টপিকঃ সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫২, তায়েফে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) (২)
আগের পর্ব সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫১, তায়েফে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) (১)
রবিয়ার পুত্ররা পুত্ররা আল্লাহর রসুল (সাঃ) এর অবস্থা দেখে তাঁর উপর দয়াপরবশ হলো। নিকটাত্মীয়তার কথা ভেবে তাদের মন নরম হয়ে গেল। নিজেদের খ্রীষ্টান ক্রীতদাস আদাসের হাতে এক থোকা আঙ্গুর দিয়ে বললো, লোকটিকে দিয়ে এসো। ক্রীতদাস আদাস আঙ্গুরের থোকা রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেয়ার পর তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করলেন।
আদাস বললো, খাওয়ার সময় এ ধরণের কথাতো এখানের লোকজনেরা বলে না। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি কোথাকার অধিবাসী ? তোমার ধর্ম কি ? সে বললো আমার বাড়ি নিনোভায়, আমার ধর্ম ঈসায়ী। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি পুণ্যশীল বান্দা হযরত ইউসুফ এর এলাকার অধিবাসি। আদাস বললো, আপনি ইউসুফকে কিভাবে চিনলেন ? রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তিনি ছিলেন আমার ভাই। তিনি ছিলেন নবী, আমিও নবী। এ কথা শুনে আদাস রসুলুল্লাহ (সাঃ)’র উপর ঝুকে পরলো এবং তাঁর মাথা ও হাত পায়ে চুম্বন করলো।
এ অবস্থা দেখে রবিয়ার দুই পুত্র নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো, এই লোক এবার আমাদের ক্রীতাদসের মাথা বিগড়ে দিয়েছে । মনিবদের কাছে ফিরে গেলে তারা আদাসকে জিজ্ঞেস করলো, কিরে, কি ব্যাপার ? আদাস বললো, আমার বিবেচনায় পৃথীবিতে এই লোকের চেয়ে ভাল কোন লোক নেই। তিনি আমাকে এমন একটি কথা বলেছেন, যে কথা নভী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। রবিয়ার পুত্ররা বললো, দেখ আদাস, এই লোক যেন তোমাকে তোমার ধর্ম বিশ্বাস থেকে সরাতে না পারে। তোমার ধর্ম এ লোকের ধর্মের চেয়ে ভাল।
কিছুক্ষন অবস্থানের পর রসুলুল্লাহ (সাঃ) বাগান থেকে বেরিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। মানসিকভাবে তিনি ছিলেন বির্পযস্ত। কারণে মানায়েল নামক জায়গায় পৌঁছার পর আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এলেন, তাঁর সাথে পাহাড়ের ফেরেশতাও ছিলেন। তারা আল্লাহর রসুলের কাছে অনুমতি নিতে এসেছিলেন যে, যদি তিনি বলেন, তাহলে এর অধিবাসীদের দু’টি পাহাড়ের মধ্যে পিষে দিবেন।
এ ঘটনার বিবরণ বোখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুলকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওহুদের যুদ্ধের থেকে মারাত্মক কোনদিন আপনার জীবনে এসেছিলো কি ? রসুলুল্লাহ (সাঃ)’বললেন, তোমার কওম থেকে আমি যে বিপদের সম্মুখিন হয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল তায়েফের দিন। আমি আবদে ইয়ালিল ইবনে আবদে কুলাল সন্তানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম। কিন্ত তারা আমার দাওয়াত গ্রহণ করেনি। আমি দুঃখ-কষ্ট ও মানসিক বির্পযস্ত অবস্থায় “কারোন ছাআলাবে” পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাষ ফেললাম। সেখানে মাথা তুলে দেখি মাথার ওপরে এক টুকরা মেঘ। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি সেখানে হযরত জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি আমাকে বললেন, আপনার কওম আপনাকে যা যা বলেছে, আল্লাহ তাআলা সবই শুনেছেন। আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতাদের পাঠানো হয়েছে। এরপর পাহাড়ের ফেরেশতারা আমাকে আওয়াজ দিলেন, সালাম জানালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল, হ্যাঁ এ কথা সত্যই। আপনি যদি চান তাহলে আমরা ওদেরকে দুই পাহাড়ের মাঝে পিষে দিব। নবী করিম (সাঃ) বললেন, না, আমি আশাকরি আল্লাহ তাআলা ওদের বংশধরদের মধ্যে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা শুধু আল্লাহর এবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না।
রসুলুল্লাহ (সাঃ)’র এই জবাবে তাঁর দূরদর্শিতা বিচক্ষনতা, অনুপম ব্যক্তিত্য ও উত্তম মানবিক চেতনার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। মোট কথা, আসমানের উপর থেকে আসা গায়েবী সাহায্যে তাঁর মন শান্ত হয়ে গেল। রসুলুল্লাহ (সাঃ)’মক্কার পথে পা বাড়ালেন। ওয়াদিয়া নাখালা নামক জায়গায় এসে তিনি থামলেন। এখানে তাঁর অবস্থানের মত জায়গা ছিল দুইটি। এক জায়গার নাম “ আসসাইলুল কাবির” অন্য জায়গা হলো জায়মা। উভয় জায়গায় পানি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সজীবতা বিদ্যমান ছিল। এ দু;টি জায়গার মধ্যে তিনি কোথায় অবস্থান করেছিলেন, সে সম্পর্ক সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
নাখালায় রসুলুল্লাহ (সাঃ)’ কয়েকদিন কাটান। সেখানে আল্লাহ রব্বুল আলামিন, জীনদের দুইটি দল তাঁর কাছে প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনের দুই জায়গায় “সূরা আহক্বাফ ও সূরা জীনে” এদের কথা উল্লেখ রয়েছে।
{চলবে}