টপিকঃ গোলকের ব্যাস আট ইঞ্চি, পর্ব-২
পূর্বেঃ গোলকের ব্যাস আট ইঞ্চি
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সিটিক্লাবের মাঠে এসে পৌছায় মাহাদী। ভিতরে ঢুকে একপাশে ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসে থাকে। সবে মাত্র প্রথম বিভাগের একটা ম্যাচ শেষ হয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচ। সারা দেশ ক্রিকেট নিয়ে পাগল, কিন্তু মাহাদীর ক্রিকেট নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই। মাঝে মাঝে শুধু বাংলাদেশের খেলা হলে দেখে। হাসানের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে আধাশোয়া হয়ে পরে মাহাদী। একবার ভাবে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে হাসানকে যে ওর আসতে আর কতক্ষণ লাগবে। পর মুহূর্তেই সে চিন্তা বাতিল করে দেয়। যখন আসবে আসুক। ওর তো আর কোন তাড়া নেই। এসব চিন্তা করতে করতেই হঠাত পেটের উপর একটা ভারী ব্যাগ-প্যাক উড়ে এসে পড়ে। কিছুটা হতচকিত হয়ে দেখে যে, পাশে হাসান যে কখন এসে দাড়িয়েছে খেয়ালই করেনি। হাসানের দিকে তাকাতেই ও দাত বের করে হেসে বলে ওঠে,
- কিরে ব্যাটা? আছিস কেমন?
- হম্ম, ভালো।
- খবর কি?
- ভালো। একবারতো বললামই।
- একবারওতো জিজ্ঞেস করলি না যে আমি কেমন আছি।
- তোর আগের চাইতে মোটা শরীর আর অপেক্ষাকৃত ফর্শা গায়ের রঙ দেখে ধরে নিয়েছি যে তুই ভালো আছিস।
- আগের মতই মীন আর ফানি আছিস এখনো দেখা যায়।
- হবে হয়তো। তুই কি এইসব চিটচ্যাট করার জন্যে এখানে ডেকে নিয়ে এসেছিস।
- ওয়ো ওয়ো...... সরি। ভুলেই গিয়েছিলাম। আমিতো অ্যাংরী ইয়াং ফ্যাট-অ্যাস ম্যাডীর সাথে কথা বলছি, যার সাথে খালি টু দি পয়েন্টে কথা বলতে হয়।
মাহাদী কিছু বলে না। বিরক্ত হয়ে চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। হাসান খানিকটা দম নিয়ে রাগ চাপার চেষ্টা করে। রাগটা একটু কমলে আবার বলা শুরু করে,
- তোর জন্যে একটা কাজের অফার আছে। করবি?
- তোর কেন মনে হচ্ছে যে একটা চাকুরীর জন্যে আমি মারা যাচ্ছি। আমার লাইফ নিয়ে এত দারদে ডিসকো দেখাতে হবে না।
- এইটাই...... এইটাই তোর সমস্যা। তুই সবাইকে তোর প্রতিপক্ষ ভাবিস।
- এইসব প্যাচাল শুনতে ভালো লাগছে না। হোয়াট এভার ইউর অফার ইজ, জাস্ট গো টু হেল উইথ দ্যাট।
এ কথা বলেই মাহাদী উঠে দাঁড়ায়। তারপর হনহন করে হাটতে থাকে মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার গেটের দিকে। ঠিক সেই সময় পিছন থেকে হাসান বলে ওঠে,
- ফুলহ্যামের ইয়ুথ স্কোয়াড আসছে মাস ছয়েক পর। দে উইল প্লে এ গেম এগেইন্সট আ লোকাল টিম অফ আন্ডার-প্রিভিলিজড টিনেজারস।
হাসানের বলা বাক্য দুটি শুনে মুহূর্তের জন্যে থমকে দাঁড়ায় মাহাদী। মাথাটা না ঘুরিয়েই জবাব দেয়,
- তো আমি কি করবো?
- আই ওয়ান্ট ইউ টু ম্যানেজ দ্যাট টিম।
- বাই হাসান।
মাহাদী বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে আবার হাটা শুরু করে। কয়েক কদম যাবার পরেই পিছনে আবার হাসানের গলা শুনতে পায়,
- হেই ম্যাডী। আই অ্যাম সরি ম্যান। চার বছর আগের সেই ঘটনা তুই এখনো কেন ধরে রাখসিস?
এবারে ঘুরে দাঁড়ায় মাহাদী। এগিয়ে যায় হাসানের দিকে। তারপর আস্তে আস্তে বলে,
- আমি কিছু ধরে রাখি নাই। সব ছেড়ে দিয়েছি।
- সেটাইতো সমস্যা। তুই সব ছেড়ে দিয়েছিস। আমাদের সাথে কথা বলা, ক্যাম্পাসে আসা, ফেসবুক। সবকিছু। তোকে কতবার আর সরি বলবো বল? এবারতো মাফ করে দে ইয়ার। সেদিন মাথা গরম ছিলো জন্যে একটু বেশি বলে ফেলেছিলাম।
- নাহ। যেটা সত্য সেটাই বলেছিলি। মাফ চাওয়ার কিছু নাই।
- তুই আবারও ঘাউরামি শুরু করলি। সেদিন ফাইনালে হারার পরে মাথা ঠিক ছিলো না ইয়ার। দোষটা তোর স্ট্র্যাটেজির ছিলো না। জাস্ট......সেদিন আমাদের দিনটা খারাপ ছিলো। তুই আমার দেখা বেস্ট ম্যানেজার। আমাদের ডিপার্টমেন্ট কখনোই যে টুর্নামেন্টের সেকেন্ড রাউন্ডেই যেতে পারে নাই, সেই টিমকে তুই ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলি। ম্যাডী ইয়ার......খুব ফ্রাস্ট্রেটেড ছিলাম। আই অ্যাম সরি।
- ইটস ওকে হাসান। আমি ঠিক আছি। ভালো থাক।
আবারও হাটা ধরে মাহাদী। পিছন থেকে আবারও হাসানের গলা শোনা যায়,
- ইটস নট ওকে। ঐ দিনের ঝগড়া তোকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ঐ টিমের সবাই আমরা সেটা জানি। আমরা ঐদিন থেকে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে আসছি যাতে তোর জন্যে কিছু করা যায়।
- আমিতো বলি নাই তোদের কিছু করার জন্যে।
- হ্যা, করিস নাই। তুই আমাদের আর বন্ধু না ভাবলেও, আমরা তোকে অনেক মিস করি। উই লাভ ইউ ম্যান এন্ড উই নো ইউ। আমরা জানি, তুই এসব চাকরী-বাকরী করে শান্তি পাবি না। তুই সেটাই করবি যেটা তোর অন্তর চায়। আর আমরা জানি সেটা কি।
- তাই? সেটা কি?
- ফুটবল। ইউর লাইফ ইজ ইন দ্যাট এইট ইঞ্চ ডায়ামিটার ম্যান। ফুটুর-ফাটুর চাপাবাজি করে যখন ফুলহ্যামের সফরের লিয়াজো অফিসার হয়ে গেলাম, তখন তোর কথা মাথায় রেখেই যে লোকাল টিমের সাথে ওরা ফ্রেন্ডলী ম্যাচ খেলবে, সেটার ম্যানেজার হিসেবে তোর নামটা হালাল করিয়ে নিয়েছি।
- আমার কোন কোচিং সার্টিফিকেট নাই।
- জানি। কিন্তু এটাও জানি যে, সার্টিফিকেট ছাড়া বিশ্বের সেরা কোচ তুই। অন্তত আমার কাছে।
- হ্যা, তোর কাছে। তাদের কাছে না। চাপাবাজি কম করে কর।
- আসলে এটা একটা ক্ষয়রাতি ম্যাচ ওদের কাছে। আমাদের মত গরীর দেশের ফুটবলের উন্নয়নে লোক-দেখানো ম্যাচ আরকি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, তুই এই ম্যাচের চেহারা বদলায় দিতে পারবি।
হাসানের কথার আর কোন জবাব দেয় না মাহাদী। আবারও হাটা শুরু করে। মাহাদীর গোয়ার্তুমী দেখে হাসান কিছুটা রেগে পিছন থেকে চিৎকার করে বলে ওঠে,
- তুই হচ্ছিস একটা জিন্দা লাশ। খালি শরীর আছে, সেটাতে কোন প্রাণ নাই। একটা সেলফিস ফ্যাট-অ্যাস......
মাহাদী একটু থেমে, হাসানের কথা শেষ হবার আগেই, মাথাটা হালকা ঘুরিয়ে বলে ওঠে,
- শওকত কাবাবে যাচ্ছি। তুই যাবি? পেট খালি থাকলে আমি আবার কিছু চিন্তা করতে পারি না। এখন খেতে হবে। কারণ, আই হ্যাভ আ টিম টু মেক।
[চলবে]