টপিকঃ বড়ো আদরের
ভূমিকা
আমার বড়ো আদরের ছোট ভাই যে বছরখানেক আগেও দেশে ছিল। কম্পিউটারকে খুব ভালোবাসতো। চমৎকার একটা চাকরী জুটিয়ে নিয়েছিলো চা বাগানে। কাজ হলো, কোম্পানীর পিসিগুলো ল্যান করা, ল্যান ঠিকমতো কাজ করছে কিনা- দেখাশোনা করা আর চা-শ্রমিকদের মাসিক বেতন সংক্রান্ত ডাটা এন্ট্রি করা।
চা বাগানে জয়েন করার সাথে সাথে বাংলো পেয়েছিলো। টিলার উপরে চমৎকার বাংলো। আমি গিয়ে ওর ব্যাচেলর সংসারের যা কিছু লাগে তা গুছিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। রান্না- বান্নাসহ ওর ব্যক্তিগত কাজের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ কাজের লোকও দিয়েছিলো।
এ চাকরীর পাশাপাশি ওর ছোট-খাটো একটা ব্যবসাও ছিল। রেডিমেইড পোশাকের দোকান। যদিও মফস্বলের দোকান তবুও ওরকম একটা দোকানের আয় থেকে আস্ত একটা সংসার চালানো যায়। এছাড়া শেয়ার ব্যবসায়ও টুকটাক আনাগোনা ছিল তার। সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু বিধি বাম!
একদিন
শুনশান বাংলোতে থাকতে রাতে ভয় করে আর বেতন কম- শুধু এ দু'টো অজুহাতে একদিন হুট করে চাকরীটা ছেড়ে দিলো সে। কিছুদিন পর দোকানটাও বিক্রি করে দিলো। পজেশনসহ। বিক্রি করলো মোটরসাইকেল। শেয়ার। বললো, ষ্টুডেন্ট ভিসা পেয়েছি। লন্ডন যাবো।
অনেক বুঝালাম। প্রিয় বাংলাদেশের সাথে বৃটেনের পার্থক্য। উইন্ডোজের সাথে উবুন্টুর পার্থক্য। বুঝালাম, বাংলাদেশের আজে বাজে কিছু কলেজের মতো কলেজ লন্ডনেও আছে। ষ্টুডেন্ট ভিসা দেয়াই যাদের মূল ব্যবসা। অনেক করে বুঝিয়েও কোন কাজ হলো না।
ভালো থাকিস ভাই
একদিন সত্যিই সে চলে গেলো লন্ডন। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে গেলেও আমিই এয়ারপোর্টে সি-অফ করলাম। প্রায় ছ'মাস সে সম্পূর্ণ বেকার ছিল। হন্যে হয়ে ঘুরেছে একটা কাজের জন্য। যে কোন কাজ। পায়নি। আধপেটা খেয়ে না খেয়ে থেকেছে।
মনে পড়ে
কম্পিউটারের এডভান্স ইউজার ছিলো সে। সেই বৃটিশ আমলের একটা ল্যাপি, ডেল ইন্সপায়রন না কি যেন নাম, এখনও আছে বাড়ীতে। কি যেন কি মনে করে ওটা বিক্রি করেনি সে। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বড়ো আদরের। কোনদিন নিজ হাতে থালা ধুয়ে ভাত খেতে দেখিনি।
দুঃখ হয়
আজ সে কখনো ইংরেজদের বাসন মাজছে। কখনো বা সদাই-পাতি ইংরেজদের বাড়ী বাড়ী পৌঁছে দিচ্ছে। থিতু হওয়ার মতো কোন কাজ নেই।
লন্ডন থেকে পরিচিত কেউ দেশে এলে ফিরে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করি, "ভাই, তোর জন্য ওনার কাছে কি দেবো?"
শীতে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "শুধু শীতের কাপড় দাও। পুরনো বা আনফিট- যেমনই হোক।"
উপসংহার
আমি আমার ছোট ভাইকে আটকাতে পারিনি। এ টপিক পড়ে আপনি হয়তো আপনার ভাইকে যেভাবেই হোক আটকে দিতে পারবেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আর যেখানেই হোক, লন্ডন যেতে দিবেন না, প্লিজ। বৈশ্বিক মন্দায় লন্ডনের অবস্থা খুবই খারাপ। জাপান সুনামির পর দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। ষ্টুডেন্ট ভিসাধারীদের জন্য কোন কাজ নেই।