টপিকঃ আমি এবং আমার ক্যাম্পাস : পর্ব ৬ : অতিথি: আহমাদ মুজতবা
মুজতবা নিজে থেকেই গোপন বার্তা দিয়ে জানালো সে একটা পর্বে আসতে চায়। আমি রাজি হয়ে গেলাম, কারণ জানি মুজতবা খুব গুছিয়ে একদম প্রফেশনালদের মত সব লেখবে। মুজতবাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। হি ইজ এ গ্রেট পারসন। অসুস্থ বলে তাকে তেমন কোনো হেল্পই করতে পারি নাই। এজন্য সরি: স্বপ্নীল
"আমি এবং আমার ক্যাম্পাস" সিরিজের সব পর্ব এক জায়গায় !!!
ক্যাম্পাস সম্পর্কে কিছু কথা.........
- Southeast Missouri State University বা সংক্ষেপে SEMO যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী স্টেইটের কেইপ গিরারড্যু শহরে ৪৩০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত । এর প্রধান ক্যাম্পাস ছাড়াও ড্যান্স এবং মিউজিকের জন্য আরেকটি ক্যাম্পাস রয়েছে যেটা মিসিসিপি নদীর তীরে অবস্থিত। ১৬ টি আবাসিক হল আর ১৮ টি একাডেমিক বিল্ডিং, ১ টি সুবিশাল লাইব্রেরী ২ টি আউটডোর এবং ২ টি ইনডোর স্টেডিয়াম নিয়ে আমাদের এই ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পুরোনো বিল্ডিং হচ্ছে একাডেমিক হল যেটা ১৮৭৩ সালে প্রথম স্থাপিত হলেও পরে আবার এটাকে ভেংগে নতুন রূপ দেয়া হয় ১৯০৩ সালে।
বর্তমানে পড়ালেখার বিষয়..........
- আমি এখানে ভর্তি হয়েছি মূলত প্রি ফার্মেসী করার জন্যে। প্রি-ফার্মেসী হলো যে কোনো ফার্মেসী স্কুলে ঢুকার আগে একটা ২ বছরের ব্যচেলর ডিগ্রী। বেসিকলি এই দুই বছরের সব সাইন্স রিলেটেড সাবজেক্ট পড়ে আমাকে ফার্মেসী সম্পর্কে হালকা পাতলা নলেজ প্রদান করাই এর উদ্দেশ্য। এইটা কম্প্লিট করা মানে ফার্মেসী স্কুলে ঢুকার যোগ্যতা অর্জন করা। তাই প্রি-ফার্মেসী ভালো করে শেষ করে ভালো একটা ফার্মেসী স্কুলে পড়াটাই লক্ষ্য। উল্লেখ্য যে আমাদের এই স্কুল ফার্মেসী স্কুল না।
আমাদের প্রতি বছরে মোট দুটি সেমিস্টার। একটা হলো স্প্রিং সেশন যেটা জ্যনুয়ারী থেকে শুরু হয়। এই সেশনে হাড় কনকনে শীতে ক্লাস করা লাগে। টানা ৪ মাসের সেমিস্টার শেষে ৩ মাসের সামার ভ্যকেশন এরপর শুরু হয় ফল সেশন যেটাতে খুবই সহজে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া যায়। নরমালি এই সেশন আগস্ট/সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়।
বর্তমান সেমিস্টার যেমন যাচ্ছে.......
- সেমিষ্টার শেষ হয়ে গেছে দেখতে দেখতে তবে খুবই ভালো কেটেছে সেমিষ্টার ৩ টা এ আরেকটা বি নিয়ে মোটামুটি আমি সন্তুষ্ট। পড়াশোনা খুব একটা করা লাগে নাই কারণ ৩ টা সাবজেক্টের ম্যাক্সিমাম জিনিসই আগে স্কুলে পড়া ছিলো। তবে সাইকোলজী সাবজেক্ট টা বড়ই পেইন দিয়েছে এজন্য রেজাল্টও মনমতো হয় নি। তবে সব মিলিয়ে খারাপ না।
ক্যাম্পাসে প্রিয় টিচার, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য কাছের মানুষ যারা আছে তাদের সম্পর্কে......
- তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সবচেয়ে অপছন্দের সাবজেক্টের টিচার কিন্তু আমার সবচেয়ে পছন্দের। অসাধারণ লেকচার দেয়ার ক্ষমতা আমার মনে হয়েছে। ভদ্রলোক মাত্র ৪ টা পি,এইচ,ডি করে এখনও যে পড়াশোনা প্রফেশনের সাথে জড়িত আছেন সেটাই সবচেয়ে অবাক করার বিষয়। তার কোর্স পলিসি আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে, কারণ সে মাল্টিপল চয়েজ দিয়ে কোনো পরীক্ষা নেয় না। সবগুলো পরীক্ষাতেই আমাদের বড়ো বড়ো রচনা লিখতে হয়েছে ১০০ মার্কের যাতে করে পুরোপুরি ভাবে প্রতিটা টপিক সম্পর্কে জানাও হয়েছে।
এছাড়াও ক্যাম্পাসের অন্য ফ্রেন্ডরাও অনেক ফ্রেন্ডলি, বিশেষ করে আমেরিকান রা। এদের সাথে মিশতে পারলে এরা খুব হেল্পফুল। সবচেয়ে ভালো লেগেছে পরীক্ষার মধ্যে নকল করার যেমন একটা বাজে টেন্ডেন্সি বাংলাদেশের ইউনিতে দেখেছি সেটা এদের মাথায়ও আসে না কোনো কারণে। যা পারে তাই দিয়েই রেজাল্ট করে যায়। যদিও আমার কাছে স্টুডেন্ট গুলো কে ম্যাথমেটিক্সে একটু খারাপ মনে হয়েছে। যদিও বলা ঠিক না আমি নিজেও ম্যাথে অতো ভালো না।
এছাড়াও বাংগালী কয়েকটা ফ্রেন্ডও অনেক হেল্পফুল ছিলো। আসলে নতুন একটা জায়গায় আসলে ২-১ জন বাংগালী পাওয়া যে কতটা ভাগ্যের ব্যাপার সেটা সত্যিই টের পেয়েছি। ওদের কারণে অনেক কিছু খুব সহজেই ধরতে পেরেছি এবং কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। যদিও কতগুলা আজে বাজে ছেলের কারণে অনেকটাই বাংগালীরা অপমানিত হয়েছে তা না বললেই নয়।
ক্যাম্পাসে হয়ে যাওয়া কোন বিশেষ প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান সম্পর্কে স্মৃতিচারন.....
- ক্যাম্পাসে আমার হ্যালইন নাইট খুবই ভালো কেটেছিলো যেটার বর্ণনা আমি আরেকটি টপিকে করেছি। এছাড়াও আমাদের অরিয়েন্টেশনের পার্টিটাও ছিলো রমরমা পুরাই। এই পার্টিটা আসলে একটু ডিফরেন্ট করে করা হয়। সব দেশের ছেলে মেয়েদের যার যার কালচারাল ড্রেস পড়ে পার্টিতে আসতে বলা হয়। তারপর কম্পিটিশন হয় যে কোন দেশের ড্রেস কতটা সেই কালচার রিফ্লেক্ট করছে, আমাদের দেশ প্রথম না হতে পারলেও আমার ফ্রেন্ড তামান্নার কল্যাণে আমরা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলাম। এছাড়াও মনে পড়ে স্পিড ডেটিং এর কথা। এই প্রোগ্রামটা অনেক মজার, যেমন সব ছেলেকে বলা হয় র্যান্ডমলি মেয়ে চুজ করতে ১০ টা লিমিট থাকে। এর মধ্যে সবার সাথে খুব দ্রুত আপনার ডেইট করতে হবে। আর কি নির্দিষ্ট সময় দেয়া হবে এর মধ্যে সুন্দর কথা বার্তা বলে মেয়েটাকে ইম্প্রেস করা। অত:পর বেস্ট কাপল গুলাকে ড্যান্স ফ্লোরে নাচতে দেয়া হয়। আমি তো পুরাই
কয়েক জনের সাথে কথা বলেই গিভ আপ করেছি, প্লাস ক্ল্যসিকাল ড্যান্সের আগা মাথা কিছুই জানি না।
ক্যাম্পাসে যাওয়া থেকে একদম বাসায় ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটা দিন যেভাবে কাটে......
- বাসা থেকে বের হলেই ক্যাম্পাস। এই কুয়েশ্চেন এর উত্তর কি দিবো বুঝতে পারছি না। তাও বাসা থেকে বের হই হাতে সময় থাকলে ভ্যনডাইভার হলের সামনে দাড়িয়ে ইউনিভার্সিটি শাটলের জন্য ওয়েইট করি, সেলফোনে শাটল ট্র্যক করি একটু পর পর। যদি দেখি কোনো কারণে ডিউরেশন ২-১ মিনিট বেড়ে গেছে তাহলে চোখ বন্ধ করে হাটা দেই। আর শাটল পাইলে এবং হাতে টাইম থাকলে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে নির্দিষ্ট স্থানে নামি, মজাই লাগে।
প্রথম ভর্তি হবার পর দেখা ক্যাম্পাস আর এখনকার ক্যাম্পাসের পার্থক্য .......
- ভর্তি হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন দেখি নাই। তবে ম্যকগিল হল থেকে অনেক ঘুরে জনসন হলে যাবার যেই রাস্তাটা সেখানে একটা ব্রীজের কাজ চলছে। মনে হয় আর ২/১ মাসে শেষ হয়ে যাবে। কাজ খুবই ঢিলে তালে আগাচ্ছে কোনো কারণে নাহলে এইটুকু কাজে সময় লাগার কথা না।
ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া বিশেষ কোন মজার ঘটনা...........
- মজার ঘটনা বেশীর ভাগই আমার স্কুল জীবন সিরিজে শেয়ার করেছি। তারপরেও এই মূহুর্তে মনে পড়ছে যে আমাদের কমন কিচেনে এক চাইনিজ গরুর মাংস মাইক্রোওয়েভে দিয়েছিলো রান্না করতে। বেচারা ৪০ মিনিট দিয়ে চলে গিয়েছিলো এদিকে আমাদের চাইনিজদের উপর মেজাজ খুব খারাপ কারণ গত কয়েকদিন আমাদের খাবার কারা জানি খেয়ে ফেলেছে কমন ফ্রিজ থেকে বের করে। সুতরাং সুন্দর ২০ মিনিট না যেতেই ওর কাচা মাংস বের করে পাশে রাখলাম। যদিও আরো বিশ মিনিটে কতটুক সিদ্ধ হইতো গরুর মাংস আল্লাহই জানে। মাংসের সাথে কি কি ছিলো নামও জানি না। পরে আর কি আমরা মাইক্রোওয়েভ ইউজ করতেছি নিজেদের মতো। বেচারা আইসা শুধাইলো টাইম মতো বের করছি নাকি, আমরা বললাম হ্যা পার্ফেক্ট। তারপর আর কি খিদের চোটে গপ গপ করে কাচা মাংসই খেয়ে ফেললো। হায়রে চাংকু!!
ক্যাম্পাসের যে দিকটি সবচে বেশি ভাল লাগে.........
- ক্যাম্পাসের বিশালতা খুবই ভালো লাগে। এতো বড়ো এরিয়া, যা জুড়ে হাটলে শুধু নিজেকে রাজা মনে হতো। এছাড়াও কৃত্রিম ফলস গুলাও খুব সুন্দর লাগে। ভালো লাগে ক্যাম্পাসের সাথে বয়ে যাওয়া মিসিসিপি নদী। যেটার পারে প্রায়ই মন খারাপ হলে বসে থাকতাম আর সুন্দর স্মৃতিচারণ করতাম।
যে দিকটি একদমই ভাল লাগে না..........
- ভালো লাগে না একটা দিক, ক্যাম্পাসের উচু নিচু রাস্তা গুলা। এইগুলা বেয়ে উঠতে আর নামতে যে কি কষ্ট হয় সেটা বলার বাহিরে। আর একটা জিনিশ ভালো লাগে না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যে হলে থাকে সে হলের গ্রাউন্ড ফ্লোরের কম্পিউটারের মাউস ঠিক মতো কাজ করে না, এটা গত ২ মাস ধরে এমন পরিবর্তন করা হচ্ছে না।
বর্তমান ক্যাম্পাসের উন্নতিতে কোন মতামত বা পরামর্শ.......
- বর্তমান ক্যাম্পাসের উন্নতি নিয়ে আমার চিন্তার কোনো কারণ নেই যেখানে গভর্ণমেন্ট নিজেই বিশাল আয়োজন করছেন চিন্তা ভাবনা করে। অলরেডি কয়েকটি প্রস্তাবনা এই বিষয়ে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসে আউটডোরে যেসব সিড়ি আছে সেগুলোকে এসকেলেটরে পরিণত করা হবে। ক্যাম্পাসে সর্বাধিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেকটি নতুন হল বানানো হবে। ক্যাম্পাসের এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং এ যাবার জন্য সব জায়গায় শেড থাকবে যেটা স্টুডেন্টদের তাপ, বৃষ্টি বা বরফ থেকে সেইফ রাখবে।
ছবিগুলো তোলার সময়কার অভিজ্ঞতা .........
- আমি ছবি তুলতে পারিই না বলতে গেলে সুতরাং টুক টাক যা পেরেছি যখন পেরেছি তুলার ট্রাই করেছি। এই টপিকের দ্বায়িত্ব পাবার পর এমন শীত নেমে গিয়েছিলো যে বাইরে গিয়ে ঐভাবে হাত বের করে ছবি তুলাও সাহসের ব্যাপার।