টপিকঃ ডেডু মিয়ার থ্রিডি দর্শন (পার্ট-১)
যারা দেশের বাইরে থাকেন তাদের কাছে থ্রিডি মুভি দেখা পানি-ভাত। কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটা নয়। পিচ্চি কাল হতে বর্তমান পর্যন্ত ডেডু মিয়ার জীবনে থ্রিডি এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।
স্টেজ ১.০
যখন স্কুলে ছিলাম সেই সময় খবরের কাগজের ৩য় পাতায় ইয়া বড় বড় বিজ্ঞাপন দিত "কিনে নিন থ্রিডি থিয়েটার - হয়ে যান লাখপতি ...... প্রতি এলাকায় ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ চলছে।" সাথে ইয়া বড় ডাইনোসরের ছবি। ছবিতে দেখা যেত টিভি হতে ডাইনোসর বের হয়ে আসছে। আর বাচ্চারা কালো চশমা পরে গালে হাত দিয়ে হা করে তা দেখছে। বিজ্ঞাপন দেখে এটা আমার দেখার খায়েশ হলো। কিন্তু এলাকায় হাতাপাতা খুঁজেও এর দেখা পেলাম না।
সেই সময় থাকতাম কলাবাগানে (সেই সময় এলাকাতে চার-পাঁচটি কলা গাছ দেখা গেলেও এখন আর নাই)। তখন ঢাকার সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা বসতো কলাবাগান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেই বার মেলা দেখতে দেখতে একেবারে শেষ মাথায় দেখলাম যে দশ ফিট বাই সাত ফিট সাইজের স্টলে থ্রিডি থিয়েটার বসেছে। ২০ টাকা করে টিকিট। দাঁড়ালাম লাইনে। আগের শো শেষ হবার পরে ঢুকলাম। প্রথম সারিতেই জায়গা পেলাম। মোট বিশটির মতো সিট। সব সিট পুরন হয় নাই দেখে অপেক্ষা। সামনে দেখলাম ২১/২৪ ইঞ্চি সাইজের ইয়া বড় একটা টিভি। আর দোকান একেবারে শেষ মাথায় হবার কারণে পর্দা ভেদ করে বৈশাখ এর বিকালের তীব্র রোদ ঢুকছিল। শুরুর এক মিনিট আগে সবাইকে রঙ্গিন চশমা দেওয়া হলো। শেষ হলো অপেক্ষা শুরু হলো মুভি। মনে করে ছিলাম ডাইনোসরের ছবি হবে কিন্তু ইন্দুর এর সিনেমা (যতদূর মনে পরে) । ইন্দুর একবার এই দিকে লাফায় আবার আবার আরেক দিকে লাফায় - সামনে ঝাঁপায়। চশমা খুলে দেখাল যে ঘোলা তেমন ভালো দেখা যায় না। বড় বড় পিক্সেল। আর চশমা পড়ে দেখলাম যে টিভি হতে কিছু বের হচ্ছে কিনা। কিন্তু কিছুই বের হছে না। ভালো ভাবে বোঝার আগেই ১০ মিনিটের শো শেষ।
তখন আমার কাছে মনে হয়ে ছিল যে, কোন কিছু বের হয় নাই। দূর ছাই থ্রিডি। ২০ টাকা মাঠেই মারা গেল। ভগ্ন মনে বাড়ির পথে যাত্রা করলাম।
স্টেজ ১.৪৫
কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে আবারো থ্রিডি এর সম্মুখীন হলাম। যেমনঃ ত্রিমাত্রিক আয়ত স্থানাংক ব্যবস্থায় কোন ভেক্টর। প্রায় ঘন্টা খানিক ম্যাডাম ত্রিমাত্রিক অবস্থা নিয়ে পাঠ্যপুস্তক এর বাইরে আলোচনা করেছিলেন। যার সারমর্ম ছিল, যার দৈর্ঘ্য প্রস্থ আছ তা ২ডি আর যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তা হলো 3D।
স্টেজ ১.৯৫
কলেজে থাকতে একবার পিচ্চি কাজিনদের নিয়ে shamoli তে অবস্থিত শিশু মেলাতে গেলাম। । হাল্কা পাতলা কিছু রাইডে চড়ে। ড্রাগন পাহাড়ে উঠলাম। সেখান থেকে দেখলাম যে এক ছোট ঘরের সামনে পোলাপানদের লাইন লেগে আছে। নামার পরে দেখলাম যে সেই বিখ্যাত থ্রিডি থিয়েটার। স্কুল লাইফের ফ্লপ শোর কথা মনে পরে গেল। তাও রিক্স নিয়ে আবারো পোলাপানদের সাথে বসে থ্রিডি শো দেখলাম। নাহ, এবারে পয়সা উসুল 3D ইফেক্ট বোঝা যাচ্ছে। এক বিজ্ঞানী তার ল্যাবে বিভিন্ন পরীক্ষা করছিলেন তা নিয়ে গল্প। আমার পিছে এক হাফ প্যান্ট পরা বালক জোরে সাউন্ড হলেই আআআআআ বলে চিৎকার করছিল, তার ফলে আমার মনে হচ্ছিল ইহা একটা এক্সট্রা 3D সাউন্ড ইফেক্ট।
(চলবে...)
[লেখার ভাষা কঠিন হয়ে গেল কিনা জানাবেন]
পরের পর্ব ডেডু মিয়ার থ্রিডি শ্রবণ (পার্ট-২)