টপিকঃ যে যে কারনে কোক খাবেন না।
১৯।০৭।১১
প্রিয় মেহেদী,
ফেসবুক চ্যাট মারফত জানতে পারলাম কোক ছাড়া আপনার চলেই না । তাই সেদিন জিজ্ঞেস ও করলেন, কি সমস্যা পানির বদলে কোক যদি খান। আপনার জন্য গোটা কয় কথা -
১।
প্রথমত এটা একটা ফালতু জিনিষ। চটুল টেস্ট ছাড়া এটা আর কোন কাজের না।এটাতে শরীরের দরকার এমন কোন নিউট্রিশন নেই।শরীর বেদরকারী জিনিষ পছন্দ করেনা।
২।
ওজন বাড়বে, কিন্তু ভাল সেন্সে না। শরীরে জমা হবে অদরকারী ক্যালোরী, যেটা হয়তো বয়স ২৫/২৬ পর্যন্ত টের পাবেন না, কারন তখন পর্যন্ত শরীরের বৃদ্ধি হয়। এরপরে দেখবেন কোক খাওয়ার মজা। পেটের নিচে মেদ জমবে, শরীরের শেইপ যাবে নষ্ট হয়ে। প্রতিদিন এক গ্লাস খেলে আপনার শরীরে গড়ে আধা থেকে এক কেজি পর্যন্ত মাসে মেদ জমবে। এর আরো একটা কারন হচ্ছে, আপনি একটা কোক খেয়ে প্রচুর ক্যালোরী নিলেন, কিন্তু আপনার মনে হবেনা যে আপনার ক্ষিদা মিটেছে, সেক্ষেত্রে আপনি আবার খাওয়া দাওয়া করবেন, এবং শরীরে জমবে দরকারের দুইগুন ক্যালোরী।
৩।
এটা দুই নাম্বারের সিকুএল বলতে পারেন। যেকোন ধরনের ওজন বাড়ানোই ডায়াবেটিস এর রিস্ক বাড়িয়ে দেয়। ড্রিঙ্কস আপনাকে শুধু মোটাই করবেনা, এটা বডির সুগার প্রোসেস শক্তিটাকে একটা স্ট্রেস এর মধ্যে ফেলে দেয়। ডায়াবেটিস যে আস্তে আস্তে একটা এপিডেমিক লেভেল এ চলে যাচ্ছে, এটার পিছনে অনেক বৈজ্ঞানিক ই মনে করেন সফট ড্রিঙ্ক এর সজলভ্যতাকে দায়ী করেন।
আপনি যখন সফট ড্রিঙ্ক খাচ্ছেন, শরীরে ঢুকিএ দিচ্ছেন একরাশ সুগার, যা ঐ মুহুর্তে শরীরের কোন দরকার নেই। Pancreas কে তখন হুড়মুড় করে বিশাল এমাউন্ট এর ইন্সুলিন তৈরী করতে হচ্ছে এই সুগার কে প্রোসেস করার জন্য । এটা Pancreas এর জন্য Exhaustingএকটা ব্যাপার। এবং নিয়মিত এরকম ঘটতে থাকলে ইন্সুলিনের কার্যক্ষমতা কমে আসাটা সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু গবেষনায় এটাও দেখা গেছে আপনি যখন এরকম কৄত্তিম ফ্রুক্টজ বা গ্লুকোজ খাচ্ছেন, তখনি এরকম সমস্যা হচ্ছে। আপনি যদি একদম ন্যাচারাল ফলের জুস খান, সেটা প্রসেস করতে শরীরের তেমন কোন সমস্যা হয়না।
৪। ফ্রিকুয়েন্ট সফট ড্রিঙ্ক খাওয়াটা হাড় দুর্বল করা বা Osteoporosis এর ঝুকি বাড়িয়ে দেয়, বিশেষত যারা ক্যালসিয়াম রিচ দুধ না খেয়ে সফট ড্রিঙ্ক খেয়ে বেড়ায়।
৫।
ডেন্টাল ক্যারিজ বা ক্ষয় - আপনার দাতের এনামেল কে সোজা বাংলায় ক্ষয় করে ফেলে সফট ড্রিঙ্ক,আপনার সাধারন দাঁত ক্ষয় কে দিগুন থেকে তিন গুন বৃদ্ধি করে এইসব ড্রিঙ্ক। আপনার দাঁত শিরশির করার অন্যতম একটা কারন হতে পারে সফট ড্রিঙ্ক এর আধিক্য।
৬।
কিডনি ড্যামেজ - সফট ড্রিঙ্ক, স্পেশালী কোলা, কিডনি ড্যামেজ বাড়িয়ে দেয়। কোলায় থাকা এসিডিটি কে বাফার করতে শরীরের নিজের ক্যালসিয়াম খরচ হতে থাকে। আর এই ক্যালসিয়াম যখন অতিরিক্ত পরিমানে কিডনি দিয়ে পাস হবে, ধীরে ধীরে কিডনি স্টোন তৈরী হবে। কিডনীর ডাক্তার রা প্রায়ই বলেন সফট ড্রিঙ্ক খাওয়া হচ্ছে, চুমুকে চুমুকে বিষপান, যদিও কোকের এড এ বলে চুমুকে চুমুকে খুশি।
৭। আপনার রক্ত চাপ বাড়াবে।
৮। বুক জলা পোড়ার অন্যতম কারন সফট ড্রিঙ্ক কঞ্জাম্পশন।
৯। মেটাবোলিক সিন্ড্রম নামে খুব খারাপ একটা সমস্যা আছে যার চারটা অংশ - উচ্চ রক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়া, হাই কোলেস্টেরল, ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স। সফট ড্রিঙ্ক আপনাকে এটা এচিভ করতে অনেক সাহায্য করবে।
১০। ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের সমস্যা - কোলা বা এই জাতীয় ড্রিঙ্ক এর pH এভারেজ 2.5, যেখানে পানির pH 7.এই বিপুল পরিমান এসিডিটি আপনি টের পাচ্ছেন না প্রচুর পরিমান সুগার কন্টেন্ট এর কারনে। শরীরের ডাইজেস্টিভ ক্যানেল সাধারনত ২ এর নিচে pH সাম্লাতে পারেনা। স্টমাকে আসার আগেই এই ড্রিঙ্ক একটা এবনরমাল এসিডিক এনভায়রনমেন্ট তৈরী করে। এতে থাকা ফস্ফরিক এসিড, আপনার স্টমাকের হাইড্রোক্লোরিক এসিড এর সাথে প্রতিযোগিতা করবে, এবং এর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিবে। ফলে স্টমাক তার পুর্ন কাজ করতে পারবেনা, আপনার পেট ফাপা মনে হবে, ফোলা ফোলা মনে হবে, না খেলেও মনে হবে পেট ভরা ভরা।
১১।
ডিহাইড্রেশন - অনেক সফট ড্রিঙ্ক এ প্রচুর ক্যাফেইন থাকে। কীডনী এই বিপুল কৄত্তিম সুগার কে বের করার জন্য শরীর থেকে পানি টেনে নেয়। কাজেই আপনি যখন মেটাতে গিয়ে প্রচুর সোডা বা লেমন জাতীয় পানিয় খাচ্ছেন, আপনি আপনার তৃষ্ণা বাড়াচ্ছেন. ডার কি আগে জিত নেহি, ডায়াবেটিস আর কিডনি ডিজিস অপেক্ষা করছে।
১২। একদম নতুন কিছু গবেষনায় ধারনা করা হচ্ছে পেপ্সি আর ফান্টায় ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ E211 / Sodium Benzoate, প্রচুর পরিমানে যখন একসাথে শরীরে ঢুকে, ডি এন এর ভাইটাল কিছু অংশ বন্ধ করে দেবার ক্ষমতা রাখে।
কাজেই, প্রিয় মেহেদী, তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আল্লাহর দেয়া পানির উপরে কিছু নেই। বিজ্ঞাপনের চটকে মজে যাবেন, সেরকম মানুষ আপনি আশা করি নন। পরের কোকের ক্যানটা খোলার আগে উপরের কথা গুলো একটু চিন্তা করবেন। বিয়ে বাড়ি অথবা দাওয়াতে মাঝে মধ্যে একটা দুটো কোক খাওয়া যেতে পারে, আপনার শরীর সেই অত্যাচার সানন্দে মেনে নিবে, বাট ডোন্ট স্ট্রেচ ইটস লিমিট।