিস্ট না এবং ফার্মাকলজী পড়েছিলাম প্রায় ১০ বছর আগে - কিছু ভুলভাল থাকতে পারে) একটি ড্রাগ শরীরে কিভাবে প্রবেশ করে, পরিপাকতন্ত্রের কোন কোন অংশে কি হারে শরীরে আপটেক হয়, লিভারে কিভাবে ফার্স্ট-অর্ডার, সেকেণ্ড-অর্ডার বিপাক হয় এবং উৎপন্ন মেটাবলাইটগুলোর কেমিকেল প্রপার্টী কেমন, শরীরে ড্রাগটির হাফলাইফ কতক্ষণ, ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার ক্রস করে ব্রেইনে কোনো ইফেক্ট করে কিনা, গর্ভবতী মায়েদের প্ল্যাসেণ্টাল ব্যারিয়ার ক্রস করে ভ্রুণের ডেভেলপমেণ্টাল ক্ষতি করে কিনা, হার্ট, কিডনী, লাংস ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কোনো ভালো বা খারাপ ইফেক্ট আছে কিনা, ড্রাগটি কিভাবে মূত্র, ঘাম বা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়, অন্য কোনো ড্রাগের সাথে রিয়েক্সন করে কিনা ইত্যাদি ছাড়াও ড্রাগটির মূল যে কাজ সেই প্রসেসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বায়োকেমিকাল, মলিকিউলার, জেনেটিক এবং ক্লিনিকাল ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা হয়। সারা দুনিয়ায় আমেরিকার USFDA গোল্ড স্ট্যাণ্ডার্ড হিসাবে গণ্য করা হয় - কোনো নতুন ড্রাগ FDA ক্লিয়ার করতে পারলে অন্যান্য দেশগুলোতেও তার অনুমতি পাওয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। USFDA-র ৪ ফেইজের খুবই স্টৃক্ট ট্রায়াল আছে। প্রথম ২ ফেইজে ল্যাব এ্যানিমেলের ওপর ড্রাগ প্রয়োগ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। ড্রাগটি আসলেই কাজ করে কিনা এবঙ করলে কিভাবে করে তা এই ফেইজে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। এগুলো পাশ করলে সম্ভবতঃ ফেইজ ৩-এ লিমিটেড হিউম্যান ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমতি দেয়। সবশেষে ফেইজ ৪-এ সম্ভবতঃ প্রেগন্যান্সীর শিডিউল, ড্রাগের ডোজিং ইত্যাদি ফাইনটিউনিঙ করা হয়। এত সব পর্যায় পার হতে হতে এক একটি ড্রাগ বাজারে আনতে গিয়ে ৮-১০ বছর সময়ও লেগে যেতে পারে। আর আমরা শুধু যেসব ড্রাগ সমস্ত রিগরাস ট্রায়াল ক্লিয়ার করেছে শুধু সেগুলোর কথাই শুনি, আরো যে হাজার হাজার ড্রাগ রিজেক্টেড হয়েছে তার ব্যাপারে কিছুই জানি না। হোমিও এবং অন্যান্য স্যুডো-সাইন্টিফিক বুলশিটের ওপর রিচার্ড ডকিন্সের একটি ডকুমেন্টারী দেখেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। সেখানে এক বৃটিশ সার্জন রিতীমত কেঁদেই দিয়েছিলেন - ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি ড্রাগ যেটি বাজারে আসলে শুধু ইংল্যাণ্ডেই নিশ্চিৎভাবে প্রতি বছর কয়েক হাজার মহিলার জীবন বাঁচাতে পারে, ওই কেমো ড্রাগটি বৃটেনের এনএইচএস প্রায় ৪ বছর ধরে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে রেখেছে। অথচ ওইরকম দেশেও হোমিওপ্যাথীক ঔষধ রেগুলেট, সেফটি নির্ণয় করার জন্য কোনো পলিসি বা প্রতিষ্ঠান নেই।
হোমিও-প্র্যাক্টিশনাররা নিজেদের ব্যবহৃত ড্রাগগুলোর মেকানিযম অব এ্যাকশন সম্পর্কে বেশি ওয়াকেবহাল বলে মনে হয় না।
উপরে যে দু'টো উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেগুলোর এ্যাকটিভ মলিকিউলগুলো কখন, কেন, কোথায়, কিভাবে কাজ করে তা কিন্তু বের করেছে মডার্ণ মেডিসিনই।
Calm... like a bomb.