টপিকঃ দু’টি শিশুর বেড়ে ওঠা...
আমাদের রক্তে একটা পশু আছে-
ভয়ানক হিংস্র; শিশু বেলায় যেটি
শিশুদের মতনই ছিল অতি নিরীহ
তখনো তার দাঁত গজায়নি; ছিল না
নখরে ক্ষুরধার; তখন সে অবুঝ,
অবোধ ছিল, ছিল আনকোরা ভীষণ।
মানব শিশুটির সহিত সেও বাড়ে;
যত্নে বেড়ে ওঠা মানব শিশুটির
মতো পরিচর্যা কেউ তাকে করেনি।
মনুষ্য শিশুটি যেরূপ ভালোবাসা
স্নেহ মমতা পেতে থাকে তার কিছুই
সে পায় না কখন; মনুষ্য শিশুটি
যে খাদ্য-পুষ্টি পায় তার আধেকও
সে পাই না; অথচ, ঠিকি বেড়ে ওঠে সে
পুষ্টির ঘাটতি হয়না এতটুকু।
বয়ঃপ্রাপ্ত হলে- মনুষ্য শিশুটি
যতটা না বাড়ে গড়নে বহুগুণ
হয় শিশু-পশুটি; করাত- দাঁত হয়
শাণিত নখ-চোখ; তার চেয়ে তীক্ষ্ণ
শিকারি দক্ষতা; যে এত দিন ছিল
অবুঝ- অবোধ সে বুঝতে পারে সব।
কিন্তু কিভাবে সে অতোটা বেড়ে গেল?
শিকারে-দক্ষতা আয়ত্ত করল?
মানব শিশুটি তো বেড়েছে সুন্দর-
সুস্থ-পরিবেশে যেখানে কদর্য
ঘৃণা, পাশবিকতা ইত্যাদি ছিলনা
ছিল না লোভ, ক্রোধ- আজন্ম লালিত
গুপ্ত প্রতিশোধ।তবে ভেতরের পশু
কি করে এতকিছু রপ্ত করে ফেলে?
কার কাছ থেকে সে এতকিছু শিখেছে?
যে মানব শিশুটি আজন্ম শুনেছে
ঔদার্য, ক্ষমা, ভালোবাসার বাণী-
মুহূর্তের পট- পরিবর্তনে সে
কি করে সব ভুলে হয়ে ওঠে নিঠুর
ঘাতক, কুৎসিত ধর্ষক এক! যে
মানব শিশুটি শিখেছিল সততা,
সৎ-বিশ্বাসের সোজা পথে চলতে
কি করে হয়ে ওঠে বিশ্বাস-ঘাতক?
বিস্মিত হতে হয় মানব জন্মের
অবনমন দেখে; মানব সত্তার
এই বিলোপ দেখে।ধর্ম- বিশ্বাস
মার্জিত আচার, সংযত জীবন
কিছুই যে পশুটিকে রুখতে পারে না!
সে সাবলীল বাড়ে; গুপ্ত ঘাতকের
মতো লুকিয়ে থাকে- আচানক আঘাত
হানে একদিন; আর সে আঘাতে আমরা
হারায় সম্বিত; চরিত্রের ভিত
উৎপাটিত হয় সমূলে আমাদের।
নিত্যদিনকার অতি ক্ষুদ্র পাপ,
ছোট্ট অপরাধ- সব কিছু থেকেই
সে সংগ্রহ করে জৈবনিক রস।
আমাদের তুচ্ছ অসতর্কতায়
অজান্তেই বাড়ে ভয়ানক পশুটি!
(ছন্দঃ- অমিল মাত্রাবৃত্ত-পয়ার, প্রতি পঙক্তিতে ১৪ মাত্রা; পর্বে মাত্রা বিন্যাস- ৭+৭; লয়-বিলম্বিত)
আমি নক্ষত্রে বন্দী
অজরখেচর।।