টপিকঃ দুবাইয়ে সততার অনন্য নজির বাংলাদেশির
![]()
বিশ্ব গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ শিরোনামেই বেশি স্থান পায় বাংলাদেশ। এসব নেতিবাচক সংবাদের ঝাপটা প্রথমত এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেশি সইতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশিদেরই। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রধানতম পর্যটন নগরী দুবাইয়ে প্রবাসী এক বাংলাদেশিই সততার বিরল নজির গড়ে উজ্জ্বল করলেন দেশের মুখ। আব্দুল হালিম নামের এই বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক সম্প্রতি তাঁর গাড়িতে ফেলে যাওয়া আড়াই কোটি টাকারও বেশি ব্রিফকেসভর্তি হীরা ও নগদ অর্থ এর মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ হালিমের মাসিক আয় মাত্র ৭৪ হাজার ৫৩২ টাকা।
বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক আব্দুল হালিম জানান, গত ২৫ মে সারা দিন গাড়ি চালানোর পর তিনি যখন তাঁর ট্যাক্সিক্যাবটি গ্যারেজে নিয়ে যান, তখন বিশাল ধনভাণ্ডার দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, 'আমার কাজের পালা (শিফট) শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই সেদিন আমি আমার গাড়ির বুট (পেছনের ডালা) পরীক্ষা করে দেখি। এ সময় ডালার ভেতরে ছাই রঙের একটি চামড়ার ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখি। ওটা খুলতেই আমি রীতিমতো জমে যাই। সেখানে অসংখ্য মুদ্রা, একটি চেক বই, একটি বাক্সভর্তি হীরা দেখতে পাই। আমার জীবনে এর আগে এমন কিছু দেখিনি।'
৩১ বছর বয়সী বাংলাদেশি যুবক বলেন, প্রথমেই তাঁর মাথায় আসে জিনিসগুলো কার হতে পারে এবং তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন ব্যাগটি একজন মিসরী ব্যক্তির। কারণ, ওই ব্যক্তিটি সেদিন সকালে জুমাইরা লেক টাওয়ার এলাকার আলমাস টাওয়ার থেকে তাঁর গাড়িটিতে উঠেছিলেন। লোকটির গন্তব্য ছিল দেইরা গোল্ড সক এলাকায়।
তিনি বলেন, 'আমি জানতাম আমাকে কী করতে হবে। বিষয়টি আমার অফিসকে জানিয়ে দুবাই পুলিশকে ব্যাগটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে অনুরোধ করলাম। পুলিশকে জানালাম, ব্যাগটি আমার কাছেই আছে এবং তাদের পরামর্শমতে আমি তৎক্ষণাৎ নাইফ পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিলাম। এর মধ্যে পুলিশও ওই মিসরী নাগরিককে খুঁজে বের করে থানায় হাজির করেছে। আমি গিয়ে দেখি সেখানে মিসরী লোকটি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাকে দেখেই তাঁর চেহারাজুড়ে বিশাল হাসি ফুটে ওঠে। পরে আমাদের উপস্থিতিতেই পুলিশ ব্যাগটি খোলে এবং নগদ অর্থ ও হীরার পরিমাণ ঠিকঠাক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে । গুনে সব কিছুই ঠিকমতো পায়।' তিনি জানান, তাতে দুই লাখ দিরহাম এবং ১০ লাখ দিরহাম মূল্যের হীরা পাওয়া যায়। পরে জানা গেল, ওই লোকটি একজন ব্যবসায়ী এবং তিনি তাঁর সম্পত্তির আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। হালিম বলেন, 'সব কিছু ঠিকমতো আছে দেখে মিসরী লোকটি আমার পিঠ চাপড়ে দেন এবং নগদ কিছু অর্থ দিয়ে আমাকে পুরস্কৃত করেন।'
তবে এর চেয়েও বড় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি তাঁর কম্পানি দুবাই রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ) থেকে। এমনকি এমিরেট আইডেনটিটি অথরিটিও তাঁকে সম্মানিত করেছে। আরটিএর সম্পদ ও সহযোগিতা বিভাগের ইভেন্ট স্পেশালিস্ট আব্দুল রহিম মোহাম্মদ বলেন, 'আব্দুল হালিম আমাদের হিরো। আমাদের ৮০০ চালক আছে এবং সবাইকেই আমরা সৎ মনে করি।'
সূত্রঃ কালের কন্ঠ