টপিকঃ গোঁফ না থাকার 'খেসারত'
আগের পর্বগুলো এখানে: প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
শেষ পর্যন্ত আরব মুল্লুকের ‘বানাত’ অর্থাত কন্যাদের বোরখাবিহীন চেহারা দেখার সুযোগ হয়ে যায় যুবকের। কিন্তু রূপচ্ছটায় ভস্ম হওয়া থেকে রক্ষা মিলে। হয়ত মায়ের দোয়ায়। কিংবা পাহারারত সেই মহিলার ঈগল দৃষ্টি তাকে রক্ষা করে।
জেদ্দাস্থ ‘কুল্লিয়াতুল বানাত’ অর্থাত বালিকাদের কলেজ থেকে একটা বড়সড় অর্ডার পেল যুবকের কোম্পানী বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের। চল্লিশ ফুট লম্বা কন্টেইনার ট্রাক ভর্তি মাল এল ইংল্যান্ড থেকে সড়কপথে, ফেরীতে কৃষ্ণসাগর পার হয়ে, তুরস্ক এবং জর্ডানের উপর দিয়ে, সৌদী আরবে ঢুকল তাবুক বর্ডার দিয়ে।
‘বানাত’দের তো আর দেখা যাবে না! যুবক যন্ত্রপাতিগুলো লিস্ট ধরে গোছাতে গিয়ে আদরের হাত বুলিয়ে দেয় এটার ওটার উপর আর থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দেশে হলে দু’একটার ভিতর ঠিক ফোন নাম্বার দিয়ে দিত। এখানে ওসব করে দেশে গলাকাটা লাশ হয়ে না যেতে হয়! সারা পরিবার যুবকের দিকে তাকিয়ে। এছাড়া, আরেকজনের জন্যে অবশ্যই বাঁচতে হবে।
আরবরাই ডেলিভারি দিতে যায়। কেননা আরবিতে কথা বলতে হয়, কাগজপত্রও আরবিতে লেখা। ‘বানাত’দের যন্ত্রপাতি পাঠানো নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হত যুবকের, যদি না কোম্পানীর মালিক সেদিন তার রুমে ডেকে না পাঠাতো।
pH Meter ইনস্টল করতে বালিকাদের কলেজে যাবে তুমি কাল, ঢুকতেই বলল সে। মিশরীয় ইঞ্জিনিয়ারটা ফেল করেছে। মনে হয় সার্টিফিকেট কিনে পাশ করেছে। আরবিতে একটা জঘন্য গালি দিয়ে ফেলল সে।
যুবকের তখন কন্যাদের বোরখাবিহীন চেহারা দেখার কল্পনায় ‘মশগুল’। পারবে কি পারবেনা একমুহূর্ত না ভেবে, বলে বসলো ‘লা মুশকিলা’, কোনো মুশকিল নয়। কোম্পানীর মালিক পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললো, তুমি ‘শাতের’ লোক, আমি জানি তুমি পারবে। আরবিতে ‘শাতের’ মানে করিৎকর্মা।
এখানে বলে রাখা ভালো, যুবক পেশায় ফার্মাসিস্ট, যন্ত্রপাতি কোনদিন ইনস্টল করেনি, শুধু বোরখামুক্ত আরবি ‘বানাত’ অর্থাৎ কন্যা দেখার আগ্রহ তাকে এই চ্যালেজ্ঞ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
সারারাত জেগে ম্যানুয়াল পড়ে যুবক নিজেকে তৈরী করে, গুণ গুণ করে গান গায় একধরণের অজানিত উত্তেজনায়। সকালে বালিকাদের কলেজের গেটে উপস্থিত সে pH Meter সহ। সঙ্গে ইয়েমেনি ড্রাইভার, কথা বলার জন্যে। গেট একদম বন্ধ, কলেজ চলছে। দোতলা কলেজ, এমনভাবে তৈরি, বাইরে থেকে কাউকে দেখার উপায় নেই। অনেক বেল বাজানোর পর ‘জল্লাদ’এর মত এক মহিলা, সম্ভবত দারোয়ান, একটা ঘুলঘুলির মত জায়গা দিয়ে ভয় দেখানোর মত গলায় বলল, ‘বানাত’রা ভিতরে এখন, ‘মামনু’ অর্থাৎ নিষিদ্ধ ‘রিজ্জাল’ মানে পুরুষের প্রবেশ। প্রফেসরদের সাথে কথা বলার পর, সে অবশেষে রাজী হল শুধু ‘মোহান্দেস’কে, অর্থাত ইঞ্জিনিয়ার কে ঢুকতে দিতে। আধখোলা দরজাটা দিয়ে চিড়ে চিপটে অনায়াসে ঢুকে গেল হাল্কা পাতলা ছদ্মবেশী ইঞ্জিনিয়ার, বুভুক্ষু হৃদয়ের সেই বাঙালি যুবক। ‘জল্লাদ’ মহিলা বলল, আমার পিছনে পিছনে থাকবে, আর জোরে জোরে হাততালি দিতে দিতে বলতে লাগল, ‘রিজ্জাল’, ‘রিজ্জাল্। ডানে বাঁয়ে আড়চোখে দেখতে থাকে যুবক, বোরখাছাড়া ‘বানাত’রা আগুনের মত রূপের হল্কা ছড়িয়ে এদিক ওদিক পালাচ্ছে, নিজেদের আড়াল করছে। কয়েকজন কিন্তু ঠাটে বসে রইল, একজন ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, ‘রিজ্জাল’ কই, এতো ‘ওয়ালাদ’।
অফিসে ফিরে এসে প্রথমে অনেক বাহবা পেল যুবক। বালিকাদের কলেজের প্রফেসর ততক্ষণে ফোনে জানিয়ে দিয়েছে, তোমাদের এবারের ইঞ্জিনিয়ারটা বড় ‘মজবুত’ কাজ করেছে, কোথাকার সে?
একজন মিসরীয় একাউন্টেন্টকে পাশে ডেকে যুবক শুধায়, ‘ওয়ালাদ’ মানে কি ভাই? সে বলে, কেন, ‘ওয়ালাদ’ মানে বালক। থ’ হয়ে যায় চব্বিশ বছরের যুবক, এত বড় অপমান! পরে উপলব্ধি করে এর কারণ। সৌদী পুরুষরা প্রায় সবাই গোঁফ রাখে। আর সে ছিল গোঁফ বিহীন। তাই সৌদী কন্যার কাছে তার এই অবমূল্যায়ন।
পরদিন থেকেই যুবক গোঁফ রাখতে শুরু করে।