Noyon90 লিখেছেন:কোন ধরনের কোটা প্রথায় ইসলাম সমর্থন করে না তবে মানবতার কাতিরে কিছু কিছু মানুষের জন্য দয়া করা যাবে যেমনঃ প্রতিবন্ধী , অসহায় উপজাতি ইত্যাদি ।
বিসিএস পরীক্ষার্থী মাত্রই কোটা (Quota)র সংজ্ঞা এবং কোটা কেন জানা উচিত। জানে কয়জন? সমস্যাটা হলো কোটা কেন এই বিষয়টাও অধিকাংশ লোকে বুঝে না। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে তাই সংক্ষেপে কোটা শব্দটা নিয়ে দুটি কথা বলব—
(ক) কোটা একটা বিশেষ ব্যবস্থা যেটাকে আইনের ভাষায় বলা হয়- affirmative action / positive discrimination.
(খ) সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, ন্যায্যতা। ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্যে এরকম কোটা বা positive discrimination রাখতেই হবে।
(গ) আর ভাষা বিজ্ঞানে ইংরেজি Quota কে বাংলা পারিভাষিক শব্দ হিসেবে ‘যথাংশ’ বলা হয়েছে (সূত্র-‘বিষয় বাংলা’ লেখক: ড. সৌমিত্র শেখর, পৃষ্ঠা নং ১৬৮)। অভিধান বা ভাষা বিজ্ঞানের ভাষায় তাই কোটা যথযথভাবে প্রাপ্য অংশ।
কোটা কারও করুণা নয়, আবার অধিকারও নয়। অধিকার নয় এ অর্থে- কেউ তার প্রাপ্য অধিকার বঞ্চিত হলে আদালতের দারস্থ হওয়া যায়, কিন্তু কোটা বঞ্চিত হলে আইনের আশ্রয় নেওয়া যায় না। আবার এটাও মনে রাখা উচিত কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য আদালত (বিচার বিভাগ) নির্বাহী বিভাগকে কোন নির্দেশনাও দিতে পারে না, সংস্কারের জন্য হয়তো নির্দেশনা দিতে পারে। যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে কেউ না কেউ রিট করে আদালত কর্তৃক নির্দেশনা আদায় করে নিতে পারত। শুধু বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগ বলে কথা না, বিষয়টা অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি কোটা অথবা DV লটারিতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ নাগরিকত্ব সুবিধা-যেগুলো বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের কোন আদালতে গিয়ে আদায় করার সুযোগ নাই। দেশে সেনাবাহিণীতে কর্মকর্তা নিয়োগে কোন কোটা নাই। তাই বলে কি আমরা এটা দাবি করতে পারি? আবার অনেক দেশে সামরিক বাহিণীতে যোগদান বাধ্যতামূলক-সেটা নিশ্চয় অনেকেই জানেন না। পৃথিবীর সব দেশে সিভিল প্রশাসনে নিয়োগে কোটা আছে তাই আমরাও দাবি করতে পারি-তবে অধিকার বা করুণা হিসেবে নয়-ন্যায্যতার ভিত্তিতে। পৃথিবীর সব দেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সুবিধা রয়েছে, আমাদের দেশেও এই সুবিধা থাকবে, এটাতো অস্বাভাবিক কিছু না। এখানে ন্যায্যতার ভিত্তিতেই কোটা প্রচলিত আছে। বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা জয় করেছে কিসের ভিত্তিতে জানেন তো? ন্যায্যতার ভিত্তিতে।
অনেকেই মন খারাপ করতে পারেন-অপ্রিয় হলেও সত্য, ভারতীয় উপমহাদেশে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন মূলতঃ মুসলমানদের দিয়েই। তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলমান। তবু তারা শিক্ষা-দীক্ষায় চাকরিতে পিছিযে পড়া ছিল বলে তাদের জন্য শুধু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেনি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এমনকি কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলমান ছাত্রদের খুব অল্প বেতনে পড়ার সুযোগ দেয়া হত। যে সুযোগটা হিন্দু ছাত্ররা পেত না। এজন্য হিন্দু ছাত্ররা প্রতিবাদ করেছিল বলে কখনো শুনিনি। তখন মুসলমানদের জন্য এতকিছু সুযোগ সুবিধা সত্বেও বিশেষ বিবেচনায় সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ দেওয়া হতো। তখন সেটা-কে কোটায় চাকরি না বলে বলা হত নমিনেশনে চাকরি। নমিনেশনে চাকরি হলো প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা ছাড়া মনোনয়নের মাধ্যমে চাকরি। আজ সেই মুসলমানেরা জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষায়, সভ্যতায় অনেক উন্নত। এই বিশাল মুসলমান জনগোষ্ঠীও সেকালে কোটা/নমিনেশন ছাড়াই চাকরি পড়াশোনার চেষ্টা চালালে আজ এতদূর উন্নত হতো না। যারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্যান্ট, শার্ট আর টাই পরা শিখেছে তাদের অনেকই (সবাই নয়) নিজেদের অতীত ইতিহাস না জেনে বা জেনেও ভুলে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘুর পিছে লেগে পড়েছে। কি আজব!
আরেকটা অপ্রিয় সত্য, আমাদের দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠাকালীনও মুসলমান ছাত্র সংখ্যায় কম ছিলে বলে বিশেষ ব্যবস্থায় ভর্তির ব্যবস্থা করা হত, এতে হিন্দু বা অন্য-রা আপত্তি করেছিল বলে শুনি নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ভাইস চ্যান্সেলর যার নামে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলও আছে, তিনিও কিন্তু মুসলমান হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় সেসময় শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন (জাতীয় অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিমের-একটা লেখায় এটা উল্লেখ আছে)। তিনি কি সফল ভিসি ছিলেন না?
Noyon90 লিখেছেন:বাংলাদেশে যে কোটা প্রথা চালু আছে সেটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমার আগের পোস্টে এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি সেটা আগে পড়ুন তারপর না হয় এখই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে শোনাবেন।
hit like thunder and disappear like smoke