টপিকঃ সোহো (SOHO প্রথম পর্ব)।
সোহো-(SOHO= Solar and Heliospheric Observatory) সূ্র্যকে বিষদভাবে গবেষনা এবং পযবেক্ষনের জন্য অত্যাধূনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত একটি মানমন্দির।যা মহাকাশে ভেসে বেড়ানো অবস্থায় সুর্যের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠায়,এর মাধ্যমে সূ্র্যের অনেক অজানা তথ্য জানা যায়।যা পৃথিবীতে বসে অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যাবহার করে জানা সম্ভব ছিল না।
সোহো নির্মান করে ইউরোপিয়ান শিল্প গ্রুপ এবং এর নেতৃত্ব দেয় মাত্রা মার্কোনি সেপ্স (বর্তমান নাম-অ্যাস্ট্রিয়াম)।এটি একটি যৌথ প্রকল্প, এর সাথে আছে ইউরোপিয়ান সেস্প এজেন্সী (ESA) এবং নাসা।সোহোকে তৈরী করতে খরচ হয়েছে প্রায় 1 বিলিয়ন ডলার।
1995 সালের 2 রা ডিসেম্বর লকহীড মার্টিনের তৈরী রকেট এটলাস IIAS এর সাহায্যে একে মহাকাশে উৎক্ষেপন করা হয়।এবং সোহো 1996 সালের মে মাসে তার অভিযান শুরু করে। সোহোর ওজন 1,850 কেজি।
সোহোকে এমন একটা কক্ষপথে স্থাপন করা হয় যাকে বলা হয় বলয় কক্ষপথ (L1) এই কক্ষপথ হলো পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে বিন্দু যেখানে সূর্যের (বৃহত্তর) মাধ্যাকর্ষণ এবং পৃথিবীর (ছোট) মাধ্যাকর্ষণ ব্যালেন্স সমান (এই বিন্দুর অবস্থান সূর্য থেকে প্রায় 0.99 জ্যোতিবিদ্যা একক AU এবং পৃথিবী থেকে প্রায় 0.01 জ্যোতিবিদ্যা একক)।
এর ফলে বস্তুর আপেক্ষিক অবস্থান ঠিক থাকে।যদিও একে L1 কক্ষপথ বলা হলেও আসলে এটি একদম ঠিক L1 কক্ষপথ নয়।যদি এটি এই রকম সঠিক L1 কক্ষপথ হত তাহলে সূর্য থেকে যে রেডিও তরংগ বিকিরন হয় সেই তরংগ সোহোর যন্ত্রে সঠিকভাবে ধরা পড়তো না।কাজেই সোহোকে এমন একটা কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে যার ফলে সোহো সবসময় সঠিক তথ্য পৃথিবীতে পাঠায়।সোহোর কক্ষপথ প্রদক্ষিন সময় পৃথিবীর এক বছরের মত।
সোহোর অভিযানের মেয়াদ ছিল দুই বছর, কিন্তু বিঞ্জানীদের অবাক করে দিয়ে সোহো 15 বছর ধরে তার কাজ করে চলছে।বর্তমানে সোহোর মিশন পরিচালনাকারী দল এই মিশনকে 2012 সালের ডিসেম্বর পযন্ত বর্ধিত করে।সোহো হচ্ছে প্রথম তিনটি-অক্ষ-স্থিতিশীল মহাকাশযান।
সোহোকে কক্ষপথে স্থাপনের পর 1998 সালের 24 শে জুন সোহো টিম মহাকাশযানে যে কম্পাস জাইরোস্কোপের সাহায্যে প্রকৃত উত্তর মেরুর অবস্থান এবং তার সাপেক্ষে অন্যান্য অবস্থান নির্দেশ করে তাতে সমস্যা ধরা পড়ে।
এর ফলে সোহো সূর্যের উপর থেকে তার লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে।সেই সাথে মহাকাশযানের অতি জরূরী উচ্চতা নিয়ন্ত্রন যন্ত্র যাকে বলা হয় Emergency Sun Reacquisition (ESR) তার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে,এর ফলে সোহো ধীরে ধীরে সূর্যের দিকে চলে যেতে থাকে।
সোহোকে এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সোহো টিম বিভিন্ন রকমের চেস্টা করতে থাকে, কিন্তু সব চেস্টা বিফল হয়ে যায় এবং সোহোর সাথে সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়,সোহো তার সব বৈদ্যুতিক শক্তি ও হারিয়ে ফেলে।এবং মহাকাশে হারিয়ে যায়।
ESA বিশেষজ্ঞ কর্মিবৃন্দ ইউরোপ থেকে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসে এই অভিযানের সমস্ত দায়িত্ব তাদের হাতে তুলে নেয়।দিন চলে যায় কিন্তু সোহোর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।
এই যখন অবস্থা ঠিক তখন 23 শে জূলাই অ্যারিসিবো রেডিও দূরবীনের অ্যান্টেনাগুলিকে ব্যাবহার করে সোহোর সাথে রাডার যোগাযোগের চেস্টা করে।এবং এই চেস্টা সফলও হয়, তারা সোহোর অবস্থান এবং এর উচ্চতা জানতে সক্ষম হয়।তারা দেখতে পায় যে সোহোর সামনে যে অপটিক্যাল সারফেস প্রতিফলক প্যানেল আছে তা সূর্যের দিকে মুখ করে আছে এবং এটি প্রতি এক মিনিটে একবার আবর্তিত হচ্ছে।
এরপরে সোহোর সাথে রেডিও যোগাযোগের জন্য সোহোর ব্যাটারি চার্জ করা হয়।এবং এরপরে 25 শে জূন সোহোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।এবং 8 ই আগস্ট সোহোকে পৃথিবী থেকে প্রথমবারের মত ডাটা প্রেরন করা হয়।আগস্টের 9 তারিখ সোহো এই ডাটা বিশ্লেষন করে এবং এর সাহায্যে সোহো তার সমস্ত যন্ত্রপাতির তাপমাত্রা কমিয়ে আনে।এই ভাবে সোহোর নিয়ন্ত্রন বিঞ্জানীদের হাতে আসে।
প্রথম দিকে সোহোর পুনরুদ্ধারকারী দল সোহোকে সীমিত বৈদ্যুতিক শক্তি বণ্টন করে কারন সোহো'র হিমায়িত জ্বালানিকে নির্ধারিত তাপমাত্রায় ফিরিয়ে আনতে এই ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়।12 ই আগস্ট সোহোর তাপ নিয়ন্ত্রণ চূল্লী ঠিকভাবে কাজ করা শুরু করে।16 ই সেপ্টেম্বর সোহোকে পূনরায় সূযের দিকে স্থাপন করা হয়।এবং পরের সপ্তাহে সোহোর কক্ষপথ সংশোধন করা হয়।
এবং 25 শে সেপ্টেম্বর সোহো তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।5 ই অক্টোবর সোহোর সমস্ত যন্ত্রবিন্যাস পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয় এবং অক্টোবর 24, 1998 সালে এই কাজ শেষ হয়।পৃথিবীর সাথে সোহোর যোগাযোগ প্রায় 4 মাস বন্ধ থাকে,এই সময় এর যন্ত্রপাতিগুলো বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে পড়ে।যেমন কখনও কখনও সোহো অত্যন্ত উওপ্ত পরিবেশে (210 ডিগ্রী ফারেনহাইট বা 100 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা) আবার কখনও কখনও অত্যন্ত শীতল পরিবেশে (-150 ডিগ্রী ফারেনহাইট বা -100 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা) অতিক্রম করে।কিন্ত অবাক করার বিষয় হলো এত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলার পরও সোহো’র যন্ত্রপাতিগুলোর বিশেষ কোন ক্ষতি হয়নি।
21 শে ডিসেম্বর শুধুমাত্র একটি জাইরোস্কোপ পুনরুদ্ধারের অভিযান ব্যার্থ হয়ে যায়।এর ফলে সোহোর উচ্চতা ধরে রাখার জন্য অত্যাধূনিক ব্যাবস্থা বাদ দিয়ে ম্যানূয়াল নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা চালূ করা হয়,এর ফলে প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত 7 কেজি জ্বালানী ক্ষয় হতে থাকে।এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য (ESA) 1 লা ফেব্রুয়ারী 1999 সালে উন্নত নতুন একটি জাইরোস্কোপ স্থাপনের জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করে এবং এই অভিযানে সফলভাবে নতুন একটি জাইরোস্কোপ সোহোতে স্থাপন করা হয়।এর পর থেকে সোহো বিরতিহীন ভাবে পৃথিবীতে বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে থাকে।
চলবে..........