টপিকঃ কেডা কয় আমি রোমান্টিক না?
আমার নামে প্রথম এবং প্রধান অভিযোগ, “ভাই, আপনার গল্পে রোমান্স নাই কেন? নিজেতো ঠিকই প্রেম-পিরিত কইরা বিয়া করসেন!” আরে নাদান পাবলিক, তোমাগো ক্যামনে বুঝাই যে, তোমাগো লাহান আমার নিজের বৌও একই অভিযোগ করে। কি যন্ত্রণা! আমি নাকি খুবই আনরোমান্টিক। রোমান্টিক কোন কিছু করতে গেলেই নাকি সেটা কমেডিতে রুপান্তরিত হয়।
কাল আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আজকে বাই-হুক অর বাই ক্রুক, আমি প্রমাণ করে ছাড়বো যে, আমি রোমান্টিক। হলিউডের রিচার্ড গিয়ার আর বলিউডের ছাহরুখ খানেকেও আমি আজ ফু মেরে উড়িয়ে দিবো যে। এই গভীর চ্যালেঞ্জকে মাথায় নিয়ে ইভেনিং এর ক্লাস নিতে ইউনিভার্সিটি গেলাম। নিজেকে রোমান্টিক প্রমাণ করার জন্য যাবতীয় প্ল্যানগুলো টপ প্রায়োরিটিতে রাখতে হচ্ছে। ক্লাস বা অন্য কোন কাজ যাতে এই প্ল্যানগুলো ভুন্ডূল করতে না পারে, সেজন্য অন্য চিন্তা বা কাজগুলো ইগনোর লিস্টে ফেলে দিয়েছি। এ কারণেই মনেহয় যখন থিসিস স্টুডেন্ট এসে গত সপ্তাহে করা কাজগুলো দেখাচ্ছিলো, তখন সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। বাধ্য হয়ে বললাম,
- আপনি কালকে এগুলো নিয়ে আসেন। কালকে ঠান্ডা মাথায় দেখবো। কারেকশন করবো।
- কেন স্যার? মাথা কি আজকে গরম?
আমি আছি জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে, আর এ ব্যাটা আমার সাথে ফাইজলামী মারে। ফাজিল! তোমার ফাইজলামী আমি বাইর করতাছি, খাড়াও। আমি খুব ঠান্ডা গলায় জবাব দিলাম,
- হ্যাঁ। গরম। নমুনা দেখবেন? আপনি যদি আপনার যাবতীয় তল্পিতল্পা গোটায় এখনি বিদেয় না হন, তাহলে আপনার থিসিস প্রেজেন্টেশনের ডেট পেছাবে।
ওষুধে কাজ হলো। স্টুডেন্ট তখনি গায়েব। যাক। এখন কাজ শুরু করতে হবে। দৌড়ায় দৌড়ায় অফিস থেকে নিচে নামলাম। সবচেয়ে ভালো কার্ডের দোকানে ঢুকলাম। একটা সুন্দর ম্যারিজ অ্যানিভার্সেরী কার্ড কিনবো। কিছুতেই আর খুজে পাই না। অবস্থা দেইখা মনে হইলো, সব মাকে লন্ডেওনে আমার আগেই সব কার্ড কিনে নিয়ে গিয়েছে। অনেক খোজাখুজির পরে একটা কার্ড খুজে পেলাম। উপরে খুব সুন্দর করে লেখা, “ফর মাই সুইট ওয়াইফি”। যাক বাবা। প্ল্যানের প্রথম ধাপ সম্পন্ন। দাম মিটিয়ে ছুট লাগালাম নিজের ডেস্কে। ডেস্কে ফিরে এসে, মনের মাধুরী মিশিয়ে ইংরেজীতে অনেক রোমান্টিক ডায়ালগ লিখে কার্ড ভরায় ফেললাম। এ সময় গুগলের হেল্প নিতে ভুল করিনি। আমার ইংরেজী আবার অনেক ভালো(!!) কিনা।
বাসায় ফেরার পথে এক গুচ্ছ ফুল কিনে নিলাম। কার্ড এবং ফুলের টোটাল রোমান্টিক প্যাকেজটা সাবধানতার সাথে পিঠের ব্যাকপ্যাকে চালান করে দিলাম। বাসায় এসে অন্য দশটা দিনের মতই, রাতের খাবার খেয়ে, আলবেলা সেজে পিসির সামনে বসে নেটে ব্রাউজ করতে লেগে গেলাম। বৌ দেখি কিছুক্ষণ পরপর এসে আমাকে দেখে। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। অবশেষে রাত বারোটা বাজার মিনিট পনের আগে বৌয়ের ধৈয্যের বাধ ভেঙ্গে গেলো, আর আমার বারোটা বাজানোর জন্য আমার সামনে এসে বলা শুরু করলো,
- তোমার কি মনে নাই?
- কি মনে নাই?
- তোমার আসলেই মনে নাই?
- আরে বাবা, কি মনে থাকবে?
- বুঝেছি। বিয়ের আগে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা। আর এখন তোমার আসলি সুরাত বের হয়েছে।
- আসলি সুরাত বের হয়ে ভালোইতো হইসে। ঐদিনও এক আন্টি বললেন যে, আমি নাকি বিয়ের পর বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছি।
- সবসময় ফাজলামী ভালো লাগে না। নিজের বিয়ের দিনের কথা ভুলে যাও। লজ্জা করে না? কোন মুখে তুমি ফাজলামী করো?
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বৌ আমার হনহন করে চলে গেলো। রুমে বৌয়ের অনুপস্থিতির সুযোগে, ব্যাগ থেকে কমান্ডো স্টাইলে কোন শব্দ না করে, ফুল আর কার্ডের প্যাকেজটা বের করে সুন্দর করে ল্যাপটপের উপর রেখে দিলাম। তারপর ড্রইংরুমে গিয়ে টিভি দেখা শুরু করলাম। একটু পরে দেখি বৌ হাসতে হাসতে আমার কাছে আসলো। না এসে উপায় আছে? লাভ কা বাপ, রোমান্স কি গুরুর প্ল্যান বলে কথা। আলবত আসবে। হাসতে হাসতেই আসবে। বৌ হাসতে হাসতেই আমার পাশে বসলো। তারপর কার্ডখানা হাতে বের করে বললো,
- আমার জন্মদিন আসতেতো আরো চারমাস বাকি। তুমি এত আগে আমাকে বার্থডে কার্ড দিলা কেন?
এইরে সেরেছে। আবারো ব্লান্ডার। কার্ডের উপরে “ফর মাই ওয়াইফি” দেখেই কার্ড কিনে ফেলেছিলাম। ভিতরে ইংরেজীতে যে ব্লা ব্লা লেখাগুলো প্রিন্টেড ছিলো, সেটা যে বার্থডে উইশ, তা একবার পড়েও দেখিনি। বরং তার পাশেই আমার ব্লা ব্লা ডায়ালগগুলো লিখেছিলাম। নাহ। আমি হতাশ। আমার দ্বারা হবে না।