টপিকঃ টি.এম.টি।
থার্টি মিটার দূরবীন (TMT) একটি পরিকল্পিত স্থল-ভিত্তিক বৃহৎ segmented মিরর থেকে তৈরী প্রতিফলক দূরবীন।এটি হাওয়াই দ্বীপের মাউনা কি পাহাড়ের উপর নির্মিত হবে।
এটি অনেক বড় এবং এমনভাবে বানানো হবে যে এটি দিয়ে অতিবেগুনী রশ্নি এবং অবলোহিত রশ্নি (0.31 to 28 μm) তরঙ্গদৈর্ঘ্যে যে কোন কিছু পর্যবেক্ষন করা যাবে।
এর অভিযোজিত অপটিক্স সিস্টেম থাকার কারনে প্রথিবীর বায়ুমন্ডলের বাধার ফলেও এই দূরবীনে সঠিক এবং উন্নত মানের ছবি পাওয়া যাবে।
মানমন্দিরের নকশাঃ 1990 সালে ক্যালিফোর্নিয়া অত্যন্ত বড় একটি দূরবীন বানানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়।এই পরিকল্পনা কানাডার VLOT এবং GSMT প্রকল্পের পছন্দ হয় এবং তারা এর সহযোগী হতে আগ্রহ প্রকাশ করে।তখন এর নাম রাখা হয় থার্টি মিটার দূরবীন 2003-4।
2007 সালে টি এম টি কনসোর্টিয়াম টি এম টি মানমন্দির নির্মানের নকশা প্রস্তাবনা করে।
দূরবীনঃ এটি Ritchey-Chrétien দূরবীন এর প্রধান আয়নার ব্যাস 30 মিটার (98 feet)।এই প্রধান আয়না 1.4 m রের ছোট ছোট ষড়্ভুজা আকারের আয়না দিয়ে গঠিত।
এর 3 মিটার ব্যাসের দ্বিতীয় আয়নার ফিল্ড অব ভিউ 20 আর্কমিনিট এটি একটি 15 ফোকাসের অনুপাত সঙ্গে ক্ষেত্র-অফ ভিউ ব্যাস উত্পাদন করে।এই দূরবীনের আয়ানা গুলি সয়ংক্রিয়।
এই দূরবীনের আয়নার আলো সংগ্রহের স্থান 655 m², এর ফোকাল লেন্থ f/15 (450 m), এই দূরবীন নিকট অতিবেগুনী রশ্নি,দৃশ্যমান আলো, এবং অবলোহিত রশ্নিতে (0.31–28 μm) কাজ করবে।এর মাউন্ট Altitude/azimuth বিশিস্ট। এই মাউন্টের সুবিধা হলো পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে 2.0 আর্ক সেকেন্ডের চলমান আকাশের দুইটি বিন্দুকে ফোকাস করতে পারবে।এবং খ-বস্তুকে ফোকাস করার মাইক্রোমিলিসেকেন্ডের মধ্যে সেই খ-বস্তুর precision কে অনুসরন করতে পারবে।
দূরবীনটি মাটি থেকে 4,050 m উচ্চতায় বসানো হবে।এই দূরবীনটি যেখানে বসানো হবে সেই মানমন্দিরের ছাদ হবে গির্জার গুম্বজের মত।সমস্ত যন্ত্রপাতি সহ এই দূরবীনের ওজন প্রায় 2000 টন।এই দূরবীনটির ডিজাইন সফলভাবে তৈরী করছে W. M. Keck মানমন্দিরে।
অভিযোজিত আয়নাঃ এই দূরবীনে মাল্টি অনুবন্ধী অভিযোজিত অপটিক্স (MCAO) সিস্টেম থাকবে।
এই MCAO সিস্টেম প্রাকৃতিক (সত্যিকারের) নক্ষত্র এবং কৃত্রিম লেজারের গাইড বড় একটি সংমিশ্রনের নিরীক্ষক দ্বারা বায়ুমণ্ডলে আলোড়নের পরিমাপ করবে।এই ভাবে প্রতি সেকেন্ডে এই আয়নাগুলি কয়েকবার করে বায়ুমন্ডলের এই আলোড়নের মধ্যে থেকেও খ-বস্তুর ইমেজ ঠিক রাখবে।
এই পদ্ধতিতে 30 আর্কসেকেন্ড ব্যাসের ফিল্ড অব ভিউ এর মধ্যে ছবি তৈরী করবে। উদাহরণ স্বরূপ যে কোন খ-বস্তুর যার কেন্দ্রের আকার 0.015 আর্কসেকেন্ড এবং এর তরংগ দৈর্ঘ্য যদি হয় 2.2 মাইক্রোমিটার তার ছবি ও এই দূরবীন দিয়ে তোলা যাবে,এবং এই ছবি হবে হাবল দূরবীনের তোলা ছবির থেকে দশ গুন ভাল মানের ছবি।
এছাড়াও এই দূরবীনে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য তিনটি অত্যাধূনিক যন্ত্র সংযোজন করা হবে।যেমন বেশী পরিমান জায়গা পরীক্ষা করার জন্য একটি ওয়াইড ফিল্ড অপটিক্যাল স্পেকট্রমিটার (WFOS)।এটি দিয়ে কাছাকাছি-অতিবেগুনী এবং অপটিক্যাল (0.3-1.0 μm তরঙ্গদৈর্ঘ্য)ছবি তোলা এবং বর্নালী বিশ্লেষন করা যাবে 40 স্কয়ার আর্কমিনিট ফিল্ড অব ভিউর মধ্যে।এর সাথে আরো থাকবে অবলোহিত রশ্নির সাহায্যে ছবি তোলা এবং এর বর্নালী বিশ্লেষন (IRIS) যন্ত্র।
এটি MCAO সিস্টেমের সাথে বসানো থাকবে।এর সাহায্যে 2 arcminute ব্যাসের কাছাকাছি-ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (0.8-2.5 μm) ছবি তোলা এবং এর বর্নালী বিশ্লেষন করা যাবে।
একসাথে অনেকগুলো বস্তুর ছবি তোলার জন্য থাকবে ইনফ্রা মাল্টি বস্তুর স্পেকট্রমিটার (IRMS)।পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে এর সাথে অত্যাধূনিক ছয়টি অতিবেগুনি এবং অবলোহিত রশ্নি বিশ্লেষনকারি যন্ত্র বসানো হবে।
যার সাহায্যে নিকট এবং দূরের অতিবেগুনি এবং অবলোহিত (1.0–2.5 μm),(8-28 μm), (1.0–2.5 μm), (1.0–2.5 μm) তরংগ দৈর্ঘ্যের যে কোন খ-বস্তুর বর্নালী খুব সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষন এবং এর ছবিও তোলা যাবে।
এই দূরবীন স্থাপনের জন্য পাঁচটি স্থান নির্ধারন করা হয়-
Cerro Armazones, Antofagasta Region, Republic of Chile।
Cerro Tolanchar, Antofagasta Region, Republic of Chile।
Cerro Tolar, Antofagasta Region, Republic of Chile।
Mauna Kea, Hawaii, United States (preferred site)।
San Pedro Mártir, Baja California, Mexico।
কিন্তু এই প্রকল্পের পরিচালনা পর্ষদ সবদিক বিবেচনা করে 21শে জুলাই 2009 সালে হাওয়াইর মাউনা কি মানমন্দিরের পাশে এই দূরবীন স্থাপনের চূড়ান্ত সিন্ধান্ত গ্রহন করেন।
টি.এম.টি মানমন্দির হলো একটি যৌথ প্রকল্প।
এর সাথে জড়িত আছে-
কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা গবেষনা এসোসিয়েশন (ACURA)।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (Caltech)।
এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (UC)।
বর্তমানে 80 মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে এই দূরবীনের ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সমাপ্তির জন্য 2012 সালের মধ্যে পরিকল্পনা করা হয়।কিন্ত আর্থিক সংকটের কারনে এর মেয়াদ বাড়িয়ে 2018 সাল করা হয়।এই প্রকল্পে আরো অর্থের প্রয়োজন অবশ্য এর মধ্যেই আরো অর্থের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে গর্ডন ব্রাউন এবং বেত্তী মুর ফাউন্ডেশন দেবে 200 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি দেবে অতিরিক্ত আরো 50 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।এছাড়াও TMT সক্রিয়ভাবে অতিরিক্ত নির্মাণ এবং অপারেশন পরিচালনার জন্য আরো সহযোগীদের চাইছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় 2008 সালে ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল মানমন্দির জাপান (NAOJ) একটি সহযোগিতা সংস্থা হিসাবে TMT যোগদান করেন।
2009 সালে ন্যাশনাল চীনা একাডেমী বিজ্ঞান (NAOC) এর অ্যাস্ট্রোনমিকাল মানমন্দির পর্যবেক্ষক হিসেবে TMT তে যোগদান করেন।
2010 সালে ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষক হিসেবে TMT প্রকল্প যোগ দেন,এবং তাদের এই প্রকল্প পছন্দ হলে তারা এই মানমন্দিরের পূর্ণ অংশীদার এবং মানমন্দির প্রকৌশল উন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবহারের সুবিধা চায় এটি যদি T.M.T বোর্ড অনুমোদন করে তবে ভারতীয় সরকার থেকেও তারা অনুদান পাবে।এর মধ্যে চীনও এই প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করে।এরই ধারাবাহিকতায় T.M.T বোর্ড তাদের শর্ত অনুমোদন করে এর পরে 2012 সালে ভারত এবং চীন TMT বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অংশীদার চুক্তিতে সই করেন, এই জন্য চীন এবং ভারত দূরবীক্ষণ নির্মাণ খরচের একটি ভাগের জন্য 1 বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়।
এছাড়াও এখন পর্যন্ত TMT অন্য যে সব নিম্নলিখিত সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা থেকে নকশা ও উন্নয়নের জন্য অর্থ পেয়েছে তা হলো-
গর্ডন মুর এবং বেত্তী ফাউন্ডেশন।
কানাডা ফাউন্ডেশন ইনোভেশন।
অন্টারিও গবেষণা মন্ত্রণালয়।
ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, কানাডা।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল কানাডা।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া জ্ঞান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড।
জ্যোতির্বিদ্যা ও গবেষণা জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশন (AURA)।
জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন (NSF)।
লক হীড মার্টিন।
2009 সালে প্রাথমিক ভাবে এর খরচ অনুমান করা হয়েছিল 970 মিলিয়ন মার্কিন ডলার 1.2 বিলিয়ন ডলার থেকে। যদিও ইতিমধ্যে 100 মিলিয়ন ডলার নকশা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সাইট-মূল্যায়ন কাজে খরচ হয়ে গেছে।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী 2018 সাল নাগাদ এর র্নিমান কাজ সম্পন্ন হবে।
এখন অপেক্ষার পালা এত মূল্যবান একটি দূরবীন আগামীতে অবশ্যই মহাকাশের অনেক অজানা খবর আমাদের জানাবে।