টপিকঃ যুবকের ‘মাগনা’ আবিষ্কার
১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন একদিন ২৪ বছরের এক যুবক ভাগ্যান্বেষণে উড়াল দিলো সৌদি আরব। তখনও ঢাকা জেদ্দা সরাসরি ফ্লাইট শুরু হয়নি। যেতে হতো করাচী হয়ে। জীবনের প্রথম বিমানযাত্রা জনিত ভয় আর শিহরণ মিশ্রিত এক ধরণের নেশায় বুঁদ হয়ে রয় সে। আর বিমানের উঠানামার প্রাক্কালে ক্রুদের ঘোষণার প্রথম অংশটুকু (যা বলাবাহুল্য ছিল আরবী ভাষায়) না বুঝেও শুনতে থাকে। সেইসংগে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় নিজের কাছে।এ ভাষাটার আপাদমস্তক শেখা চাইই তার।
অঙ্গীকারের প্রথম পরীক্ষাটা হয়ে যায় পরদিনই। যুবকের আসা উপলক্ষে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে অফিসে। কোম্পানির সৌদি মালিক, তাঁর বড়ছেলে, এক হালি মিশরীয়, দু’জন ইয়ামেনী, একজন ইন্দোনেশীয়ার আর ‘আমাগো’ ভাগ্যান্বেষী বাঙালি। মুখচোরা যুবক থেকে থেকে খেয়াল করে, যখনই আরো খাবার নিতে সাধাসাধি চলছে, আরবরা হাত তুলে ‘ব্যস ব্যস’ করছে। মুহূর্তে বুঝে যায় সে, বাংলায় মুড়ি মুড়কির মত ব্যবহার করা শব্দটা তাহলে আরবী থেকে ধার করা! প্রয়োগের সুযোগ এসে গেল নিমিষেই। মালিকের বড়ছেলে এছাম চিকেন টিক্কার একটা বড় টুকরা এগিয়ে দিতেই যুবক বলে ওঠে, ব্যস ব্যস। শুনে শোরগোল ওঠে খাবার টেবিলে। মালিক উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়।বলে, প্রথম দিনেই আরবী শিখে গেল যে, হবে একে দিয়ে। নীরবে চিকেন গলধঃকরণ আর প্রশংসা হজম করতে থাকে করিৎকর্মা বাঙালি।
কে যেন বলেছিল, একটা ভাষা শিখতে শুরু করতে হয় সাইনবোর্ড পড়ে। সেটা মেনে নিয়ে কাজে নেমে যায় সে। সৌদি আরবে ভাষায় জের জবরের ব্যবহার নেই। ওভাবেই ওঁরা বিনদাস পড়ে যায়। ঠেকতে ঠেকতে আমাদের যুবকও পড়তে শুরু করে। সবার আগে শেখে নামগুলো পড়তে, তারপর পুরো সাইনবোর্ড। মুজাওহারাত আব্দুর রহমান অর্থাৎ আব্দুর রহমানের জুয়েলারী, কিংবা দুকান সালমান মানে সালমানের দোকান।
হ্যাঁ, দোকান শব্দটিও আরবী। যার উপযুক্ত প্রতিশব্দ বাংলায় সম্ভবতঃ নেই। নিত্য নূতন বাংলায় বহুল ব্যবহৃত আরবী শব্দের আবিষ্কারে যুবকের নেশা চেপে যায়। আর দেশের সাহিত্য নিয়ে ভাবে। যেখানে লেখায় একটু বেশী আরবী শব্দ ব্যবহার করলে লেখককে ব্র্যাকেট-বন্দী করে ফেলা হয়। অথচ নগদ, বাকী, খেসারত, জরিমানা, দাওয়াত, ইজারা, গলদ, জারী, শরীক, এখতিয়ার, খেলাপ, ফারাক, ইত্যাদি প্রাঞ্জল বাংলায় উপস্থিত শব্দগুলোও আরবী থেকে নেয়া। এমনকি গ্রামবাংলায় অতি প্রচলিত একটা শব্দ, যেটা যে সন্দেহাতীতভাবে ১০০% বাংলা এই বিশ্বাসে চোখ বুঁজে হাজার টাকার বাজিও ধরা যায়, বিস্ময়করভাবে যুবকটি সেই ‘মাগনা’ শব্দটিও খুঁজে পায় আরবীতে।