টপিকঃ স্টিভ জবসের পছন্দ ছিল আমিন আলীর রেস্তোরাঁ
রেডফোর্ট রেস্তোরাঁয় বসেই আইফোনের চিন্তা করছিলেন অ্যাপল কম্পিউটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্যস্ত ডিনস্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেতে খেতেই জবসের মাথায় খেলা করে আইফোনের ধারণা। ২০১১ সালে তথ্যপ্রযুক্তির এই দিকপাল মারা যাওয়ার পর এ তথ্যটি প্রকাশ পায় ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট, টেলিগ্রাফ-এর মতো পত্রিকায়। আর আমাদের জন্য আসল খবরটা হলো রেডফোর্ট রেস্তোরাঁর মালিক হলেন যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি আমিন আলী। তিনিও সে সময় জানতে পারেন, তাঁর রেডফোর্টই স্টিভ জবসের প্রিয় রেস্তোরাঁ। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের দপ্তরে একমাত্র খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রেডফোর্ট। গল্পের শেষ এখানেই নয়! অনেকের ধারণা, রেডফোর্টের রসনায় তৃপ্ত অতিথিদের সই আছে যে বইটিতে, সেটি নিলামে তুললে দাম মিলিয়ন পাউন্ড অতিক্রম করবে। তিন দশক ধরে বইটিতে রেডফোর্ট সম্পর্কে লিখে গেছেন পৃথিবীর ৭০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ অনেক তারকা। সাবেক দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন রেডফোর্টের নিয়মিত খদ্দের; রয়েছেন ডেভিড বেকহ্যাম দম্পতি, শচীন টেন্ডুলকার, ঐশ্বরিয়া রাইসহ অনেকেই।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের ছেলে আমিন আলী ১৯৭২ সালে আসেন বিলেতে। বললেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি ভারতীয় মালিকানাধীন একটা রেস্তোরাঁয় কাজ করতাম। একই সঙ্গে জড়িয়ে যাই লেবার পার্টির রাজনীতিতে। থাকতাম ক্যামডেন এলাকায়। মনে মনে ভিন্ন ধাঁচের একটা রেস্তোরাঁ গড়ার স্বপ্ন দেখি। মনে আছে, রাজনৈতিক সহকর্মী টনি ব্লেয়ার তখন এমপি হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন এবং লন্ডনের সাবেক মেয়র কেন লিভিংস্টোন তখন কাউন্সিলর। চেরি ব্লেয়ার তখনো নামী আইনজীবী হননি। গর্ডন ব্রউনের স্ত্রী সারা ব্রাউন আমাদের রেস্তোরাঁর জনসংযোগ করেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। অনেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, এখনো করছেন রেডফোর্ডকে।’
বর্তমানে লেবার পার্টির একজন উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আমিন আলী। জানালেন, ‘আমার রেস্তোরাঁ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে বেশি দূরে না। শুধু লেবার দলীয় মানুষজনই নয়, বর্তমান কোয়ালিশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীসহ অনেকেই রেডফোর্ডে নিয়মিত আসেন। আমি গর্বিত হয়ে তাঁদের নিজের জন্মভিটার গল্প শোনাই।’যুক্তরাজ্যে বাংলা সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করতে ১৯৮৭ সালে জামদানির প্রদর্শনী করেছিলেন আমিন আলী। সে সময় বাংলাদেশ থেকে জামদানি তাঁতিদেরও নিয়ে গিয়েছিলেন। আমিন বললেন, ‘আমরা আজ জামদানির ভৌগোলিক পরিচয়গত স্বীকৃতি হারাতে বসেছি। ১৯৯৪ সালে লন্ডনে প্রথম বাংলাদেশ উৎসব করেছিলাম। পাশের দেশ ভারত নানাভাবে তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরে। আমার জেদ চাপে আমরা কেন পারব না।’ আমিন আলী দেশ থেকে একটা যাত্রাপালা নিয়ে এসেছিলেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ফ্যাশন শো ইত্যাদির আয়োজনে তিন দিন সরগরম করে রেখেছিলেন। বিবিসি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে এ উৎসব।আমিন আলী জানালেন আরেকটি ইতিহাস গড়ে বাঙালিদের ওই আয়োজন। এই উৎসব উপলক্ষে ১৮২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ইতিহাসে একবারই ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় এক পাতা খবর ছাপা হয়েছিল।
তিন কন্যার বাবা আমিন আলী বললেন, ‘বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা যুক্তরাজ্যে বেশ ভালোই করছে। ওরা বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চায়। ওদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। ওদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি।’
আমিন আলী কিছুদিন আগে ব্রিটিশ ফরেন সার্ভিস কার্যালয়ে কী একটা কাজে গিয়েছিলেন। হঠাৎ একটি মেয়ে পাশে এসে তাঁকে বলে, ‘চাচা, ভালো আছেন?’ আমিন আলী জানালেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশি মেয়েটি উপপরিচালক হিসেবে কাজ করছে। আর এক ধাপ হলেই ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হয়ে কোনো দেশে যাওয়ার সুযোগ পাবে সে।’এ রকম সাফল্য আমিন আলীকে এখনো অনুপ্রেরণা জোগায়। তাঁর ভাষায় ওরা আমাদের উত্তরসূরি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দূত।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/ … ews/320397