টপিকঃ বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

বিষাদ-সিন্ধুর আমাদের গৃহ প্রবেশ ঘটেছিলো পরম আনন্দের দিনে। কারা যেনো একসাথে মীর মোশাররাফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু, মোকছেদুল মুমেনীন আর আবুল হাসানাতের বিশেষ বিজ্ঞানের একখণ্ড বই আমাদের বিয়েতে উপহার দিয়েছিলো।

পরদিন সকালে উপহার উন্মোচন পর্ব চলছিলো। আমি বানরের পিঠা ভাগের মতো প্রাইজ-বন্ড, নগদ টাকাগুলো নিজের কাছে রেখে অন্যান্য জিনিসগুলো নবলব্ধ সঙ্গিনীর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলাম। জানা গেলো বিষাদ-সিন্ধু বইটি সে পড়েনি। সুতরাং ওটাও গেলো তার ভাগে। মোকছেদুল মুমেনীনটা নিয়ে একটু ইতস্ততা ছিলো। মা বললেন, বউমা, এটাও তোমার। তৃতীয় বইটি আমার হাতে দিয়ে ভ্রুকুটি হেনে নিম্নস্বরে মেসেজ দিলো বঁধুয়া, বিজ্ঞানের ছাত্র, এটা তোমার। বললাম, তথাস্তু। একটু যেনো জোরেই বলে ফেললাম, রিভিশন দেয়া যাবে, হাইস্কুলে থাকতে পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের মলাট লাগিয়ে পড়ার টেবিলে বসেই শেষ করেছিলাম এটা। ঘরে উপস্থিত কয়েকজন শুনে মুচকি হাসলো। কেউ কেউ গম্ভীর থেকে না শোনার ভাণ করলো।

দিনের শেষে বিশেষ বিজ্ঞান বইটা আমাদের আলাপনে আবারো এলো। বঁধুয়া এমন আশংকা প্রকাশ করলো যে তার প্রচণ্ড রাগী পিতাজী পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের মলাটের আড়ালে অন্য ধরনের বিজ্ঞান বই পড়ার কাহিনীটা আগে জানলে হয়তোবা এই সম্পর্কটা হতেই দিতেন না।

বেশী কিছু না বলে জিজ্ঞেস করলাম, কাবিননামায় সই করেছো?
-করলাম তো।
-শর্তগুলো দেখেছিলে? ওগুলো দেখেই কিন্তু তোমার আব্বা বিয়েতে সন্মতি দিয়েছেন।
-কিসব শর্ত?
-অন্যতম শর্ত হলো, স্বামীকে ‘না মরদ’ হওয়া চলবে না।
-তাই বুঝি? ছিঃই।

অতঃপর তার কথাই ফিরিয়ে দিলাম তাকে।
-বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম এবং আছি। তত্ত্বীয় বিজ্ঞান শেষ করেছি হাইস্কুলে আর এখন সময় ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চার।

বঁধুয়াকে হপ্তা দুয়েক পর উড়িয়ে নিয়ে গেলাম আরব দেশে, বিষাদ-সিন্ধুর পটভূমি ছিলো যেখানে। বইটাও গেলো সংগে সংগে। পুরুষ মানুষের সময় কেটে যায় কাজে। বই ম্যাগাজিন না থাকলে মেয়েদের বিষণ্ণ সময় পাড়ি দিতে হয় মরুভূমির দেশে।

বাসায় ফিরে বিষাদ-সিন্ধু বিষয়ক আলাপ রোজই হয় কিছু না কিছু। সে কথা বলে বইয়ের প্রসঙ্গে। আমি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খবর আমদানী করি অফিস থেকে। আমাদের নবী মোহম্মদ (সাঃ) বড় দৌহিত্রের নাম রাখলেন ‘হাসান’, যার অর্থ সুন্দর।
ছোটোটিও কি কম সুন্দর! তাই নামকরণ করলেন ‘হোসেন’, অর্থাত ‘ছোটো সুন্দর’। আর অফিসের ইয়ামেনি ড্রাইভারের  নাম কিনা ইয়াজিদ। এই সাংঘাতিক নাম তার বাবা-মা রাখলো কি করে, ভেবে পাচ্ছিলাম না। একদিন সৌদি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম। সে বললো, কি ক্ষতি? আমি বললাম, মোয়াবিয়ার ছেলে ইয়াজিদ না ছিলো হাসান-হোসেনের হত্যাকারী? এক মুহূর্ত না ভেবে উনি বললেন, ব্যাপারটা ছিলো আগাগোড়া ‘পলিটিকাল’।

একদিন বাসায় ফিরে দেখি বঁধুয়ার চোখে জল, সীমারের নির্দয়তা তাকে আহত করেছে। করুণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, বিষাদ-সিন্ধুর সব কি সত্যি? বললাম, এখানে এসে কিছু পড়াশুনা করে যা জেনেছি, কিছু কিছু বিষয় লেখকের কল্পনা- এবং আবেগ- নির্ভর। যেমন কিনা ইমাম হানিফার প্রত্যাবর্তন। বিশ্বাস করলো কিনা জানিনা, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমার পানে।

পঁচিশ বছর পর সেই ‘শূন্য দৃষ্টির’ আসল কারণ জানা গেলো। কানাডায় দাম্পত্য জীবনের রজত জয়ন্তীর একদিনে বঁধুয়া মুখ খুললো এ ব্যাপারে।

-জেদ্দায় বিষাদ-সিন্ধুটা ফেলে এসেছিলাম কেনো জানো? একটু যেনো সিরিয়াস ভাব তার চোখে মুখে।
-তোমার পড়া হয়ে গিয়েছিলো বলে। আন্দাজে ঢিল ছুঁড়লাম।
-বইটাতে অত্যন্ত অসত্য কথন রয়েছে, তাই। বলতে বলতে সে আমার ঘনিষ্ট হলো।
-যেমন?
-লোমহীন বক্ষের পুরুষ নির্মম এবং পাষাণ হৃদয়ের হয়, এটা মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে। আমাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। পঁচিশ বছর ধরে জমানো কান্নায় ভিজে গেলো আমার প্রায় পশমহীন বুকের সবটা।

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

বিষাদ সিন্ধুরের কথা মনে হলে আমার অনেক কষ্ট লাগে। হাসানের এত মহত হতে পৃথিবীর মানুষ এখনো বুঝলো না। বইটার কথা বলে একটা পুরনো কথাও মনে পরে গেল। বিষয়টা বলেই ফেলি। আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম। হঠাত্ আমাকে ছ্যাক দেয়। তাকে "বিষদ সিন্ধু" বইটা উপহার দেয়ার জন্য কিনি তাকে না পেয়ে অন্য আরেক একজনকে দিয়ে বইটা পাঠাই। পরে তাকে জিগাস করতে যায়। বইটা পেয়েছে কিনা। আমাকে অনেক অপমান করে। কিছুদিন আগে আবার দেখা করতে। আমার একবন্ধু কাছে বলে আমি দেখা করি সেদিন ও অপমান হজম করি। সে কথা গুলো মনে করিয়ে দিলে। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ.........

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

ওরে রোমান্টিক রে........... blushing

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

ভাই আমি ঐখানে টাইপিঙ্গে ভুল করছি। সেটা হলো শেষে, দিলেন টা না লেখে দিলে লেখেছি। আমি অনেক বার সম্পাদনা করার চেষ্টা করেছি কাজ হয়নি। তাই মাফ করবেন। না ভাই জীবনে শাদী করবোনা ছ্যাক টুকু বুকে নিয়ে থাকবো। লেখা কালার করেন কিভাবে জানাবেন। ভাই ঐখানে টাইপিঙ্গে ভুল করছি। সেটা হলো শেষে, দিলেন টা না লেখে দিলে লেখেছি। আমি অনেক বার সম্পাদনা করার চেষ্টা করেছি কাজ হয়নি। তাই মাফ করবেন। না ভাই জীবনে শাদী করবোনা ছ্যাক টুকু বুকে নিয়ে থাকবো। লেখা কালার করেন কিভাবে জানাবেন। ভাবতেছি আপনাদের সাথে ছ্যাকটা শেয়ার করবো যদি আপনার শুনেন।

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

কেউ বলেন না লেখা কালার করে কিভাবে।

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

১০ সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন ইলিয়াস (১০-০২-২০১২ ০৯:২৫)

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

 [color=green]আপনার যা ইচ্ছা তা লিখুন[/color] [color=magenta]আপনার যা ইচ্ছা তা লিখুন[/color]

১১

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

১২

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

হেব্বী রোমান্টিক। আপনার লেখার ষ্টাইল খুব সুন্দর।  thumbs_up

১৩

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

১৪

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

উদাসীন'এর ওয়েবসাইট

লেখাটি CC by-nc 3.0 এর অধীনে প্রকাশিত

১৫ সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন খন্দকার আলমগীর হোসেন (১০-০২-২০১২ ১৮:৫৪)

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

১৬

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী

ওরে আপনার ভাষারে...। আমি আপনার সাগরেদ হবো। এমন প্রাঞ্জল উপস্থাপনা আজকাল কমই দেখি। ক্ষুধা মেটাতে 'পুরান সোনা'দের স্বরণাপন্ন হইতে হয়।  tongue_smile আপনার লেখার মধ্যে শব্দ চয়নগুলো মুগ্ধ করার মতোন।  dream আহা। এই অধম আপনার ভক্ত হই গেলাম। blushing

তবে এমন হাইলী আবেগতাড়িত লেখাগুলান আমার মতো একাকীত্বে ভোগা পাবলিকদের জন্য বড়ই সাংঘাতিক...। dontsee

১৭

Re: বিষাদ-সিন্ধু আর এক জীবন কাহিনী