টপিকঃ আমি এবং আমার ক্যাম্পাস : পর্ব ৩ : অতিথি: সাইদুল ইসলাম
পূর্বকথা: "আমি এবং আমার ক্যাম্পাস" একটি নতুন সিরিজ।এই সিরিজের মাধ্যমে আমি একেকজন মানুষের ক্যাম্পাসকে তুলে ধরব তারই দৃষ্টিকোণ থেকে। বেশ কিছু জিনিস আমি জানতে চাইব আমাদের অতিথির কাছ থেকে আর সেটার মাধ্যমেই আমি অতিথি ও তার ক্যাম্পাসকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।
আজকেরটা পর্ব ৩। যারা এই সিরিজের পর্ব ১ ও ২ পড়েন নাই, তারা নিচের লিংকে যেয়ে পড়ে নিতে পারেন:
আমি এবং আমার ক্যাম্পাস : পর্ব ১ : অতিথি: ইমরান তুষার
আমি এবং আমার ক্যাম্পাস : পর্ব ২ : অতিথি: ইন্জ্ঞিনিয়ার
আজকের পর্ব কথা:
আজকের অতিথি আমাদের সবার প্রিয় সাইদুল ইসলাম। সে পড়াশোনা করছে চট্রগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটা বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সাইদুলকে বহু আগেই বলে রাখা হয়েছে। এই সিরিজের সব পর্বের মত আগে-ভাগে তাকে সব প্রশ্ন জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সে আস্তে আস্তে সেসবের উত্তর ডেভেলপ করেছে। ছবি তোলা ও প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিতে হবে সেটা নিয়ে বেশ কয়েকবারই আলাপ-আলোচনা করেছি আমরা। সাইদুল একটু বেশিই ঝাড়ি খেয়েছে মনে হয়, তার উত্তরগুলো আমার মনের মত না হওয়ায় তাকে দিয়ে বেশ কয়েকবার আবার লেখিয়েছি। রাগ করে নাই, লক্ষী ছেলে, যা যা বলেছি শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পেরেছে দেখে আমি খুবই খুশি। তবে তার লেখার ফরমেট, দাড়ি-কমা, বানান ঠিক করতে গিয়া আমার জান শেষ
ছবি তোলা নিয়ে অনেক কাহিনীই হলো, আমি শুনে তাকে প্রতিদিন একগাদা উপদেশ দিয়েছি কি কি করতে হবে। সে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছে ছবিগুলো তুলতে। শেষ পর্যন্ত ১২ দিন ধরে দৌড়া-দৌড়ি শেষে তার সবকিছু আমার হাতে পেলাম। সে যে অনেক কষ্ট করেছে সেজন্য তাকে ২ ট্রাক ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যায় গত দুই ঘন্টা ধরে আমার আর সাইদুলের উপর দিয়া যে টেনশন আর হার্ড ওয়ার্ক গেছে: আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া সব ভালয় ভালয় শেষ হলো। বাপরে!! বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেলো।
তো চলুন জেনে নেই আজকে সাইদুল ও তার ক্যাম্পাস সম্পর্কে.......
ক্যাম্পাস সম্পর্কে কিছু কথা.........
- এইচএসসি এর পর যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব, তখন টার্গেট করলাম চট্টগ্রামের দুইটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে, প্রথমটা আমার বাসা থেকে ২০ কি মি দূরে, তাই ওই ভার্সিটিতে প্রতিদিন যাওয়া আসা আমার পক্ষে অনেকটা অসম্ভব। তারপর ভাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খুজতেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বের হয়ে আসল। ভার্সিটির ক্যাম্পাসটাও খারাপ না, পছন্দ হল।
আমাদের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ২০০২ সালের শুরুতেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে, আর এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুদানে পরিচালিত। আর হয়ত পুরা বাংলাদেশে এটিই একমাত্র এবং প্রথম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যেহেতু অনুদানে পরিচালিত, তাই এখানে অনেক কম টিউশন ফী তে পড়াশুনা করা যায়।
ভার্সিটির আবার ৪ টা ক্যাম্পাস। ৩ টা স্থায়ী আর একটা ভাড়া করা। আমার ক্যাম্পাসটা ভার্সিটির ২য় স্থায়ী ক্যাম্পাস। ১ম ক্যাম্পাসটা হল এডমিনিস্ট্রেশন ক্যাম্পাস, আমরা এই ক্যাম্পাসকে টাইটানিক ক্যাম্পাস বলি পোলাপাইন যা শয়তান না
। যা হোক, আমার ক্যাম্পাসটি ৭ তলা। প্রতি তলায় ৮ টি করে ক্লাসরুম। ৬-৭ তলাটা হচ্ছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট। ৫-৬ তলায় ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট। ৪ তলায় এলএলবি ডিপার্টমেন্ট। ২ তলায় ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট অবস্থিত।
বর্তমানে পড়ালেখার বিষয়..........
- আমি B. Sc. in Computer Science & Engineering এ পড়ছি আমাদের সেমিস্টার শুরুতেই প্রথম ৩ সেমিস্টার পর্যন্ত ইংলিশটা বাধ্যতামুলকভাবে সিলেবাসে থাকে, যার কারনে এই বিষয়টি পড়তে হবেই। আর পড়াশুনা যে গতিতে চলে, যদি আপনি সেই গতিতে চলতে না পারেন, তাহলে ছিটকে পড়ার যথেষ্টর চেয়েও বেশি সম্ভাবনা আছে।
বর্তমান সেমিস্টার যেমন যাচ্ছে.......
- ভর্তি হলাম মাত্র ৭ মাস হল। এক কথায় ১ম সেমিস্টার ভাল যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কারন একটি: আজাইরা বিষয় পড়ানো হচ্ছে আমার মতে। যেমন- principles of accounting। এখনও অনেক কিছু বুঝি না এই বিষয়টির। বুজবই বা কেমনে? এই বিষয়টি যে আমরা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্ররা কখনই পড়িনি। এছাড়া ইলেকট্রিক সার্কিট, মেথ, অটোকেড , আইসিএস, আইসিএস ল্যাব ও ইলেকট্রিক সার্কিট ল্যাব - এই বিষয়গুলো মোটামটি ভালই পড়া হচ্ছে। ফাইনালটা সামনেই, তাই একটু চিন্তিত আছি।
ক্যাম্পাসে প্রিয় টিচার, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য কাছের মানুষ যারা আছে তাদের সম্পর্কে......
- ঢুকলামই তো কিছুদিন আগে, তাই প্রিয় টিচারের তালিকায় কাওরে এখনও রাখি নাই। জ্বালায় ব্যাপক কি করুম? টিচারগুলা যখন জ্বালায়, তখন খারাপই লাগে বেশ, এছাড়া অন্যান্য সময় ভাল লাগে, যখন ক্লাসের বাইরে দেখা হয় তখন। তখন খুব বন্ধুর মত আচরণ করে স্যাররা তবে বন্ধুগো গ্রুপ একটা ভালই হইছে। পুরা ক্লাসের সবাই এক সাথে আমরা ৪৫ জনই। যতক্ষণ ভার্সিটিতে থাকা হয়, সবাই একসাথেই থাকি। তবে এদের মধ্যে অবশ্য ৭ জনের একটা আলাদা গ্রুপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখতেছি। দেখি ভবিষ্যৎ কোথায় নিয়া যায়।
ক্যাম্পাসে হয়ে যাওয়া কোন বিশেষ প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান সম্পর্কে স্মৃতিচারন.....
- ২ দিন পর পরই ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান হয়- এই একটা জ্বালা,আজকে বিতর্ক অনুষ্ঠান, তো কাল মুভি ফেস্টিভ্যাল, তো আবার কাল কোন না কোন সেমিস্টার এর রেগ ডে, আবার কোন দিন প্রোগ্রামিং এর প্রতিযোগিতা আছেই। কিন্তু ক্লাস থাকলে আর যোগ দেওয়া হয় না অনুষ্ঠানে।
তবে বিশেষ প্রোগ্রাম বলব- কিছুদিন আগে আমরা একটা ক্লাস পার্টির আয়োজন করি পুরো ১ম সেমিস্টার। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটা করছিলাম আমরা, বেশ মজা হয়েছিল সেদিন।
ক্যাম্পাসে যাওয়া থেকে একদম বাসায় ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটা দিন যেভাবে কাটে......
- সকাল ৮: ৩০ এ ক্লাস, প্রতিটি ক্লাস ২-৩ ঘণ্টা সময় নিয়া হয়। তাই খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে রেডি- টেডি হয়ে একটা মানসিক প্রিপারেশন নিয়ে ৭: ৪৫ এ বের হই ঘর থেকে । দুই বন্ধু একসাথে যাই। ক্লাস শেষ ৩: ৩০ এ। ক্লাস শেষে এদিক- ওদিক ঘুরার তেমন একটা সময় পাই না, বাসায় এসে আবার পরের দিনের আসাইমেন্ট রেডি করতে বসে যেতে হয়। শুধু শুক্রবার আর শনিবার ক্লাস বন্ধ -এই দুদিনই যত প্লান হয় আর প্লান বাস্তবায়ন করি
ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া বিশেষ কোন মজার ঘটনা...........
-আমাদের ক্যাম্পাসে যত মজা সব ক্লাসেই। ক্লাসগুলো অনেক সময় নিয়া হয়, তাই ক্লাসের মধ্যে যদি একটু হাসি ঠাট্টা না হয়, তাহলে আমাদের মারা যাওয়ার অবস্থা হবে প্রায়। যা হোক, স্যাররা পড়ানোর সময় অনেক মজার মজার জোকস বলেন, আবার বিভিন্ন উদাহারন এমন ভাবে দেন যে আমরা না হেসে পারি না। এক স্যারের ক্লাসে বলা একটি জোকস আমি প্রজন্মে একবার শেয়ার করেছিলাম।
ক্যাম্পাসের যে দিকটি সবচে বেশি ভাল লাগে.........
-আমাদের ক্যাম্পাসটা যথেষ্ট খোলামেলা। আমাদের ক্যাম্পাসের পাশেই হল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ৭ তলার উপর থেকে মেডিকেল কলেজটা দেখতে খুব ভাল লাগে।
কেমন লাগল আজকের পর্বটি তা এখানে অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের মতামতটুকু এই সিরিজের এগিয়ে চলায় অনেক অবদান রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।