টপিকঃ নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির মানুষ
নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির মানুষ
জীব বিজ্ঞানীরা পৃথিবেতে এই পর্যন্ত কত প্রজাতির মানুষ এসেছে, সে সম্পর্কে প্রচুর কথা বলেছেন বা গবেষণা করেছেন। যেমন চিনের পিকিং মানুষ। ইন্দোনেশিয়ার জাভা, জার্মানির হাইডেলবাগ ইত্যাদি খুবই পরিচিত মানব প্রজাতি। আর এই সব প্রজাতির মানুষ কেনি বা পৃথিবী হতে হারিয়ে গেছে, তার নিত্য নতুন থিওরি জীব বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত দিয়ে চলছেন । এবার পৃথিবীর বুক থেকে নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির মানুষ কেন লোপ পেয়েছিল? এ বিষয়ে তাদের থিওরি পড়ুন।
আজকের বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, তাদের পূর্বসূরিদের তুলনায় নিয়ান্ডারথালদের দৃষ্টিশক্তি ছিল অনেক তীক্ষ, আর চেহারাটাও অনেক বড়সড় আর সে কারণেই সম্ভবত পৃথিবীর বুক থেকে তাদের বিদায় ঘনিয়ে এসেছিল।
অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু ব্যাখ্যাটা সেরকমই। নিয়ান্ডারথালদের ফসিল থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, তাদের মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশই তাদের দৃষ্টি আর চলাফেরার জন্য কাজে লাগানো হতো। ফলে একটা বৃহত্তর সামাজিক গোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য যে সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনার প্রয়োজন, তাদের মস্তিষ্কে সেটা করার মতো জায়গা ছিল না বললেই চলে।
মানুষের বিবর্তন নিয়ে যিনি দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন, লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সেই বিজ্ঞানী, প্রফেসর ক্রিস স্টিঙ্গার বিবিসিকে বলেন, মস্তিষ্কের আকার কত বড় সেটা খুব জরুরী ব্যাপার নয়, কিন্তু মস্তিষ্কের কোন অংশটা কোন কাজ করছে সেটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক মানুষের যারা পূর্বসূরি, তাদের পাশাপাশি নিয়ান্ডারথালরাও একদিন এই পৃথিবীর বুকে লক্ষ হাজার বছর ধরে সহাবস্থান করেছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু আনুমানিক আজ থেকে তিরিশ হাজার বছর আগে একটা গোষ্ঠী হিসেবে নিয়ান্ডারথালরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
প্রফেসর স্টিঙ্গার বলছেন, যেহেতু আধুনিক মানুষের পূর্বসূরিদের অনেক বড় আকারের গোষ্ঠীতে বসবাস করার ক্ষমতা ছিল, তাই নিয়ান্ডারথালদের তুলনায় তাদের বেশকিছু বাড়তি সুবিধা ছিল।
তাঁর কথায়, ‘সামাজিকভাবে বড় একটা দলে থাকার অর্থ হলো, সেখানে অনেক জটিল ও আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতির উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ভাষার দিক থেকে, প্রতীকের দিক থেকে ইত্যাদি। আর একটা বিরাট বড় দলকে ম্যাপিং করা মানে আপনি অনেক বেশি সম্পর্কে জড়াতে পারছেন, আপনার নেটওয়ার্ক ক্রমশ নিবিড় হচ্ছে, আরও প্রসারিত হচ্ছে!’
‘গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে আপনি যখন বিরাট একটা জনসংখ্যা বা বড় একটা নেটওয়ার্কের অংশ, তখন কিন্তু আপনার উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ে, নতুন নতুন আবিষ্কার করার ও সেগুলো কাজে লাগানোর, সবার সঙ্গে সেই সুবিধাটা ভাগ করে নেয়ার প্রবণতাও বাড়ে।
ফলে আধুনিক মানুষ যে সাফল্য পেয়েছে, দারুণভাবে টিকে থাকতে পেরেছে, বিরাট দলবদ্ধ হয়ে থাকতে পারাটা সম্ভবত তার একটা বড় কারণ, বলছিলেন প্রফেসর স্টিঙ্গার। নিয়ান্ডারথালদের সেই সৌভাগ্য হয়নি, কারণ তাদের মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম চিন্তা-ভাবনার অংশগুলো সেভাবে সক্রিয় ছিল না।
প্রফেসর স্টিঙ্গার ছাড়াও এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবিন ডানবার ও এইলিউন্ড পিয়ার্স। তারা প্রায় ৩২টি আধুনিক মানুষের খুলির সঙ্গে ১৩টি নিয়ান্ডারথালের খুলি তুলনা করে দেখেছেন, যেগুলো ছিল ২৭ হাজার থেকে ৭৫ হাজার বছর পুরনো।
নিয়ান্ডারথালদের চোখের কোটর আর ফলে চোখ যে অনেক বড় ছিল, সেটাও প্রমাণ হয়েছে ওই গবেষণা থেকেই। কিন্তু দৃষ্টিটা প্রখর হলেও তাদের অভাব ছিল দূরদৃষ্টির আজকের বিজ্ঞানীদের দাবি সে রকমই।