টপিকঃ ইলিশ কিনে ইলিয়াস ভাই বাড়ি ফেরার পথে...
পুরো গল্পটি এক সাথে পাবেন নীচের টপিকে:
ইলিয়াস ভাইয়ের ইলিশ (প্রজন্মের মেগা উপন্যাস(সমাপ্ত সহ))
ইলিয়াস ভাই। হ্যা, আমাদের ইলিয়াস ভাই সেদিন বড় আকারের একটা ইলিশ মাছ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। পথের মধ্যে কি কি হলো সেটাই তুলে ধরছি।
বাজার থেকে বিশাল ইলিশটা কিনে তিনি সেটা হাতে ঝুলিয়ে হাঁটা পথে রওনা দিলেন বাড়ির দিকে।
পথের মধ্যে একটু দূর থেকে দেখলেন সাইদুল ভাই ম্যাগনেফাইং গ্লাস দিয়ে কি যেন খুঁজছেন।
ইলিয়াস ভাই : কি সাইদুল, কি খোঁজো?
সাইদুল : মিয়া ভাই, দেখতাসি কে কয়ডা পোস্ট করলো আর কার রেপু কইডা হইলো।
তা মাছটার দাম নিলো কতো?
ইলিয়াস ভাই : এগারশো টাকা। আচ্ছা আসি কেমন।
আবারও কিছু দূর যেয়েই উনার ডেডলক ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল।
ডেডলক : @ইলিয়াস ভাই, মাছটা নিলো কতো?
ইলিয়াস ভাই : এগারশো টাকা।
ডেডলক : এরকম একটা মাছ কোথায় যেন দেখেছি..... কোথায় যেন দেখেছি। রিপোস্ট বলে মনে হচ্ছে।
ইলিয়াস ভাই : ঐ মিয়া মাছের আবার রিপোস্ট কি?
ডেডলক : ওহ মনে পড়ছে, কে যেন ঠিক এই রকম একটা মাছের ছবি পোস্ট করেছিল।
মুখটা কিন্চিত বাঁকা করে ইলিয়াস ভাই সামনের দিকে হাঁটা ধরলেন। কিছু দূর যেতেই দেখেন কে যেন পথের পাশে সংবাদপত্রে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কি যেন পড়ছেন। আরও কাছে যেতেই বুঝতে অসুবিধা হলো না যে উনি হচ্ছেন আউল ভাই।
ইলিয়াস ভাই : কি আউল সাহেব, কি করেন?
আউল : ভাই, পেপার ঘাইট্টা সরকারের দোষগুলান নোট করতাছি।
ইলিয়াস ভাই : ভাল, ভাল। তাহলে আসি হ্যা।
আউল : আরে বড় ভাই, হাতে বিশাল একখান ইলিশ দেখতাছি। ঐডার পেটে তো ডিম ভর্তি। সরকার কি যে করে! এখন ডিম ছাড়ার সময় ইলিশ ধরবার দিছে। এই সরকাররে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। পানি সম্পদ মন্ত্রীর আগে পদত্যাগ চাই। আজই আন্দোলন শুরু করুম। মিয়া ভাই, আপনি আছেন নাকি আমার লগে?
ইলিয়াস ভাই : ইয়ে মানে আমি আপাতত আসি, কেমন।
আউল : আরে বড় ভাই মাছের দামটাতো বলে যান।
ইলিয়াস ভাই : এগারোশো।
মুখটা কাচুমাচু করে ইলিয়াস ভাই হাঁটা ধরলেন। দূর থেকে কে যেন হেঁটেঁ আসছেন। কাছে যেতেই দেখেন উনি হচ্ছেন উপল ভাই।
উপল : আরে ভাইজান, মাছটা পড়লো কতো?
ইলিয়াস ভাই মাথার ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, একটা কাগজ কলম দিন। মাছের দামটা লিখে গলায় ঝুলিয়ে রাখি। সারা রাস্তায় এই দাম বলতে বলতে আমি কাহিল।
উপল : হে হে, কোন চিন্তা করবেন না। এক্ষুনি ঔষধ লিখে দিচ্ছি, খেলে ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। আচ্ছা বড় ভাই, মাছটা কেমন পঁচা পঁচা দেখাচ্ছে। দেন দেখি একটু পরীক্ষা করি।
ইলিয়াস ভাই : উপল, তুমি আমার মাছের ক্ষেত্রেও ডাক্তারী ফলাবা নাকি? রাগে উনি আবারও হাঁটা শুরু করলেন।
উপল : আরে ভাই, মাছের দামটাতো কয়ে যান।
কোন মতে সেখান থেকে পালালেন উনি।
সারা রাস্তায় মাছের দাম বলতে বলতে পুরা আউলা হয়ে গেছেন তিনি। মেজাজ একেবারে খিটখিটে হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। বেশী রাগ হচ্ছে ঐ মাছ বিক্রেতার উপর। ঐ ব্যাটাকে বললাম যে মাছটা কেটে ব্যাগে ভরে দিতে। ব্যাটা বলে, ভাইজান মাছটা হাতে করে নিয়ে যান, এলাকায় আপনার দাম বাড়বে। কথাটা তখন বেশ মনে ধরেছিল। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, দড়িতে মাছ ঝুলিয়ে আনাটাই ভুল হয়েছে। এতো বড় মাছটা অবশ্য ছোট্ট ব্যাগে আটছিলও না।
অবশেষে ইলিয়াস ভাই রাস্তার পাশের এক হোটেলে বসে মাছটি কেটে ছোট্ট ব্যাগটিতে ভরে আবারও হাঁটা ধরলেন।
কিছু দূর যেতেই রাস্তার পাশে মাঠ থেকে সূরেলা কন্ঠে কে যেন ডেকে উঠলেন তাকে। ভাইয়া, ভাইয়া কোথায় যান?
ইলিয়াস ভাই মুখ ফিরিয়েই চমকে উঠলেন। আরে এ যে শান্ত বালক। তা মাঠের মধ্যে কি করো?
শান্ত বালক : ভাইয়া, আলু ক্ষেতের তথ্য সংগ্রহ করছিলাম, সেই সাথে কানা বকের ছবি তুললাম। আরেকটা আজব তথ্যও পেয়েছি ইতিমধ্যে। বিচিত্র পৃথিবীর কি সুন্দরতম জায়গায় না এটা!
ইলিয়াস ভাই : থাক থাক। একবারে টপিকেই ডেকমুনে। আমার মাথা ঘুরছে। আমি তাইলে যাই।
শান্ত বালক : ভাইয়া, আপনার হাতে কি?
ইলিয়াস ভাই : দেখতেই তো পারছো এটা বাজারের ব্যাগ।
শান্ত বালক : ওহ আপনি বাজার থেকে ফিরলেন নাকি? তা ব্যাগের মধ্যে কি?
ইলিয়াস ভাই : ব্যাগের মধ্যে বিশাল একটা ইলিশ মাছ কাটা অবস্হায় আছে। এটার দাম নিয়েছিল এগারশো টাকা। এবার উনি টলকাতে লাগলেন। তারপরও বললেন, আর কিছু?
শান্ত বালক : মাছটার দাম চেয়েছিল কতো?
ইলিয়াস ভাই : মনে নাই।
শান্ত বালক : এটা পদ্মার, বরিশালের নাকি চট্টগ্রামের ইলিশ?
ইলিয়াস ভাই : তা আমি জানবো কিভাবে?
শান্ত বালক : ডিম আছে নাকি?
ইলিয়াস ভাই : হ্যা।
শান্ত বালক : ইলিশটার চোখের রং-গায়ের রং কেমন একটু বলেন তো ভাইয়া?
ইলিয়াস ভাই : এসব জেনে তুমি কি করবে? টপিক লিখবা নাকি।
শান্ত বালক : ঠিকই ধরেছেন ভাইয়া। আচ্ছা ভাইয়া, ইলিশটাতো কাটা হয়েছে। তা কয়টা হৃদপিন্ড, কয়টা ফুবরা-নাড়িভূড়ি কেমন ছিল একটু বলুন তো?
ইলিয়াস ভাই মনে মনে বললেন, এবার তো দেখি বড় পাগলের পাল্লায় পড়লাম।
শান্ত বালক : আচ্ছা আগে মাছটা ব্যাগ থেকে বের করেন তো। সবার আগে দরকার ছবি। ফোকাস বিভাগে পাঁচমিশালী করে মাছের ছবিটাও ঢুকায়ে দিবোনে।
কোন মতে দৌড় দিয়ে তিনি সেখান থেকে পালালেন। কিছু দূর যেতেই ইলিয়াস ভাই ঠাস করে এবার রাস্তায় পড়ে গেলেন......... জ্ঞান ফিরলো সন্ধ্যার পরে।
অন্য গ্রামের লোকজন : যাক বেচারার জ্ঞান ফিরেছে। খুব ভাল হলো।
তা ভাই, আপনার নাম কি?
উনি আশেপাশে তাকিয়ে বললেন “ইলিশ”।
সবাই অবাক হয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন। আবার সবাই তার নাম জানতে চাইলো।
উনি আবারও বললেন, “ইলিশ”।
এবার নেতা টাইপের একজন গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার নামটা আগে বলুন তো ঠিক করে।
উনি আবারও বলে উঠলেন ইলিশ... ইলিশ... ইলিশ। ….……..আমার ইলিশ মাছটা কই সেইটা আগে কন?