টপিকঃ অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে জানুন ও সতর্ক থাকুন!
অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে নিজে জানুন ও সতর্ক থাকুন এবং অন্যকে জানান ও সতর্ক করুন।
দেশে দেখা দেওয়া অ্যানথ্র্যাক্স রোগের বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। সংক্রমণের মাত্র ১০ দিনেই সিরাজগঞ্জের চিথুলিয়া গ্রাম থেকে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের চার জেলার ৯টি উপজেলায়। গরু, ছাগল ও ভেড়ার পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষও। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অন্য জেলার পশু ও মানুষের মধ্যেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ার।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, 'আক্রান্ত এলাকা থেকে অসুস্থ পশু অন্যত্র আনা-নেওয়া বন্ধ করা না গেলে এবং যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই করা হলে রোগটির বিস্তার বন্ধ করা যাবে না।' এই অবস্থার মধ্যে সারা দেশে এখন অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অ্যানথ্র্যাক্স রোগে আক্রান্ত রোগীর হাতদেখা দেওয়ার ১০ দিনেও অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার থামেনি। সিরাজগন্জ ও পাবনার পর গত ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দীঘলকান্দি ইউনিয়নের কুরমুশি গ্রামের ১৫ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হন। ১৯ আগস্ট ভুয়াপুর গোবিন্দদাসী হাট থেকে কেনা একটি গরুর মাংস খেয়ে এ আক্রান্তের ঘটনা ঘটে বলে আমাদের সেখানকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তবর্তী ধর্মদহ গ্রামের ১৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়া কিছু ছাগলের মাংস খেয়েই এই আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরেছে। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সালেহ আহমেদ আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, অসুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসা চলছে।
এর ফলে এ পর্যন্ত গত ১০ দিনে সারা দেশে সরকারি হিসাবে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫০ জনে ও পশু ২২টি। পশুর মধ্যে সবই মারা গেছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস রান্নার পরও তাতে রোগটির জীবাণু থাকে বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) পরিচালক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন,'আক্রান্ত পশুর মাংস রান্না করে খেলেও তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে। কারণ আগুনেও এই ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় না।'
এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পশুটি ৪৮ ঘণ্টার বেশি বাঁচে না। তাই উচিত, কোনো পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে ফেলা এবং অসুস্থ পশুর পাশাপাশি সুস্থ পশুরও চিকিৎসা করা।উপসর্গ ও সতর্কতা
দেশের প্রবীণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স রোধ করতে হলে পরীক্ষা করে পশু জবাই নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক পয়েন্টে পশু পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা রোগটি অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।'অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান ও আইইডিসিআরের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা, মুশতাক হোসেন জানান, অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত প্রাণীর চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে আক্রান্ত হওয়ার আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে প্রাণিটি নিরাপদ থাকবে।
তাঁদের মতে,পশুর আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষ্মণগুলো হচ্ছে_উচ্চমাত্রার জ্বর, পেট ফাঁপা, শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্ত ঝরা। আর মানবদেহে এ রোগের প্রধান লক্ষ্মণ হচ্ছে_চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া ও শরীরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
তিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত পশু কিছুতেই জবাই করা যাবে না। খালি হাতে অসুস্থ ও মৃত গবাদি পশু ধরা যাবে না, হাতে গ্লাভস বা পলিথিনের আবরণ ব্যবহার করতে হবে। মৃত পশুটি মাটিতে ছয় ফুট গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।'
সূত্র : http://www.dailykalerkantho.com/?view=d … mp;index=0
এনথ্রাক্স বা তড়কা রোগে আক্রান্ত জবাই করা গরুর রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ি ও মুখের লালার সংস্পর্শে আসা মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়াচ্ছে। আইসিডিডিআরবি'র পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান একথা জানান।
তিনি বলেন, এনথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। আক্রান্ত রোগীর ত্বকে ঘা, ক্ষত বা বিষফোঁড়া দেখা দেয়ার সঙ্গে জ্বর হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা সহজ এবং একশত ভাগ সফল। তবে এনথ্রাক্সের সঠিক চিকিৎসা না হলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। তিনি বলেন, এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় গবাদি পশুকে এনথ্রাক্স বা তড়কা রোগের টিকা দেয়া। আক্রান্ত গরু জবাই করা যাবে না। মৃত গরু মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
আইসিডিডিআরবি পরিচালক।