টপিকঃ 'ঈশ্বর কণার' সন্ধান মিলেছে!
ঈশ্বর কণা' এবার ধরা দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের (এলএইচসি) সুড়ঙ্গে! এমনই এক রটনা ছড়িয়ে পড়েছে বিজ্ঞানের বিশ্ব দরবারে। রটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ পিটার ওইটের একটি ব্লগ। সেখানে প্রকাশ করা হয়েছে এলএইচসির অভ্যন্তরীণ গোপন গবেষণার প্রতিবেদন।
'ঈশ্বর কণা' বিষয়টি বুঝতে হলে যেতে হবে বিগ ব্যাংয়ের অব্যবহিত পরের সময়কালে। প্রচলিত মহাকাশ বিজ্ঞানে ধারণা করা হয়, প্রায় ১৩ হাজার ৭০০ কোটি বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের। সার্নের বিজ্ঞানী জেমস গিলিস বলেন, বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পর মুহূর্তেই অতি ঘনত্বের শক্তিসমৃদ্ধ পদার্থের সমষ্টি এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিল বলে মনে করা হয়। মহাবিস্ফোরণের ঠিক পর মুহূর্তে পদার্থের একটি বিশেষ 'অবস্থা' ছিল। এই বিশেষ 'অবস্থা' বর্তমান বিশ্বজগতের বিদ্যমান পদার্থের 'অবস্থা'র মতো নয়। মহাবিস্ফোরণের সময় খুব সামান্য সময়ের জন্য পদার্থের একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, এ অবস্থার নাম 'হিগস-বোসন' কণা। এর নিগূঢ় তাৎপর্য এতই ব্যাপক যে এই 'হিগস-বোসন' কণার 'স্বরূপ' বুঝতে পারলে পদার্থবিজ্ঞানের অমীমাংসিত অনেক জটিলতার সমাধানসূত্র মিলবে। কিন্তু অতি জটিল এ কণার অস্তিত্ব। সেকেন্ডের মাত্র লাখো-কোটি ভগ্নাংশ সময়জুড়ে এর স্থায়িত্ব। এমন পালিয়ে বেড়ানো কণার অস্তিত্ব খুঁজতে বিশ্বের হাজার হাজার বিজ্ঞানীকে নিয়ে ইউরোপের সার্ন (ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ) সংস্থা ২৫ বছর ধরে তৈরি করেছে এই এলএইচসি। বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ও ব্যয়বহুল এ যন্ত্র জেনেভা শহরের কাছে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তের ১০০ মিটার নিচে তৈরি করা একটি কংক্রিট-ঘেরা সুড়ঙ্গ। এর পরিধি ২৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৭৫ মিটার।
কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কলাইডারের ভেতরে 'ঈশ্বর কণা' নামে খ্যাত হিগ্স বোসন তৈরির চেষ্টা করে এসেছেন, কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই সফলতার স্বাদ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এটাই একমাত্র মৌলিক কণা, যাকে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। গণিতবিদ পিটার ওইটের ব্লগের এই প্রতিবেদন যদিও নিশ্চিতভাবে প্রামাণিক নয়, এর পরও এটি 'ঈশ্বর কণা' সৃষ্টির প্রাথমিক তথ্য বলে উড়িয়ে দিচ্ছে না বিজ্ঞানী মহলের একাংশ।
ফাঁস হওয়া এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলাইডারে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলো হলো অ্যালাইস, অ্যাটলাস, সিএমসি ও এলএইচসি। এর ভেতরে অ্যাটলাস পরীক্ষাটি সংঘটনের সময় এই 'ঈশ্বর কণা' শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের সাইরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী শেলডন স্টেন বলেন, 'এ ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে তা অভাবনীয় প্রভাব রাখবে।'
শেলডন মনে করেন, "এলএইচসির বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তা কখনোই ঘোষণা করবেন না। সেদিক থেকে এটি আপাতত রটনাই। তবে তা 'ঈশ্বর কণা' শনাক্তের পূর্বাভাসও হতে পারে।"
সূত্র: কালের কন্ঠ