টপিকঃ লিনাক্স-উইন্ডোজ: লেবু কচলানো
লিনাক্স-উইন্ডোজ বিতর্ক নিয়ে আজকাল ফোরামিকরা বেশ বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। প্রসঙ্গটা এলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মন্তব্য আসতে শুরু হয় - টপিক বন্ধ করুন, আজাইরা প্যাঁচাল, যার যেটা খুশি সেটা ব্যবহার করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনি হয়তো অনেক পুরনো ফোরামিক, তাই অনেকদিন ধরেই দেখে আসছেন এসব ঝামেলা। কিন্তু আপনাকে দিয়েই তো মানবজাতির সমাপ্তি নয়। নতুন আরও অনেকে আসবে, তাদেরকে জানাতে হবে। তাদেরকে না জানালে কোথা থেকে তারা জানবে? বলবেন - কেন পুরনো টপিক দেখবে, সেখান থেকে শিখবে। সত্যি কথা বলতে কি, পুরনো টপিক কেউ দেখে না। এত খুঁজে খুঁজে হাজার হাজার পুরনো টপিক কেউ ঘাঁটতে যায় না। এটা ঘাঁটতে তখনই যায় যখন সে বিষয়ে একটা আলোচনা চলতে থাকে।
যেখানে-সেখানে কিন্তু এটা নিয়ে লেখালেখি হয় না। যে ফোরামে পাইরেসিটাই মূল উদ্দেশ্য সেখানে কিন্তু এসব নিয়ে কথা হয় না। আমি কিন্তু নীলক্ষেত গিয়ে লিনাক্স-লিনাক্স চিল্লাবো না। যেখানে এসব বোঝার মত মানুষ আছে, থাকবে সেখানেই এসব নিয়ে চিৎকার করে লাভ আছে। আমি মনে করি, প্রজন্ম একটা অন্যরকম ফোরাম। যেখানে সদস্যরা সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য সস্তা বিষয় নিয়ে চুলোচুলি-গালাগালি করে না। এখানে বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন সদস্যরা যথেষ্ট সংযত ভাষায় একে অপরের যুক্তি খন্ডানোর চেষ্টা করে। আমার বিশ্বাস এই সদস্যরা ব্যক্তিগত জীবনেও তাদের আশেপাশের মানুষের উপর বেশ খানিকটা প্রভাব ফেলে।
যার যেটা খুশি সেটা ব্যবহার করাটা সমাধান নয়, এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। যাকে জীবনের প্রথম থেকেই উইন্ডোজ ধরিয়ে দেয়া হয়, তাকে লিনাক্স সম্পর্কে জানাতে, আগ্রহী করতে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হয়। জীবনের অধিকাংশ সময় আমাদের স্কুল-কলেজে কাটাতে হয়, যেখানে আমাদেরকে অনেক সময় একই জিনিস বারে বারে করতে হয়। সেই সময়ে ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুবই বিরক্তিকর মনে হয়, কিন্তু পরে সেগুলোর অনেক কিছুই কাজে আসে আমাদের অজান্তেই। পরীক্ষার খাতায় বাংলা রচনা লেখাটা খুবই বিরক্তির কাজ। এটা করতে কারোই ভাল লাগে না। কিন্তু এই কাজটা নিয়মিত করার ফলেই লেখকের সৃষ্টি হয়। সবাই কিন্তু লেখক হয় না - কয়েকজন মাত্র হয়। কিন্তু এই কয়েকজন তৈরী করতেই সবাইকে এই পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এখন যদি বলি দশজন লেখক তৈরির জন্য আমাদের হাজার-হাজার ছাত্রকে নির্যাতন করার কী প্রয়োজন? প্রশ্নটা নিজে নিজেই ইনভ্যালিড হয়ে যায়।
লিনাক্স নিয়ে কথা বলতে গেলেই উইন্ডোজ কেন আসে। এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা। নিচে থেকে কাউকে উপরে উঠতে হলে উপরের জনের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। না হলে নিচের জনকে কেউ চোখেই দেখবে না। সে সবসময় নিচেই থেকে যাবে। এ সম্পর্কে একটা সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে এ্যপল। এ্যপল যখন ম্যাক নিয়ে কথা বলে তখন সূক্ষ্ম বা স্থূল যেভাবেই হোক না কেন উইন্ডোজকে পঁচায়। যে কোন ম্যাকের বিজ্ঞাপন দ্রষ্টব্য। যে কোন কনফারেন্সের কিনোট দ্রষ্টব্য। কিন্তু আইফোনের কোন বিজ্ঞাপনে এন্ড্রোয়েড পঁচানোর কিছু থাকে না। অন্য কোন স্মার্টফোনেরই উল্লেখ থাকে না। আইপ্যাডে না, আইপডেও না। কারণ এই এলাকায় তারাই এক নম্বর। সুতরাং একজন মানুষ কেন উইন্ডোজের উপরে লিনাক্স ব্যবহার করবে সেই প্রশ্ন না আসাটাই অস্বাভাবিক।
এসব লেবু কচলানোর টপিকগুলো যদি একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাবো যে টপিকটার শেষের দিকে একজন নতুন লোক কমপক্ষে এটুকু জিজ্ঞেস করে যে উবুন্তু কিভাবে ইনস্টল করে অথবা তার কম্পিউটারে চলবে কিনা। এই যে একজন মানুষ আগ্রহী হল, এটাই ঐ টপিকের বড় পাওয়া। আমি পক্ষপাতদুষ্ট, তারপরও আমার মনে হয় প্রতিটা বিতর্কে শেষ পর্যন্ত লিনাক্সের একটু হলেও লাভ হয়েছে। এমন সদস্যও আছেন যারা প্রতিজ্ঞা করেন লিনাক্স জীবনে ছুঁয়েও দেখবেন না। তাদের মধ্য থেকেও অনেকে পার্ট-টাইম লিনাক্স ব্যবহার শুরু করেন।
এখানে অনেকগুলো বিভাগ আছে, সবগুলো সবার ভাল লাগতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমি নিজেই বেশ কয়েকটা বিভাগে কখনও যাই না। এমনকি ফোরামের সবচাইতে বড় যে টপিক সেটাতেও আমি কখনও যাইনি। আপনার যদি এ ধরণের ঝগড়া-ঝাঁটি ভাল না লাগে তাহলে এসব টপিক এড়িয়ে চলুন। যে কোন বিতর্কেই অসাধারণ যুক্তি-তর্কের সাথে কুতর্ক-ও জড়িত থাকে, কারণ আমরা মানুষ। সবসময় আমরা পারফেক্ট থাকতে পারি না। সুতরাং এটাও মাথায় রাখতে হবে যে - সব বিতর্কই প্রাণবন্ত, উপভোগ্য হবে না।
ইতোমধ্যে লিনাক্স নিয়ে প্রচুর লেখা হয়েছে- তাই এটা নিয়ে লেখা বন্ধ করা হোক। এটা খুবই ছেলেমানুষি একটা কথা। মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই দূর্বল। তাকে পিরিয়ডিক্যালি কিছু মনে না করিয়ে দিলে, সেটা একেবারেই ভুলে যায়। এছাড়াও ইন্টারনেটে প্রতিদিন যে পরিমাণ লেখা ছাপা হয় সেখানে এসব লেখা হারিয়ে যায় নিমিষেই। একজন অভিজ্ঞ মানুষের এসব লেখার প্রয়োজন নেই, কিন্তু নতুন ব্যবহারকারী প্রতিদিনই বাড়ছে। তাদেরকেও জানতে হবে, শিখতে হবে।